দুদকের ৭০ ভাগ মামলার আসামি ‘চুনোপুঁটিরা’

বড় দুর্নীতিবাজদের ধরতে না পারার ব্যর্থতা স্বীকার করে নিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 July 2019, 12:54 PM
Updated : 20 July 2019, 01:00 PM

দুদকের কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনার প্রেক্ষাপটে তিনি শনিবার এক আলোচনা সভায় বলেন, “আমরা অস্বীকার করি না। আমাদের যে ধরা বা মামলা করার যে গতি-প্রকৃতি, আমি নিজেও দেখেছি তার অন্তত ৬০ থেকে ৭০ ভাগ সম্ভবত চুনোপুঁটি।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবে দুর্নীতি দমনে আইনজীবী ও বিচার বিভাগের ভূমিকা নিয়ে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)’র আলোচনা অনুষ্ঠানে একথা বলেন ইকবাল মাহমুদ।

তবে বড় দুর্নীতিবাজদের ধরতেও পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, “ছোটো গাছ উপড়ে ফেলা যত সহজ, বড় গাছ উপড়ানো অত সহজ না। বট গাছ উপড়ানো অনেক কঠিন। তাই বলে যে আমরা বড় গাছ ধরছি না তা কিন্তু না। চুনোপুঁটিদেরও আমরা ধরব, বড় মাছও ধরব।”

তিনি সেই সঙ্গে বলেন, “আস্তে আস্তে আস্তে আসতে হবে। এক লাফে আপনি রাস্তা পার হতে পারবেন না। আপনাকে আস্তে আস্তেই যেতে হবে। কৌশল ছাড়া এ বিপ্লব সম্ভব না।

“হুট করে কিছু করা সম্ভব হবে না। আমরা এমন কিছু করতে চাই না, হাত দিয়ে হাত নিয়ে আসতে চাই না। যদি আমরা হাত দেই হাত দেব। আর যদি না পারি হাত দেব না।”

দুর্নীতি দমন কর্মর্তাদেরও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ নিয়ে ইকবাল মাহমুদ বলেন, “দুর্নীতি দমন কমিশন আকাশ থেকে উড়ে আসে নাই, দুর্নীতি দমন কমিশনে যারা কাজ করেন তারা কিন্তু বিদেশ থেকে আসেন নাই।

“আমরা সবাই এ সমাজের মানুষ। আমরা (দুদক) কোনো মরুদ্যান নই, আমরা এই সমাজেরই অংশ। তাই সমাজের অন্যান্য জায়গায় যা হয়, আমার এখানে যে তা হয় না, কথাটা সঠিক নয়।”

নিজ বাহিনীর সদস্যদের কাজের সমালোচনাও করেন ইকবাল মাহমুদ।

“আমার বলতে দ্বিধা নাই, এমন কোনো লোক আমি পাইনি যে কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি। এখন আপনারা যদি বলেন অ্যাকশন নেন, তাহলে ৪৭৪ জন স্টাফের বিরুদ্ধেই অ্যাকশন নিতে হবে। তাহলে তো প্রতিষ্ঠান আর থাকবে না।”

নির্দিষ্ট সময়ে তদন্ত শেষ করতে দুদক কর্মকর্তাদের নানা অজুহাতের বিষয়টিও তুলে ধরেন তিনি।

অর্থ পাচার আইন সংশাধনের সমালোচনা করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আইনি সীমাবদ্ধতার কারণে চাইলেও অনেক কিছু তারা করতে পারেন না।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে মনজিল মোরসেদ বলেন, “দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশন বৈষম্যমূলক আচরণ করছে বলে জনসাধারণের কাছে একটা ধারণা করে।

“কারণ বিরোধী দলের কারও বিরুদ্ধে মামলা হলেই তাকে গ্রেপ্তার বা তার সম্পত্তি জব্দসহ মামলার তদন্ত, বিচারকাজ খুব দ্রুত গতিতে হয়। কিন্তু সরকার দলীয় বা সরকার সমর্থক প্রভাবশালী কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও নোটিস দিয়ে তাদের সাক্ষাৎকার নিতেও তিন থেকে ছয় মাস সময় লেগে যায়।”

তবে ইকবাল মাহমুদ দাবি করেন, দুদকের কাজে রাজনৈতিক পক্ষপাত নেই।

দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধরার বিষয়ে দুদকের কাজের কোনো ঘাটতি নেই বলেও তার দাবি।

বক্তব্যের এক পর্যায়ে ‘সরল বিশ্বাস’ নিয়ে ব্যাখ্যা জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “এ ব্যাপারে আমার উত্তর একেবারেই সহজ। এটি হচ্ছে যে একটি প্রশ্নের বিপরীতে আমি যে উত্তরটি দিয়েছিলাম, সেটির ভিডিও ক্লিপ আপনাদের কাছে আছে। সেখানে দুর্নীতির কোনো শব্দ আমি উচ্চারণ করি নাই। দুর্নীতি কীভাবে আসল আমার কোনো ধারণা নাই। যারা এনেছেন এটা তাদের দায়। আমার দায় নয় মোটেও, এবং আমি কোনো ব্যাখ্যা দিতে প্রস্তুত নই।

“কারণ আপনারাই আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন পরিষ্কার করতে। পরিষ্কার করেছি ওই ভিডিওতেই। সুতরাং আমি আবার সেটির ব্যাখ্যা দিতে চাই না।”

সাংবাদিকদের উদ্দেশে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “আমি যদি কোনো অবান্তর কথা বলে থাকি, সেটা প্রচার না করাটাই সমীচীন। আর অফেনসিভ কোনো কথা যদি বলে থাকি, তাহলে আমি ক্ষমা চেয়ে নেব। ক্ষমা চাওয়ার মতো সৎ সাহস-শক্তি আমার আছে।

“আপনারা সংবাদ পরিবেশন করবেন, যাতে প্রতিষ্ঠানের (দুদক) ক্ষতি না হয়। প্রতিষ্ঠানটা যাতে মেলাইন না হয়। ব্যক্তি মেলাইন হোক অসুবিধা নাই, প্রতিষ্ঠানটা রাষ্ট্রের, সরকারের নয়।”

মনজিল মোরসেদের সভাপতিত্বে এই আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আমীর উল ইসলাম, আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম ও সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু।