বেতন বকেয়া: বিআরটিসির চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ

বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে বিআরটিসির চেয়ারম্যানকে তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রেখেছে চালক ও সহকারীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 July 2019, 11:18 AM
Updated : 22 July 2019, 11:19 AM

শতাধিক পরিবহন শ্রমিক সোমবার সকালে রাজধানীর দিলকুশা এলাকায় পরিবহন ভবনের প্রধান গেইটে তালা দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। ওই ভবনের চতুর্থ তলায় বিআরটিসির চেয়ারম্যান ফরিদ আহমদ ভূঁইয়ার কার্যালয়।

চেয়ারম্যানকে ভেতরে রেখে গেইট তালা লাগানোর পর ভবনের সামনে থাকা চেয়ারম্যানের গাড়ির চাকার হাওয়া ছেড়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। বেলা ২টার পর গাড়িটি সেখান থেকে সরানো হলেও ভবনের গেইটে তখনও তালা ঝুলছিল।

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, তাদের কারও কারও ১৭ মাসের বেতন-ভাতা বকেয়া। পরিবার পরিজন নিয়ে তারা মানবেতন জীবন-যাপন করছেন।

চেয়ারম্যানের কার্যালয় থেকে গত আড়াই বছরে বার বার আশ্বাস দেওয়া হলেও সমস্যার সমাধান হয়নি বলে অভিযোগ করেন এই পরিবহন শ্রমিকরা।

তাদের বিক্ষোভের মধ্যে বিআরটিসি সচিব নূর-ই-আলম দুপুরে পরিবহন ভবনের ভেতর থেকে গেইটের সামনে এসে শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে আশ্বাস দেন। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা তাতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।

নূর-ই-আলম এ সময় শ্রমিকদের উদ্দেশে বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে বেতন বকেয়া থাকা অমানবিক। তবে আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। এসব বিবেচনা করে আপনাদের দাবি-দাওয়া অবশ্যই পূরণ করা হবে।”

নোয়াখালীর সোনাপুর ডিপোর চালক শামীম হাওলাদার এ সময় সচিবকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনার এই মৌখিক আশ্বাস আমরা মানতে পারছি না। চেয়ারম্যান আমাদের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত তাকে বের হতে দেব না।”

তিনি বলেন, “অফিসাররা দুর্নীতি করে বড় বড় আয়োজন করে প্রোগ্রাম করে, খাবার ফেলে দেয়। এক একজন দুইটা পর্যন্ত গাড়ি ব্যবহার করে। আর আমরা খেতে পারি না। আমাদের বেতন দেওয়া হয় না। এই বৈষম্য আর চলবে না।”

বিআরটিসি সিবিএ-এর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, “শ্রমিকরা যে দাবি করছে তা কোনোভাবে অযৌক্তি নয়। মুখের কথায় আর কোনো শ্রমিক মানতে চাইবে না।”

সচিবের উদ্দেশে তিনি বলেন, “কত সময়ের মধ্যে বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হবে তা আজকে একটা অর্ডার করেন, তাহলেই সমস্যার সমাধানের পথে আসবে।”

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বিআরটিসির চালক মো. মফিজুর রহমান বলেন, সারাদেশে বিআরটিসির ২২টি ডিপো আছে। এসব ডিপোতে সাড়ে চার হাজার চালক, হেলপার, টেকনিশিয়ান, অফিস সহকারী এবং নিরাপত্তারক্ষী কাজ করেন। সরকারি বেতন স্কেলে তারা তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। তাদের কারও ১৩ মাস, কারও ১৭ মাসের টাকা বকেয়া।

“বেতন চাইতে গেলে হয় চাকরিচ্যুত করা হয়, না হয় বদলি করে দেওয়া হয়। আমরা আর কোনো কিছুকে ভয় করছি না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ না করা হবে ততক্ষণ এখানে অবস্থানে থাকব।”

কল্যাণপুর ডিপোর চালক রেজাউল মামুন অভিযোগ করেন, অফিসারদের দুর্নীতির কারণেই তাদের এ অবস্থা।

“তারা লুটপাট করে খায়, আর আমাদের বেতন দেয় না। কিন্তু মুখ খুললেই বদলি অথবা চাকরিচ্যুত করা হয়।”

বিআরটিসি গাবতলী ডিপোর কন্ডাকটর মো. বাদল শেখ অভিযোগ করেন, সরকারিভাবে প্রতিটি গাড়ির জমা নির্ধারণ করা আছে ছয় হাজার টাকা। কিন্তু গাবতলী ডিপোর ব্যবস্থাপক বেআইনিভাবে আট হাজার টাকা আদায় করছেন।

“তিনি প্রতিটি গাড়ি থেকে দুই হাজার টাকা অতিরিক্ত আদায় করে পকেটে ভরছেন।”

বিআরটিসির শ্রমিকদের এই আন্দোলন নিয়ে সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন সাংবাদিকরা।

জবাবে তিনি বলেন, বিআরটিসিতে চেয়ারম্যান পরিবর্তন এসেছে, নতুন চেয়ারম্যান যোগ দিচ্ছেন।

“কিছু কিছু বিশৃঙ্খলার অভিযোগ আছে, যেগুলো মন্ত্রণালয় থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসাররা দেখছেন। বেতনের ব্যাপারটা লার্জ স্কেলে নেই। দুয়েকটা জায়গায় আছে সেটা আমরা খতিয়ে দেখছি এবং ব্যবস্থা নিচ্ছি।”