বন্যায় প্লাবিত ২২% এলাকা

টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে চলমান বন্যায় বাংলাদেশের ২০-২২ শতাংশ এলাকা এখন প্লাবিত।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 July 2019, 07:23 PM
Updated : 23 July 2019, 07:23 PM

দুই সপ্তাহ ধরে বন্যার বিস্তারের পর গত সপ্তাহে পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করে।

তবে আগামী তিন দিন উজানে ভারি বর্ষণের আভাস রয়েছে। তা হলে পানি নামতে  দেরি হবে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভুইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বন্যা পরিস্থিতি এখন ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে। আগামী সপ্তাহের শেষে এ দফার বন্যার আরও উন্নতি হবে।”

এক ‘মাঝারি বন্যা’ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, পরিস্থিতি ২০১৭ সালের অগাস্টের বন্যার মতোই।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদ-নদীর ৯৩টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে এখনও ২১টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। মঙ্গলবার ৫৯টি পয়েন্টে পানি কমেছে, বেড়েছে ৩২টি পয়েন্টে।

নদীর পানি কমলেও কুড়িগ্রাম, বগুড়া, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, শেরপুর, টাঙ্গাইল, জামালপুর, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ি, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, চাঁদপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে বন্যার অবনতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে।

বর্তমানে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নীলফামারী, লালমনিরহাট, নেত্রকোণা, মৌলভীবাজার এলাকায় বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, ভারতের আসাম, পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল ও মেঘালয়ের বিভিন্ন স্থানে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণের শঙ্কা রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সাইফুল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উত্তরাঞ্চলের পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে; সেই সঙ্গে মধ্যাঞ্চলে বিস্তার বাড়ছে। উজানে আগামী কয়েকদিনের বৃষ্টি থাকলে উন্নতির চিত্র বিলম্বিত হবে।”

তিনি জানান, আপাতত পরিস্থিতি কেটে গেলেও অগাস্টের পরিস্থিতির উপর বন্যার দুর্ভোগের চিত্র নির্ভর করবে।

টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ২৮ জেলায় ৩০ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতগ্রস্ত হয়েছে।উজান থেকে আসা ভারতীয় ঢলের সঙ্গে চীনের বন্যার পানি এসে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ ও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে বলে শঙ্কার কথা  ইতোমধ্যে জানিয়ে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি।

দেশে বড় বন্যাগুলোর মধ্যে ১৯৯৮ সালে প্রায় ৬৮ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। আর ১৯৮৮ সালে বন্যা কবলিত হয়েছিল প্রায় ৬৪ শতাংশ এলাকা। সে সময় অনেক এলাকায় বন্যা দুই মাসের বেশি সময় স্থায়ী হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ পায়।

২০১৭ সালে জুলাই-অগাস্টের দুই দফা বন্যা হয়। অগাস্টের বন্যায় দেশের ৩০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়।

বিস্তার ও স্থায়িত্বে ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের দুটি বড় বন্যার মতো ভয়াবহ না হলেও সেবার বন্যায় মৃতের সংখ্যা ওই দুই বছরের হিসাব ছাড়িয়ে যায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানিয়েছে, চলমান বন্যায় ১০ জুলাই থেকে ২৩ জুলাইয়ের মধ্যে ডায়রিয়া, আঘাতসহ নানা কারণে ৯৪ জন মারা গেছে।

এর মধ্যে জামালপুরে ৩২ জন, নেত্রকোণায় ১৬ জন, গাইবান্ধায় ১৬ জন রয়েছে।

নিহতদের মধ্যে বজ্রপাতে ৭ জন, পানিতে ডুবে ৭৬ জন, সাপের কামড়ে ৮ জন ও আরটিআই ১ জন রয়েছে।