অ্যান্টিবায়োটিকযুক্ত পশুখাদ্যেও নজর নেই: অধ্যাপক ফারুক

নিষেধাজ্ঞা থাকলেও পর্যবেক্ষণের অভাবে বিভিন্ন কোম্পানি উৎপাদিত পশুখাদ্যে অ্যান্টিবায়োটিক দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন সম্প্রতি দুধ নিয়ে গবেষণা করে আলোচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টারের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 July 2019, 03:51 PM
Updated : 20 July 2019, 03:51 PM

শনিবার দুপুরে টিএসসিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি কার্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ আায়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই কথা বলেন।

সম্প্রতি বাজারের থাকা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দুধ পরীক্ষা করে সেসবে অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি আছে জানিয়ে আলোচনায় আসেন অধ্যাপক ফারুক।

বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে তার সমালোচনার প্রতিবাদে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

পশুখাদ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর প্রসঙ্গ টেনে সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ফারুক বলেন, “বাংলাদেশের আইনে নিষেধ থাকার পরেও তারা কেন অ্যান্টিবায়োটিক ফিডের মধ্যে দেয়? এটা হল বেআইনি কাজ। কিন্তু এটার মনিটরিংটা হচ্ছে না।”

কিছু কিছু কর্মকর্তা এসব পর্যবেক্ষণ করছেন না বললেও তাদের মধ্যে ব্যাতিক্রমও রয়েছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, “আমাদের যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তরগুলো বা কর্মকর্তাগুলো, সেখানকার কিছু কিছু কর্মকর্তা, সবাই না। অনেক ভালো ভালো কর্মকর্তাও আছে, অনেক জনদরদি, দেশপ্রেমি, মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবেন এরকমও আছেন কিন্তু ওইখানে। কিছু কর্মকর্তা নিশ্চয়ই আছেন যারা এইগুলো মনিটর করছে না। আইনটা প্রয়োগ হচ্ছে কিনা দেখছেন না।যেকারণে ফিডের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক দিচ্ছে।

বাজারে থাকা পশুখাদ্য পরীক্ষা করে তাতে অ্যান্টোবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়া সংশ্লিষ্ট উৎপাদকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

দুধ নিয়ে তার সাম্প্রতিক গবেষণা নিয়েও কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের এই শিক্ষক। 

সম্প্রতি বাজারে থাকা বিভিন্ন কোম্পানির পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষা করে সেসবে অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়ার কথা জানিয়ে বিভিন্ন মহলের সমালোচনার মুখে পড়েন অধ্যাপক ফারুক। পরে দ্বিতীয় দফায় দুধ পরীক্ষা করেও একই ফল পান তিনি।

বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যে হাই কোর্ট ১৪ জুলাই বিএসটিআই অনুমোদিত পাস্তুরিত দুধ চারটি প্রতিষ্ঠানের গবেষণাগারে পরীক্ষা করে এ সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছে। আগামী ২৩ জুলাই এ বিষয়ে শুনানির দিন রয়েছে।

অধ্যাপক ফারুক বলেন, “আমরা স্বচ্ছ, আমরা কোনো কোম্পানির পক্ষে বা বিপক্ষে কাজ করিনি। আমাদের লক্ষ্য ছিল দুধের সেক্টরটাকে উন্নত করা, উন্নতমানের দুধ আমাদের এখানে আসুক, আমাদের বাচ্চারা উন্নতমানের দুধ খাক, আমরা সবাই যেন মানসম্মত দুধ খেতে পারি, নিরাপদ দুধ খেতে পারি এই বিষয়টাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য এবং সেখানে এর মাধ্যমে আমরা বিশ্বাস করি মানহীন দুধ দিয়ে ডেইরি সেক্টর উন্নত হবে না।”

দুগ্ধশিল্পের মানোন্নয়নে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন তিনি।

“আমরা মনে করি, মানসম্মত দুধটাই আমাদের লাগবে এবং সেই কারণে আমরা এই সেক্টরকে টেকনিক্যাল সহযোগিতা যা করার আমরা নিশ্চয়ই করব। আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, আমাদের ল্যাব থেকে বা আমাদের গবেষক দলের পক্ষ থেকে বা ব্যক্তিগতভাবে আমার পক্ষ থেকে আমরা সকল ব্যাপারেই, যদি ডেইরি শিল্প কোনো রকমের প্রযুক্তিগত সহায়তা চায়, আমরা নিশ্চয়ই সেটা করব।’’

পাস্তুরিত দুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, “যার পাস্তুরিতকরণের মেশিন আছে, সুযোগ-সুবিধা আছে, তার কিন্তু জীবাণু থাকার কথা না। এর মানে হল ওই সুবিধাটুকু হয়তো সঠিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। এটা একটা ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি। আজকে দেশে দুধের বিষয়টি নিয়ে যে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তা দূর করার জন্য আমরা কোম্পানিগুলোকে অনুরোধ করব।

দুধ সংগ্রহের ক্ষেত্রেও নিয়ম মানা হচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, “গরু, মহিষ এগুলো রোগাক্রান্ত হতেই পারে। এজন্য হয়তো তাদের অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হয়। কিন্তু নিয়ম হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট, ক্যাপসুল বা ইনজেকশন হোক, তা দেওয়ার পরে কমপক্ষে ২১ দিনের মধ্যে সে প্রাণীর দুধ বা মাংস খাওয়া যাবে না।এটা দিয়ে অন্য কাজ করা যেতে পারে। কিন্তু পাস্তুরাইজড দুধের জন্য এটাকে পাঠানো যাবে না, এই জায়গাটি নিশ্চিত করতে হবে। এটাই নিয়ম। কেন নিয়ম মানবে না? দুধ সংগ্রাহক যারা আছেন তাদেরকে বলে দিলেই তো হয় কোম্পানির পক্ষ থেকে।’’

এছাড়াও কোম্পানিগুলো এই ব্যাপারে পশু চিকিৎসকদের সহায়তাও নিতে পারেন বলে জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দিন বলেন, “কিছু অসাধু খামার ব্যবসায়ী ও তাদের বশীভূত আমলা নেটওয়ার্ক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক স্যারের গবেষণালব্ধ ফলাফলকে গ্রহণ না করে, তাকে অভিনন্দন না জানিয়ে উল্টো হুমকি প্রদান ও কদর্য ভাষায় আক্রমণ করেছে।”

তিনি তাদেরকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, সাধারণ সম্পাদক আল মামুন প্রমুখ।