একই ব্যক্তিকে একাধিকবারসহ প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন এমন ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণের নামে বিদেশ পাঠানো, পরামর্শকের পেছনে ‘অস্বাভাবিক’ ব্যয়সহ এসব নানা অনিয়মে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি।
ক্ষুব্ধ কমিটি কিছু পর্যবেক্ষণসহ সদ্য শেষ হওয়া (জুন ২০১৯) এই প্রকল্পের সার্বিক কার্যক্রম মূল্যায়নের জন্য সরকারের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগকে (আইএমইডি) বিভাগে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সোমবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়।
কমিটির কার্যপত্রে দেখা গেছে, ২৮৪ কোটি ৭৮ লাখ ৯৮ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ২২১ কোটি ৪৭ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩৩ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে পরামর্শক নিয়োগে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট নয় এমন খাতেও অর্থ ব্যয় হয়েছে বলে সংসদীয় কমিটিতে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া দেখা গেছে, প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের নামে গত ১০ বছরে ২৯৯ জন বিদেশ সফর করেছেন। এর মধ্যে কোনো কোনো ব্যক্তি ১০/১২বারও বিদেশ সফর করেছেন। এছাড়া প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন এমন অনেকে বিদেশে গেছেন। প্রকল্পের টাকায় বিদেশ গিয়ে দেশে ফিরে চাকরি থেকে অবসরে গেছেন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। ফলে তাদের প্রশিক্ষণ বা অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি। প্রকল্পের পরিচালক এখতিয়ার বর্হিভূতভাবে নিজে ৩ থেকে ৪টি গাড়ি ব্যবহার করেছে বলেও সংসদীয় কমিটিতে অভিযোগ এসেছে।
কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা কেস প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। প্রকল্পের অনেক কর্মকাণ্ড ও ব্যয় আমাদের কাছে যৌক্তিক মনে হয়নি। এজন্য আমরা আইএমআইডিকে প্রকল্পটি গুরুত্বের সালে মূল্যায়ন করতে বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
~বিভিন্ন প্রকল্পের নামে কর্মকর্তাদের এভাবে বিদেশ না পাঠিয়ে কিছু কর্মকর্তা বাছাই করে তাদের বিদেশ পাঠিয়ে প্রশিক্ষক হিসেবে গড়ে তুলে তাদের মাধ্যমে দেশে বসেই প্রশিক্ষণ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।”
বৈঠকে কমিটি সুন্দরবন এলাকায় যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য পরিবেশ থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে এককভাবে পরিবেশের উপর প্রভাব পরিমাপ না করে সম্মিলিতভাবে কী প্রভাব পড়তে পারে, তার প্রতিবেদন তৈরি করে কমিটিকে উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে।
এছাড়া দেশে কীটনাশক আমদানির ক্ষেত্রে পরিবেশের ওপর প্রভাব খতিয়ে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন।
কমিটির সভাপতি এডিস মশা মারার ওষুধ আমদানির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “ডেঙ্গু মশার মারার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ওষুধ আমদানি হচ্ছে। যেহেতু বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই এটা নিয়ে হয়তো আমাদের কিছু বলার নেই। তবে, ভবিষ্যতে যেসব কীটনাশক আমদানি হয় তা প্রতিবেশ বান্ধব কি না সেটা দেখতে হবেG”
সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে বৈঠকে বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফআইডিসি) দখলকৃত ও বেদখলকৃত জমির পরিসংখ্যান আগামী তিন মাসের মধ্যে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়।
সাবের হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, জাফর আলম ও রেজাউল করিম বাবলু অংশ নেন।