মশার ওষুধ নিয়ে আদালতে প্রশ্নের মুখে নগর কর্মকর্তারা

ডেঙ্গু ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ায় আদালতের প্রশ্নের মুখে মশার ওষুধ বদলে ফেলার কথা বললেন ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 July 2019, 12:08 PM
Updated : 25 July 2019, 12:59 PM

তবে তার আগ পর্যন্ত বর্তমান ওষুধই মাত্রা বাড়িয়ে ব্যবহার করে মশা নির্মূলে আগামী চার দিন সমন্বিত অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে।

ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ায় মশার ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর বৃহস্পতিবার দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে ডেকে নিয়ে তাদের উপর ক্ষোভ ঝাড়ে আদালত।

তারা সমন্বিত কার্যক্রমের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদীর হাই কোর্ট বেঞ্চ আগামী মঙ্গলবার পরবর্তী আদেশের জন্য রেখে দেয় মামলাটি।

সেদিন মশা নিধনের অগ্রগতি প্রতিবেদন হলফনামা আকারে আদালতকে দিতে হবে দুই সিটি করপোরেশনকেই।

আদালতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন তৌফিক ইনাম টিপু এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা।

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সায়েরা ফায়রোজ।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও এডিস মশা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আসার পর আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ আদেশ দেওয়া পর গত সোমবার দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে তলব করেছিল।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোমিনুর রহমান এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শরীফ আহমেদ বৃহস্পতিবার হাজির হয়ে তাদের বক্তব্য দিলে তা শোনে আদালত।

এরপর আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে জানতে চায় ডেঙ্গু নিয়ে এ বছর অ্যালার্মিং সিচ্যুয়েশন কেন হল? এক্ষেত্রে কী সমস্যা, তা কি চিহ্নিত করা হয়েছে?

জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনই বলুক, সেটাই ভালো হয়।

এরপর ঢাকা দক্ষিণের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শরীফ আহমেদ বলেন, “আমার এই সিটি করপোরেশনে এক কোটির বেশি লোক। আর ১০টি জোনে ৭৫টি ওয়ার্ডে মশক নিধন কার্যক্রমে জনবল মাত্র ৪২৯।”

তখন আদালত জানতে চায়, এ বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব এত কেন?

ফাইল ছবি

শরীফ আহমদ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব, আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, এটা একটা বৈশ্বিক সমস্যা। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এমনটা হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় এর ভয়াবহ প্রভাব চলছে।

বিচারক তখন বলেন,“ওষুধ কার্যকর হচ্ছে না কেন? গত বছর ওষুধ ছিটালে ঘরেও তার ঝাঁঝ পেতাম। এবার গন্ধও পাওয়া যায় না। জনগণের ধারণা হচ্ছে, এবারের ওষুধে কাজ হচ্ছে না। টিভিতে দেখলাম, সড়ক মন্ত্রী বললেন, এবারের ওষুধ কাজ করছে না। এর আগে তো কেউ স্বীকারই করেনি।”

স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শরীফ বলেন, “আমরা যখনই ওষুধ আনি, তখনই সরকারি দুটি ল্যাবে টেস্ট করে পজিটিভ সার্টিফিকেট পেলেই ব্যবহার করি।”

তখন বিচারক বলেন, “যখন দেখলেন ওষুধ কাজ করছে না, তখন অন্য জায়গায় দ্রুত টেস্ট করবেন না? এসব কি আমাদের বলে দিতে হবে? হোয়াট ইজ দ্য প্রবলেম?

“স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সারা দেশের স্বাস্থ্য দেখবে। এগুলো আমরা দেখতে চাই না। অবস্থা যেরকম যাচ্ছে এটা কেবল সিটি করপোরেশনের উপর ছেড়ে দিলে হবে না। বিষয়টা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কেও দেখতে হবে।”

এরপর উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোমিনুর বলেন, “আমরা পুরো ওষুধটাই চেঞ্জ করব। এজন্য একটি কারিগরি কমিটি করেছি। সমস্যা হচ্ছে, পিপিপি’র (পাবলিক প্রাইভেট প্রকিউরমেন্ট) মাধ্যমে করতে হয়। সেখানে অনেক সময় লাগে। তবে ডিপিএম’র মাধ্যমে কিনলে তাড়াতাড়ি পেয়ে যাব।”

এ প্রক্রিয়ায় কতদিন সময় লাগবে আদালত তা জানতে চাইলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এ বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা চান।

বিচারক বলেন, “এক সপ্তাহের মধ্যে ওষুধ আনবেন। আমরা আদেশ দেব। আমরা ওষুধ চাই। কী প্রক্রিয়ায় আনবেন, সেটা হলফনামা আকারে আপনার আইনজীবীকে বলেন জানাতে।”

এই পর্যায়ে আদালত দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে বলে, কী ওষুধ আনবে তা দুপুরের মধ্যে জানাতে।

ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের বিশেষ ওয়ার্ড। ছবি:আব্দুল্লাহ আল মমীন

বিরতির পর দুপুরে শুনানিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আইনজীবী তৌফিক ইনাম টিপু বলেন, “নতুন ওষুধ আনা সম্ভব না। নতুন ওষুধ আনতে সর্বসাকুল্যে এক মাস সময় লাগবে। আগামী চার-পাঁচ দিন আমারা কমবাইন্ডলি (সমন্বিত) অভিযান চালাই। সে সময়টুকু আমাদের দেন। আশা করি, এতে কাজ হবে।”

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা আদালতে বলেন, “মশা মারতে সিটি করপোরেশন যে ওষুধটা ব্যবহার করছে, সেটি কার্যকর আছে। কিন্তু আবহাওয়া, জলবায়ুর প্রভাবে মশা আরও বেশি প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। ফলে দুই সিটি করপোরেশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগামী চার দিন ওষুধ ছিটানোর মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে কমবাইন্ডলি মশা নিধন কার্যক্রম চালাবে। এতে কাজ হতে পারে।”

দুই আইনজীবীদের কথা শুনে বিচারক উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, “সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা বলছে মশার ওষুধ কাজ করছে না। অথচ সিটি করপোরেশন বলছে কার্যকর। সরকার বক্তব্য দিচ্ছে একটা, আর সিটি করপোরেশন বক্তব্য দিচ্ছে আরেকটা!”

জবাবে দক্ষিণ সিট করপোরেশনের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, “তিন থেকে সাত দিনের মধ্যে আমরা দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখাতে পারব আশা করি। যে কমবাইন্ড প্রোগ্রাম নিয়েছি, তাতে আশা করছি কাজ হবে।”

পরে আদালত আগামী মঙ্গলবার এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য রেখে আদেশ দেয়।