চার লাখ ৭৯ হাজার গাড়ির ফিটনেস নবায়নে সময় দুই মাস

ঢাকাসহ সারা দেশে লাইসেন্স নিয়ে ফিটনেস নবায়ন না করা চার লাখ ৭৯ হাজার ৩২০টি গাড়ির ফিটনেস নবায়নের জন্য দুই মাস সময় বেঁধে দিয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 July 2019, 06:34 PM
Updated : 23 July 2019, 06:34 PM

আগামী ১ অগাস্ট থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নবায়নের এ কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে।

বিআরটিএর দাখিল করা এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেয়।

আগামী ১৫ অক্টোবর এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির তারিখ রেখেছে আদালত।  

আদালতে বিআরটিএ’র পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী রাফিউল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হেলেনা বেগম চায়না। আর দুদকের পক্ষে ছিলেন সৈয়দ মামুন মাহবুব।

পরে বিআরটিএর আইনজীবী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আদালতের এ আদেশটি অর্থাৎ ফিটনেস নবায়নের যে সময়সীমা আদালত দিয়েছেন, এ সময়ের মধ্যে ফিটনেস নবায়ন না করলে আদালত এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আদেশ দেবে।

আর আদালতের আদেশের বিষয়ে গাড়ির মালিকদের সচেতন করতে পত্রিকায় ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দিতে বিআরটিএকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিআরটিএর প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকাসহ সারাদেশে লাইসেন্স নিয়ে ফিটনেস নবায়ন না করা গাড়ির সংখ্যা চার লাখ ৭৯ হাজার ৩২০টি। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে দুই লাখ ৬১ হাজার ১১৩, চট্টগ্রাম বিভাগে এক লাখ ১৯ হাজার ৫৮৮, রাজশাহী বিভাগে ২৬ হাজার ২৪০, রংপুর বিভাগে ৬ হাজার ৫৬৮, খুলনা বিভাগে ১৫ হাজার ৬৬৮, সিলেট বিভাগে ৪৪ হাজার ৮০৫ এবং বরিশাল বিভাগে ৫ হাজার ৩৩৮টি গাড়ি মেয়াদোত্তীর্ণ ফিটনেসবিহীন গাড়ি রয়েছে।

এ প্রতিবেদন তুলে ধরার পর বিআরটিএর আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, “আপনাদের নাকের ডগায় ফিটনেস ছাড়া এত গাড়ি কীভাবে চলছে? আপনারা ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন?”

জবাবে আইনজীবী বলেন, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বিআরটিএ ৩৯ হাজার ৮৩৭টি মামলা করেছে। জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৬ কোটি ৭২ লাখ ২৩ হাজার ৩৯২ টাকা। ডাম্পিং করা হয়েছে ২১৪টি গাড়ি এবং ৭২৮ জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও বিআরটিএ মিরপুরে একটি ভেহিকল ইন্সপেকশন সেন্টার (ভিআইসি) স্থাপন করেছে। পর্যায়ক্রমে সব জেলায় তা করা হবে। 

বিচারক তখন বলেন, “বিদেশে গাড়িগুলো কত সুন্দর! কোনো দাগ নেই। আর আমাদের গাড়িগুলো, লুকিং গ্লাস নেই,হেডলাইট নেই,রঙ নেই।”

জবাবে আইনজীবী বলেন, “প্রাইভেট গাড়িগুলো ঠিক আছে। কিন্তু পাবলিক গাড়িগুলো দুর্ঘটনায় পড়ার পর আর ঠিক করে না।”

এ পর্যায়ে আদালত আদেশে বলে, “আমরা দুই মাস সময় দিচ্ছি। এর মধ্যে আপনারা পত্রিকায়, ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দেবেন এসব গাড়ির ফিটনেস নবায়ন করার জন্য। এরপর ১৫ অক্টোবরের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দেবেন। ওই দিন পরবর্তী শুনানি হবে। যেসব গাড়ি দুই মাসের মধ্যে নবায়ন করবে না,সেসব গাড়ি রাস্তায় চলতে দেব না। আমরা বিষয়টি স্ট্রিকটলি দেখব। আমরা কারো পক্ষে-বিপক্ষে নই। আমরা মানুষের পক্ষে। দেশ ও জাতির কল্যাণের পক্ষে।”

গাড়ির নিবন্ধন অছে কিন্তু ফিটনেস নাই এমন গাড়ির মালিকের নাম-ঠিকানাসহ তালিকা চেয়ে গত ২৪ জুন বিআরটিএর কাছে প্রতিবেদন চায় হাই কোর্ট।

লাইসেন্স আছে কিন্তু নবায়ন করেনি এমন চালকের তালিকাও দিতে বলা হয়েছিল।

সে প্রতিবেদনটি দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে বিআরটিএর আইনজীবী রাফিউল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই প্রতিবেদনটা আজ আমরা দেইনি। আদালত বলেছে, ফিটনেসহীন গাড়ির বিষয়টি শেষ হলে পরে চালকদের বিষয়ে ধরা হবে।”

গত ২৩ মার্চ ‘নো ফিটনেস ডকস, ইয়েট রানিং’ শিরোনামে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আসার পর ২৭ মার্চ হাই কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেয়।

ঢাকাসহ সারা দেশে ফিটনেস-নিবন্ধনহীন যানবাহন ও লাইসেন্সহীন চালকের প্রতিবেদন চেয়ে বিআরটিএ’র সড়ক নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক মাহবুব-ই-রাব্বানীকে ২৪ জুন আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।

একই সঙ্গে ফিটনেস, নিবন্ধনহীন যান চলাচল ও লাইসেন্স ছাড়া যান চলাচল বন্ধে বিবাদীদের নিস্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জীবন ও ব্যক্তির বাঁচার অধিকার রক্ষায় মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ -এর বিধান বাস্তবায়নের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশ প্রধান, বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান, ঢাকা ট্র্যাফিক পুলিশের (উত্তর ও দক্ষিণ) ডিসি, বিআরটিএ সড়ক নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালককে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।