ঘরে এইডিস মশার লার্ভা পেলে জরিমানা: প্রধানমন্ত্রী

ডেঙ্গু মোকাবেলায় এইডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ঘর থেকেই কাজ শুরুর উপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 August 2019, 03:05 PM
Updated : 6 August 2019, 03:07 PM

লন্ডন সফররত প্রধানমন্ত্রী বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কারও ঘরে এই মশার লার্ভা পাওয়া গেলে জরিমানার ঘোষণার কথা মনে করিয়ে দেন।

এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেওয়ায় মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকার নগর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষদের ব্যর্থতা নিয়ে সমালোচনার প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যবস্থা একেবারেই নেওয়া হয়নি, তা ঠিক নয়।

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর এই সাক্ষাৎকার প্রচারের আগের দিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ বি এন নাগপাল ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে অন্য মশার সঙ্গে এইডিস মশার জীবনাচরণের ভিন্নতা তুলে ধরে বাইরে ওষুধ না ছিটিয়ে ঘর ও আশপাশ পরিচ্ছন্নতার উপর জোর দেন।

বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনাও ভবিষ্যতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা নিয়ে বলেন, “ইতোমধ্যে আরেকটা ঘোষণা আমরা দিয়েছি যে, কারও ঘরের কাছে বা ঘরে যদি এ ধরনের পানি জমা যেখানে এ ধরনের মশা তৈরি হচ্ছে, এরকম আমরা যদি দেখতে পাই, তাহলে তাদেরকে ফাইন করা হবে।”

ডেঙ্গুর বাহক এইডিস মশা সাধারণত মানুষের আশপাশে থেকে স্বল্প গভীরতার পানি বিশেষ করে ফুলের টব, টায়ার, ডাবের খোসা, কার্নিসে জমে থাকা পানিতে ডিম ছাড়ে।

শেখ হাসিনা বলেন, “ধরেন আপনার দরজার কাছে বা যেটা আপনার আওতায় সেখানে যদি ওই ধরনের পানি জমে থাকে, তাহলে সেটা আপনার একটা দায়িত্ব থাকবে যে, তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া, যাতে পানিটা জমে না থাকে।

“যেখানেই পরিষ্কার পানি পাচ্ছে, সেখানেই ডেঙ্গুর লার্ভাটা হচ্ছে। প্রত্যেকটা ঘরে ঘরে বা সব জায়গায় তো সিটি করপোরেশেন যেতে পারবে না। সরকারও যেতে পারবে না। কিন্তু জনসচেতনাটা এখানে সব থেকে বেশি প্রয়োজন। কাজেই মানুষ যদি আগামীর জন্য সবসময় এভাবে প্রস্তুত থাকে, তাহলে এটা এভাবে ব্যাপকহারে দেখা দেবে না।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, এই বছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছেছে।

এতে মৃতের সংখ্যা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২৩ জন বলে জানালেও বিভিন্ন গণমাধ্যমে ৯০ এর বেশি মৃত্যুর খবর ইতোমধ্যে এসেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা চাই না, এভাবে মারা যাক।”

এবার ডেঙ্গু নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আগাম সতর্কতা দেওয়ার পরও সিটি করপোরেশন আগাম ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সিটি করপোরেশন একেবারেই ব্যবস্থা নেয়নি, কথাটা কিন্তু ঠিক নয়। ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সময় সময় যেটা হয়ে যায় যে, ঘটনাগুলো এমনভাবে ছড়ায় যে, আর সংবাদগুলো যখন বেশি আসে, মানুষ এত বেশি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে যে, সেটাই সমস্যাটা সৃষ্টি করে।”

মশা নিধনের নিয়মিত কাজটি করা হয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনার ঘরের কাছে টবে বা কোথাও বৃষ্টির পানি যদি জমে থাকে, সেখানে মশার বিস্তার হয়।

মশা নিধনের পদক্ষেপ সময়মতো নেওয়া হয়নি- বিবিসির সাংবাদিক এ মন্তব্য করলে শেখ হাসিনা বলেন, “সময়মতো হয়নি, এটা ঠিক না। হয়েছে। আমাদের সিটি করপোরেশনগুলো সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নিয়েছে।

“শুধু সিটি করপোরেশনকে দোষ দিলে তো হবে না। এই ডেঙ্গুর ব্যাপারে প্রত্যেকটা মানুষকে নিজেকে সতর্ক হতে হবে। প্রত্যেকটা পরিবারকে সতর্ক হতে হবে। যার যার নিজের ঘরবাড়ি, বাসস্থান পরিষ্কার রাখতে হবে।”

মশার ওষুধ কেনার বিষয়ে যেসব দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, সেগুলো খতিয়ে দেখবেন কি না- এ প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, দরপত্রের মাধ্যমে মশার ওষুধ কেনা হয়। যারা উপযুক্ত হয় দরপত্রে তারা কিনে নিয়ে আসে ওষুধ।

“ঠিক এইডিস মশা বা কোন মশার জন্য কোন ঔষধ প্রয়োজন, সেটা হয়ত ওইভাবে বিভক্তিকরণ করা হয়নি তখন।”

বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া আগামীতে কীভাবে আরো সুষ্ঠভাবে ডেঙ্গুর মোকাবিলা করা হবে?

শেখ হাসিনা বলেন, “ইতোমধ্যে আমরা একটা ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা শুধু সরকারের উপর নির্ভর করে না থেকে আমার দলের সকল নেতাকর্মী এবং সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে আমি আহ্বান করেছি।

“শুধু ঢাকা শহর না, সমগ্র বাংলাদেশে আমরা একটা পরিচ্ছন্নতার অভিযান আমরা শুরু করেছি। আমাদের রাজনৈতিক সংগঠনের যত নেতাকর্মী তাদেরকে যেমন সম্পৃক্ত করেছি, আবার সরকারি যত অফিস, আদালত প্রত্যেককে আমি নির্দেশ দিয়েছি। আর তাছাড়া সিটি করপোরেশনগুলো তো আছেই।”

জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তারাও এ ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে- মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এটা সারাবছর ধরেই অব্যাহত রাখতে হবে।”

ডেঙ্গু ছাড়াও পদ্মা সেতুতে মাথা লাগার গুজব, ছেলেধরা সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা এবং বিচার বহির্ভূত বিষয় নিয়েও কথা বলেন শেখ হাসিনা।

পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা লাগার গুজব এবং ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি দিয়ে হত্যার বিষয়ে তিনি বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার নিয়েছি। দলের নেতাকর্মীদেরও আহ্বান জানানো হয়েছে। এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। অনেক প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে গুজব ছড়ায়। বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”

এই গুজব এখন নিয়ন্ত্রণে আছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এই গুজব যারা ছড়াচ্ছে অপরাধী তো তারা। আমাদের ওই জায়গাটাতে হাত দিতে হবে যে এই মিথ্যা অপবাদটা কেন ছড়াচ্ছে? আসলে পদ্মা সেতু নিয়ে শুরু থেকেই একটা চক্রান্ত ষড়যন্ত্র ছিল।”

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “এ ধরনের মানসিকতা আমাদের নেই এবং আমরা সেটি করিও না। ঘটনাচক্রে কিছু ঘটতে পারে। বরং আপনি যদি গত ১০ বছরে আমাদের অবস্থানটা দেখেন, আমরা কিন্তু অপরাধ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পেরেছি।"

প্রধানমন্ত্রী বলেন,"যে দেশে অপরাধকে স্বীকৃতি দিয়েই একটা সামাজিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়, সেই দেশে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে যায়। তারপরেও আমরা ব্যবস্থা নিয়ে যাচ্ছি।”