দুদকের বাছির ঘুষের মামলায় কারাগারে

পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমানের কাছ থেকে ঘুষ লেনদেনের মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের জামিন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 July 2019, 09:53 AM
Updated : 23 July 2019, 12:35 PM

ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ মঙ্গলবার শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।

সোমবার রাতে ঢাকার দারুস সালাম এলাকা থেকে বাছিরকে গ্রেপ্তার করে দুদকের একটি তদন্ত দল। রাতে রমনা থানায় রেখে মঙ্গলবার দুপুরে তাকে আদালতে হাজির করা হয়।

ডিআইজি মিজানের অবৈধ সম্পদের খোঁজে দুদক যে অনুসন্ধান করছিল,তার দায়িত্ব পেয়েছিলেন এনামুল বাছির।

সেই অনুসন্ধান চলার মধ্যেই ডিআইজি মিজান গত ৮ জুন দাবি করেন, বাছির তার কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন।এর পক্ষে তাদের কথপোকথনের কয়েকটি অডিও ক্লিপও তিনি ফাঁস করে দেন।

ডিআইজি মিজান দাবি করেন, নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং বাছির যে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’, তা প্রমাণ করতে এই কাজ তিনি করেছেন। অন্যদিকে ঘুষ নেওয়ার কথা অস্বীকার করে বাছির বলেন, ‘সব বানোয়াট’।

ঘুষের অভিযোগ ওঠার পর তাদের দুজনকেই সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। দুদকের পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্যা গত ১৬ জুলাই তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে দায়ের করা এ মামলার এজাহারে বলা হয়, অবৈধ সম্পদ অর্জনের ‘দায় থেকে বাঁচার জন্য’ ডিআইজি মিজানুর অসৎ উদ্দেশ্যে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে খন্দকার এনামুল বাছিরকে ‘প্রভাবিত করেন’ বলে অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয়েছে।

এই মামলায় একদিন আগেই পুলিশ কর্মকর্তা মিজানকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছিল দুদক। তিনি অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় আগে থেকেই কারাগারে রয়েছেন।

মামলার আরেক আসামি বাছিরকে সোমবার রাতে গ্রেপ্তার করার পর মঙ্গলবার জজ আদালতে হাজির করা হলে তার পক্ষে জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবী।

আইনজীবী মো. কামাল হোসেন শুনানিতে বলেন, ২৮ বছরের চাকরি জীবনে এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ওঠেনি।

“যখন তিনি তার পদোন্নতির বিষয়ে অনিয়মের অভিযোগ এনে হাই কোর্টে রিট আবেদন করলেন… সেই মুহূর্তে তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনা হল। ঘুষ দাবির বিষয়ে কোন দালিলিক, মৌখিক আলামত বা সাক্ষ্য আনতে পারেনি দুদক।”

এই আইনজীবী বলেন, যে ফোনালাপের ভিত্তিতে এই মামলা হয়েছে, তার ফরেনসিক পরীক্ষা হয়নি। ওই ফোনালাপের জন্য যে সিম জব্দ করা হয়েছে, তার একটি ডিআইজি মিজানের দেহরক্ষীর নামে, অন্যটি তারই গাড়িচালকের নামে। আর মোবাইল সেটটি মিজানের।

“তাহলে সহযোগী বা প্ররোচনাকারী হিসাবে তাদের কেন আসামি করা হল না। প্রকৃত ঘটনা হল, এটা ম্যানিপুলেটেড।… ভয়েস কলের কোনো স্যাম্পল সংগ্রহ করে তা নিয়মমত পরীক্ষা না করেই তাকে আসামি করা হল।”

কামাল হোসেন বলেন, “তিনি (বাছির) ডিআইজি মিজানের প্রতিহিংসার শিকার। বাংলাদেশ ব্যাংক অনুসন্ধান করে তার এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যাংকে অথবা কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কোনো টাকা জমার তথ্য পায়নি। তাহলে মানি লন্ডারিং কীভাবে হল?”

বাছিরের জামিন চেয়ে তার আইনজীবী বলেন, “আমার মক্কেলের চোখ নষ্ট, চোখে রক্ত জমেছে। জামিন নিয়ে চিকিৎসা করনো না হলে চোখ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।”

এর বিরোধিতা করে দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল শুনানিতে বলেন, “বাছির দুর্নীতি দমন কমিশনকে ষড়যন্ত্রকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে দেখানোর চেষ্টা করেছেন যা অত্যন্ত দুঃখজনক। যখন তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের, ও সেই অর্থ পাচারের সত্যতা পাওয়া গেছে, তখনই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।”

এই আইনজীবী বলেন, দুদক ফোনালাপের কণ্ঠ মিলিয়ে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে বলেই বাছিরকে গ্রেপ্তার করেছে। আর যেসব ধারায় এ মামলা হয়েছে, সেগুলো জামিনযোগ্য নয়।

প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা শুনানি নিয়ে জামিন আবেদন নাকচ করে বাছিরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। 

এ সময় কারাগারে বাছিরের প্রথম শ্রেণির মর্যাদা চাওয়া হলে ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েশ কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।