শুধু ‘কাউন্টার ফায়ারে’ উগ্রবাদ দমন করা যায় না: আছাদুজ্জামান

জনগণকে সচেতন করে তোলা ছাড়া শুধু ‘কাউন্টার ফায়ার’ দিয়ে সহিংস উগ্রবাদকে দমন করা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 July 2019, 12:30 PM
Updated : 20 July 2019, 12:30 PM

শনিবার ‘ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’ আয়োজিত সহিংস উগ্রবাদবিরোধী বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।

বিতর্কে অংশ নেওয়া দুই দলের মধ্যে একটি দল সহিংস উগ্রবাদ দমনে রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং আরেকটি দল সামাজিক সচেতনতার পক্ষে নিজেদের যুক্তি দেন।

বিতর্ক শেষে সহিংস উগ্রবাদ দমনে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সামাজিক-ধর্মীয় সচেতনতার গুরুত্ব তুলে ধরেন ডিএমপি কমিশনার।

সহিংস উগ্রবাদকে একটি রাজনৈতিক মতাদর্শ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “শুধু আইন প্রয়োগ করে, দুজন অপরাধীকে খুন করে, কাউন্টার ফায়ার করে বা ১০ জনকে বিচারে সোপর্দ করে সহিংস উগ্রবাদকে দমন করা যায় না।

“সহিংস উগ্রবাদও কিন্তু একটি রাজনৈতিক মতাদর্শ। হোক সেটা ভ্রান্ত মতাদর্শ, হোক সেটা মুষ্টিমেয় কিছু লোকের সহিংস অপতৎপরতা, কিন্তু সেটিও কিন্তু একটি রাজনৈতিক মতবাদ।”

২০১৬ সালে গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানে বহু জঙ্গি নিহত হন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলে আসছেন, এরমধ্য দিয়ে জঙ্গিদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

গুলশান হামলার পর জঙ্গি দমনে রাজনৈতিক সদিচ্ছার কথা তুলে ধরে আছাদুজ্জামান বলেন, “রাজনৈতিক সদিচ্ছার ফলে ম্যাজিক্যালি উগ্রবাদ নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছি। প্রত্যেকটা জায়গায় সিসিটিভি, আর্চওয়ে লাগিয়েছি।”

জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতা তৈরির উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “হলি আর্টিজানের হামলার পর আমরা জেনেছি, টিফিনের সময়, ইউনিভার্সিটির ক্লাস শেষে দাওয়াতি কার্যক্রমের নামে, গল্প-গুজবের নামে জঙ্গিবাদের মতাদর্শ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসায়ও সচেতন হতে হবে। তারা সচেতন হলে স্বার্থান্বেষী চক্র নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে পারবে না।”

রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’

বরগুনায় আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা এবং কুমিল্লায় বিচারকের কক্ষে এক আসামিকে খুনের প্রসঙ্গে টেনে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “এর ফলে জনগণের মধ্যে নিরাপত্তাবোধের অভাবের যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

“কিন্তু আজকে আমরা অর্গানাইজড ক্রাইম বা সহিংস উগ্রবাদ নিয়ে আলোচনা করছি। আর রিফাত হত্যার ঘটনা কিংবা কুমিল্লায় বিচারবের কক্ষের হত্যার ঘটনা অপরাধজনক অর্গানাইজড ক্রাইম না।”

রিফাত খুনে মাদক ও প্রেমের ঘটনার থাকতে পারে বলে জানান আছাদুজ্জামান।

“কোনোভাবেই এটি সংঘবদ্ধ অপরাধ নয়। এটি নিয়ে ভীত হওয়ার কোনো কারণ নেই। জড়িতরা সবাই গ্রেপ্তার হয়েছে।”

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, “আমি বলব যে, আত্মরক্ষার্থে গুলি করেছে, অনেকে মারাও গেছে। এখানে বিচারহীনতার কোনো ঘটনা ঘটেনি।”

প্রিয়া সাহার প্রসঙ্গ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহার সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগকে ‘বানোয়াট ও ভিত্তিহীন’ বলেছেন ডিএমপি কমিশনার।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার জন্য ও সম্প্রতি বাংলাদেশের চোখ ধাঁধানো উন্নয়নকে ব্যাহত করার জন্য এটি একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। তিনি যা বলেছেন সেটি অমূলক, বিভ্রান্তিকর, ভিত্তিহীন।”

ওয়াশিংটনে ‘ধর্মীয় স্বাধীনতায় অগ্রগতি’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নিতে যাওয়া প্রিয়া সাহা গত ১৭ জুলাই হোয়াইট হাউজে গিয়ে ডনাল্ড ট্রাম্পকে বলেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা মৌলবাদীদের নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। প্রায় ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান নিখোঁজ হয়েছেন।

প্রিয়া সাহার অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “সংখ্যালঘুদের প্রতি নির্যাতন হচ্ছে, তাদের এক শতক জমি কেড়ে নিয়েছে, তাদের ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে বাধা দিয়েছে- এমন কোনো ঘটনা দেশে ঘটে নাই।”

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে শিগগিরই প্রিয়া সাহাকে দেশে আনার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন।  

প্রতিযোগিতায় দারুন নাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসাকে হারিয়ে ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ এশিয়া বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতা শেষে চ্যাম্পিয়ন ও রানার আপ দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।