ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসেনি, এটা বাস্তবতা: কাদের

ঢাকায় আওয়ামী লীগের ডেঙ্গুবিরোধী প্রচারণা ও পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের যথাযথ সাড়া না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এভাবে ‘লোক দেখানো’ কর্মসূচি পালনের কোনো প্রয়োজন নেই।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 August 2019, 08:20 AM
Updated : 6 August 2019, 10:41 AM

ঢাকায় যে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেছেন, “আমরা যতটাই মুখে নিয়ন্ত্রণের কথা বলি না কেন, এখনও এটা নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এটা হল বাস্তবতা।”

মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের এক বর্ধিত সভায় ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্য আসে। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এ পর্যন্ত মোট ২৭ হাজার ৪৩৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কেবল শনিবারই হাসপাতালে গেছেন ২০৬৫ জন ডেঙ্গু রোগী।

চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মোট ১৮ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, যদিও গণমাধ্যমের খবরে মৃত্যুর সংখ্যা নব্বই ছাড়িয়েছে।

গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতনতামূলক লিফলেট বিলি এবং মশক নিধন কার্যক্রমে অংশ নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, এ বিষয়ে সরকারের আন্তরিকতার ‘অভাব নেই’। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সেদিন সবাইকে ধৈর্য্য ধরতে অনুরোধ করেছিলেন তিনি।

কিন্তু ঢাকায় ওয়ার্ড পর্যায়ে আওয়ামী লীগের ‘দায়সারা’ কর্মসূচি নিয়ে মঙ্গলবার অসন্তোষ প্রকাশ পায় দলের সাধারণ সম্পাদকের কথায়।

তিনি বলেন, দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সারা দেশে পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। সে অনুযায়ী ঢাকার তিন জায়গায় কেন্দ্রীয়ভাবে কর্মসূচি পালনও করা হয়েছে। কিন্তু সব ওয়ার্ডে তা হচ্ছে না। 

“আমরা নামকাওয়াস্তে দু-চার জায়গায় কর্মসূচি পালন করলাম, বেশিরভাগ ওয়ার্ডে এই পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা হল না, কর্মসূচি পালন হল না। এই দায়সারা কর্মসূচির কোনো প্ররেয়াজন নেই।

“এতে এইডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস হবে না, এইডিস মশার উৎসমুখ আমরা বন্ধ করতে পারব না। এবং ডেঙ্গু জ্বরের যে ভয়ঙ্কর বিস্তার এই বিস্তারও আমরা রোধ করতে পারব না।”

আসন্ন কোরবানির ঈদে বহু মানুষ ঢাকা থেকে গ্রামে যাবে এবং তাতে ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু ছড়ানোর শঙ্কা যে আরও বাড়বে- সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে কাদের বলেন, “অনেকেই যাচ্ছেন, যাবেন। এখানেও এই ডেঙ্গু জ্বরের বিস্তারের একটা আশঙ্কা আছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের প্রথম কাজটি হচ্ছে এই সচেতনতা এবং সতর্কতা প্রচার করা। এই মশার প্রজনন ও বংশ বিস্তার বন্ধের পূর্বশর্ত হচ্ছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা।”

‘কয় ওয়ার্ডে নির্দেশনা পালন হয়েছে- জানতে চেয়েছেন নেত্রী’

দলীয় সভাপতির নির্দেশের পরও ঢাকার ১০৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র নয়টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা ডেঙ্গু প্রতিরোধে মঠে নামায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।

তিনি বলেন, “আজ কেন্দ্রীয় নেতাদের দেখাতে ক্যামেরার সামনে ফটো সেশন করার জন্য এই অভিযান নয়। আমরা দেখতে চাই ঢাকা সিটির প্রত্যেক ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্নতা অভিযান… এবং নেত্রী এটা জানতে চেয়েছেন। নেত্রী জানতে চেয়েছেন কয়টা ওয়ার্ডে নেত্রীর নির্দেশনা পালন হয়েছে।”

১০৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে কয়জন কাউন্সিলর তার এলাকায় কাজ করেছেন তাদের এ সময় হাত তুলতে বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

মাত্র ১৩ জন কাউন্সিলর হাত তুললে কাদের বলেন, “তার মানে কম সংখ্যক।… যারা করেননি, আমি চিহ্নিত করে লজ্জা দিতে চাই না, শুধু বলতে চাই কমিটমেন্ট থেকে কাজটা করেন। শেখ হাসিনার নির্দেশ মনে করতে হবে।

“যারা করেছেন তাদের ধন্যবাদ, আর এই ধন্যবাদ অব্যাহত থাকবে। যারা করেননি, নেত্রী বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে খোঁজ খবর নিচ্ছেন। প্রোগ্রাম না করলে কিন্তু অপ্রকাশিত থাকবে না।”

‘মন্ত্রী-এমপিরাও কামড় থেকে বাঁচবে না’

পরিস্থিতি এরকম চললে এইডিস মশা মন্ত্রী-এমপি কাউকে ছাড়বে না বলে মন্তব্য করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, “এই এইডিস মশা ভয়ঙ্কর, এই এইডিস মশা কারও চেহারার দিকে তাকায় না, আপনি কাউন্সিলর, আপনি কি নেতা, আপনি কি মন্ত্রী, এমপি, মেয়র কোনো দিকেই তাকাবে না। এডিশ মশা সামনে পেলেই রক্ত খাবে। এমপির রক্ত খাবে, মন্ত্রীর রক্ত খাবে, নেতার রক্ত খাবে, কাউন্সিলরের রক্ত খাবে, কাউকে ছাড়বে না। সাংবাদিকদেরও রেহাই নেই।

“সবাইকে সচেতন হতে হবে, সাবধান হতে হবে। আমাদের যা করনীয়, তা পালন করতে হবে। শেখ হাসিনার নির্দেশ- ডেঙ্গুমুক্ত বাংলাদেশ। এই কথা শুধু মুখে নয়, অ্যাকশানে বাস্তবায়ন করতে হবে।”

ওবায়দুল কাদের বলেন, “নোংরা শহরের মধ্যে আমরা বিশ্বে চার নম্বরে, তাহলে কেন এইডিস মশার প্রজনন হবে না? কেন বংশ বিস্তার হবে না?... ঢাকাকে ক্লিন করতে হবে, ঢাকাকে গ্রিন করতে হবে। আমাদের এবং জনপ্রতিনিধিদের যৌথভাবে মাঠে নামতে হবে।”

মিডিয়া না থাকলে সরকার ডেঙ্গুকে গুজব বলে চালিয়ে দিত- বিএনপির এমন বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমি বলব মিডিয়া না থাকলে বিএনপি যে একটা রাজনৈতিক দল এর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া কঠিন হত। মিডিয়া না থাকলে বিএনপি যে আছে- এটা বোঝার কোনো উপায় আছে? 

“নির্বাচনে তারা ব্যর্থ, আন্দোলনে তারা ব্যর্থ। এত বড় বন্যা হয়ে গেল, ছিটেফোটা দুইএকটা জায়গায় গিয়ে ফটোসেশন করে শেষ! ডেঙ্গুবিরোধী অভিযানেও তারা নেই, তারা শুধু মুখে মুখে… আবাসিক প্রতিনিধি পল্টনের অফিসে বসে কথা বলছে। মিডিয়া না থাকলে আজকে জনগণ কীভাবে বুঝত যে এই দল আছে?”