‘অক্টোবরের পরেই’ রোহিঙ্গা নিপীড়ন তদন্তে নামবে আইসিসি

অনুমোদন পেলেই রাখাইনে গ্রামে গ্রামে রোহিঙ্গাদের দমন-পীড়নের তদন্ত শুরু করবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 July 2019, 06:50 PM
Updated : 11 Nov 2019, 12:08 PM

বৃহস্পতিবার ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান বাংলাদেশ সফররত আইসিসির ডেপুটি প্রসিকিউটর জেমস স্টুয়ার্ট।   

আগামী অক্টোবরের পর যে কোনো সময় এই অনুমতি মেলার আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন,  “মানবতার বিরুদ্ধে এমন অপরাধের  তদন্তে অনুমোদন খুব দ্রুতই মিলবে বলে আশা করা যায়।”

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গারা ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত তাদের অভিযোগ জানাতে পারবেন।

আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি ফাতু বেনসুদার নির্দেশে রাখাইনে  মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে  নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের জবানি নিতে  জেমস স্টুয়ার্টসহ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের একটি প্রতিনিধি দল এসেছেন বাংলাদেশে।

২০১৭ সালের অগাস্ট থেকে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তার আগে গত কয়েক দশকে এসেছে আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বলেন তাদের উপর চালানো চরম নির্যাতনের কথা।

রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিচার ও তদন্ত প্রক্রিয়া শুরুর জন্য আইসিসির সদস্যভুক্ত বাংলাদেশের সঙ্গে ইতোমধ্যে একটি চুক্তি করেছে আইসিসি। 

এ ধরনের চুক্তি একটি ‘স্বাভাবিক প্রক্রিয়া’ বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করে আইসিসির আইনজীবীদের দলটি।  

স্টুয়ার্ট বলেন, “আমরা এখনই তদন্ত করছি না, তবে তদন্তের পথ সুগম করছি। তদন্তে নামার সিদ্ধান্ত বিচারকরাই জানাবেন।

“আমরা এখানে সরকার এবং ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্তদের কাছে  আইসিসি প্রক্রিয়ার ব্যাখ্যা ও প্রশ্নের উত্তর ব্যাখ্যা  দিতে এসেছি। আমরা একটি বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছি।”

“তদন্ত প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতায় কেউ কেউ হতাশ হলেও আমরা আশা করি এই অপেক্ষার ফল ভালো হবে”, বলেন তিনি।

রাখাইনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল রোহিঙ্গাদের ঘর

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তদন্তের অনুমতি পাওয়া গেলে বাংলাদেশ থেকে তাদের  ‘প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা’  দেওয়া হবে বলে আশা করছেন তারা।

১৯৯৭ সালে ১৭ জুলাই রোম সংবিধি গৃহিত হওয়ার পর ১২০টি দেশের স্বীকৃতি নিয়ে ২০০২ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যক্রম শুরু করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত।  গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের মতো ঘটনায় দোষীদের অভিযুক্ত করে থাকে এই আদালত।

বাংলাদেশ আইসিসির সদস্যভুক্ত রাষ্ট্র হলেও মিয়ানমার এর সদস্য নয়।

তবে  আইসিসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মিয়ানমার সদস্য রাষ্ট্র না হলেও রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের ঘটনার বিচারে কোনো সমস্যা হবে না।

এ প্রসঙ্গে আইসিসির ডেপুটি প্রসিকিউটর জেমস স্টুয়ার্ট বলেন, “এটা বিশ্বাস করার মত যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, মর্মান্তিকভাবে অধিকার খর্ব করে ৭ লাখ রোহিঙ্গাদের নির্বাসিত করা হয়েছে।  নিবিড়ভাবে এই ঘটনা পর্যযবেক্ষণ করলে বোঝা যায়, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ছাড়া রোহিঙ্গাদের আর কোনো পথ ছিল না।”

তিনি বলেন, “আমাদের পদক্ষেপ সম্পূর্ণই আইনগত। এই বিচার প্রক্রিয়ায় আইসিসির রাজনৈতিক কোনো উদ্দেশ্যে নেই।”

স্টুয়ার্ট আগামী শুক্রবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাবেন।