শেখ হাসিনার ট্রেনে গুলি: দণ্ডপ্রাপ্ত ৪৩ জনের আপিল

পাবনার ঈশ্বরদীতে ২৫ বছর আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে বোমা হামলা ও গুলির ঘটনায় দণ্ডপ্রাপ্ত ৪৭ জনের মধ্যে ৪৩ জন আপিল করেছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2019, 11:45 AM
Updated : 21 July 2019, 11:45 AM

এর মধ্যে আটজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত, ২২ জন যাবজ্জীবন ও ১৩ জন দশ বছর করে দণ্ডপ্রাপ্ত রয়েছেন।

পাবনার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক রোস্তম আলী গত ৩ জুলাই রায়ে ওই ঘটনায় বিএনপির নয়জন নেতাকর্মীকে মৃত্যুদণ্ড দেন।

এছাড়া ২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১৩ জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তদের তিন লাখ এবং ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্তদের এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।

সর্বোচ্চ সাজার রায় পাওয়া নয় আসামি হলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ঈশ্বরদী পৌরসভার সাবেক মেয়র মোকলেছুর রহমান, পাবনা জেলা বিএনপির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক একেএম আকতারুজ্জামান আকতার, ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু, ঈশ্বরদী পৌর যুবদলের সভাপতি মোস্তফা নূরে আলম শ্যামল, স্থানীয় বিএনপি নেতা মাহবুবুল রহমান পলাশ, রেজাউল করিম ওরফে শাহিন, শামছুল আলম, আজিজুর রহমান ভিপি শাহীন ও শহীদুল ইসলাম অটল।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এই নয়জনের মধ্যে জাকারিয়া পিন্টু পলাতক।

যাবজ্জীবনপ্রাপ্তরা হলেন- ইসলাম হোসেন জুয়েল, আলাউদ্দিন বিশ্বাস, আল আমিন, শিমু, আনিস শেখন, খোকন, নুরুল ইসলাম, আক্কেল আলী, সেলিম আহমেদ, মামুনুর রহমান, রবি, মামুন, তুহিন, এনাম, কল্লোল, কালা বাবু, লিটন, আবদুল্লাহ আল মামনু রিপন, লাইজু, আব্দুল জব্বার, আবুল কালাম, আব্দুল হাকিম টেনু, আলমগীর হোসেন, পায়েল ও পলাশ ।

আর ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন, এছাড়া আসামি তুহিন বিন ছিদ্দিক, দুলাল সরদার, ফজলুর রহমান, আব্দুল বারিক, আনোয়ার হোসেন জনি, রস্তম, মওলা, জামরুল, রাজু, বাবলু, বরকত, মুক্তা ও মুকুল।

রায়ের পর গত ১৪ জুলাই পাবনার আদালতে আত্মসমর্পণ করেন সাজাপ্রাপ্ত সাত আসামি।

আসামিদের আইনজীবী কায়সার কামাল সাংবাদিকেদের বলেন, “মামলার রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নয়জনের মধ্যে পলাতক জাকারিয়া পিন্টু বাদে বাকি আটজন, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ২৫ জনের মধ্যে ২২ জন ও ১০ বছর করে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ১৩ জনের পক্ষে আমরা সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল দায়ের করেছি।”

তিনি বলেন, “আমাদের কাছে মনে হয়েছে ইন্টারেস্টেড গ্রুপ যারা ছিল অর্থাৎ স্থানীয় আওয়ামী লীগের এমপি ও নেতাকর্মীদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে এই রায় দেওয়া হয়েছে। অবাক করার মত বিষয় হল, গত ১ জুলাই সাক্ষ্য নেওয়া শেষ হওয়ার মাত্র একদিন পরেই রায় দেওয়া হয়েছে। তো এটা সহজেই অনুমেয় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বা কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে খুশি করার জন্য এ রায় দেওয়া হয়েছে; যেটা আমরা মনে করি জুডিশিয়াল কিলিংয়ের নামান্তর।”

মৃত্যুদণ্ড, যাজজ্জীবন ও ১০ বছর কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ৪৩ জনের পক্ষে তিনটি আপিল দায়ের করা হয়েছে বলে জানান আইনজীবী কায়সার কামাল।

এদিকে গত ৩ জুলাই রায় হওয়ার পর ওই সপ্তাহেই এ মামলার ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের আবেদন) ও এ সংক্রান্ত নথি হাই কোর্টে আসে।

গত ১২ জুলাই হাই কোর্ট বিভাগের বিশেষ কর্মকর্তা মো. সাইফুর রহমান বলেছিলেন, বিশেষ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়ের নথি পাওয়ার পর তা হাই কোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রথম সরকারের সময় ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ট্রেন মার্চ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর অংশ হিসেবে খুলনা থেকে ট্রেনে করে সৈয়দপুর যাওয়ার পথে ঈশ্বরদী স্টেশনে তার যাত্রাবিরতি ও পথসভা করার কথা ছিল।

ট্রেনটি ঈশ্বরদী স্টেশনে পৌঁছালে শেখ হাসিনার বগি লক্ষ্য করে গুলি ও বোমা ছোড়া হয়। তবে ওই ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যান আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

হামলার ঘটনায় রেল পুলিশের ওসি নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে সাত জনের নাম উল্লখ করে এবং আরও শতাধিক ব্যক্তিকে ‘অজ্ঞাত পরিচয়’ আসামি হিসেবে দেখিয়ে মামলা দায়ের করেন। 

কিন্তু তখনকার বিএনপি সরকারের সময়ে এ মামলার তদন্ত আটকে থাকে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে পুলিশকে পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়।

তদন্ত শেষে ঈশ্বরদীর বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীসহ ৫২ জনকে আসামি করে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ। পরে অভিযোগ গঠন করে আসামিদের বিচার শুরু করে আদালত।