‘প্রজ্ঞা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে এগিয়ে নিয়েছেন তাজউদ্দীন আহমদ’

বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম নেতা তাজউদ্দীন আহমদ প্রজ্ঞা দিয়ে ঝঞ্ছাবিক্ষুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধকে এগিয়ে নিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি জিয়াউদ্দিন তারিক আলী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 July 2019, 05:50 PM
Updated : 23 July 2019, 05:50 PM

তাজউদ্দীন আহমদের ৯৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন তিনি।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে বন্দি হওয়ার পর তার ঘনিষ্ঠ সহচর তাজউদ্দীন আহমদের পরিচালনায়ই চলে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম।

তারিক আলী বলেন, “তাজউদ্দীন আহমদ তার প্রজ্ঞা দিয়ে ঝঞ্ছাবিক্ষুব্ধ মুক্তিযুদ্ধকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তার কাছে বাংলাদেশ ঋণী। তিনি বাংলাদেশকে শুধু দিয়েই গেছেন, কোনোদিন বাংলাদেশের কাছ থেকে একটি কানাকড়িও গ্রহণ করেননি।”

৮ নম্বর থিয়েটার রোডে তাজউদ্দীন আহমদের মুক্তিযুদ্ধকালীন দিনগুলোর স্মৃতিচারণা করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের এ ট্রাস্টি।

দেশের জন্য এ নেতার ত্যাগের কথা তুলে ধরে বলেন, “একই বাসায় অফিস করতেন আর আট বাই দশ ফুট ঘরে থাকতেন। তিনি প্রতিদিন নিজের জামাটি নিজেই ধুয়ে পরতেন। মুক্তিযদ্ধের সময় আমি যেমন একটি জামা গায়ে দিয়ে নয় মাস কাটিয়েছি। তিনিও তেমন দুইটি পাজামা-পাঞ্জাবি দিয়ে নয় মাস যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন।”

রাজনীতিক তাজউদ্দীন আহমদের চরিত্র বিশ্লেষণ করে তারিক বলেন, “এই সময়ে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আর সেই সময়েও চরম অসাম্প্রদায়িক একজন মানুষ ছিলেন তিনি।

“তার দৃঢ়চেতা মনোভাব, প্রজ্ঞা আর লক্ষ্য স্থির করে যাওয়া এবং ভারতের সঙ্গে একইস্বরে, একই উচ্চতায় কথা বলা দেশের মানুষের মনে সদা জাগ্রত থাকবে। তিনি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি জলাঞ্জলি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হতে দেননি।”

আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন তাজউদ্দীন আহমদকে নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘সাক্ষী ছিল শিরোস্ত্রাণ’ বইয়ের লেখক সুহান রিজওয়ান।

এই সময়ে এসেও বাংলাদেশে প্রথম প্রধানমন্ত্রীকে খুঁজে ফেরার কথা বললেন এ তরুণ লেখক।

“যে কিশোর বিনে পয়সার পড়িয়ে যাচ্ছেন পথশিশুদের, যে যুবক রক্তের সন্ধানে ছুটছেন হাসপাতালগুলোতে, সেইসব মানুষের মাঝে তাজউদ্দীন আহমেদ এখনও আছেন। যিনি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার চিন্তা করেন, অনমনীয় হয়ে সত্যের পথে লড়াইয়ে থাকেন তার মাঝে তিনি আছেন।”

বক্তব্যের শেষ আক্ষেপ প্রকাশ করে সুহান বলেন, “সুযোগ পেয়েও নিজেকে আড়াল করতে চাওয়াটা কঠিন কাজ আর সেই কঠিন কাজটিই করেছেন তিনি। আমার এবং বাংলাদেশের অক্ষমতা-তাজউদ্দীন আহমদের কাছ থেকে আমরা এখনও কিছুই শিখতে পারিনি।”

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুলতানা আক্তার। তাজউদ্দীন আহমদ’র চিঠি ও দিনপঞ্জি থেকে পাঠ করেন তাজউদ্দীন আহমদ পাঠচক্রের সদস্য শারমীন শরীফা, বুশরা মোম ও রুকুনুল হাসান।

ভাষানটেক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি শেষ হয়।