রূপপুরের ঘটনা দিয়ে পুরো ব্যবস্থার বিচার ঠিক হবে না: পূর্তমন্ত্রী

রূপপুরে পারমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মীদের আবাসনের সরঞ্জাম ক্রয়ে দুর্নীতির ঘটনা গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করলেও একটি ঘটনা দিয়েই পুরো ব্যবস্থাকে বিচার করা সঠিক হবে না বলে মন্তব্য করেছেন মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 July 2019, 08:19 AM
Updated : 18 July 2019, 08:24 AM

বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচার গণপূর্ত অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে মাঠ পর্যায়ের প্রকৌশলীদের বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।

প্রশ্নবিদ্ধ কাজ করে বিভাগের ভাবমূর্তি নষ্ট না করতে ‘অতিলোভী প্রকৌশলীদের’ সতর্ক করেন গণপূর্তমন্ত্রী।

রেজাউল বলেন, “দুই-একজন কর্মকর্তার কারণে কোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে। রূপপুরের ঘটনা গণপূর্তের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।তবে একটি ঘটনা দিয়েই পুরো অবস্থার বিচার করলে সঠিক হবে না।”

ফাইল ছবি

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প এলাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার জন্য নির্মাণাধীন গ্রিন সিটি আবাসন পল্লীর নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনা ও তা বহুতল ভবনে উঠাতে অনিয়ম নিয়ে গত ১৬ মে একটি দৈনিক পত্রিকা ‘কেনা-তোলায় এত ঝাঁজ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্পের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের থাকার জন্য গ্রিন সিটি আবাসন পল্লীতে ২০ তলা ১১টি ও ১৬ তলা আটটি ভবন হচ্ছে। এরই মধ্যে ২০ তলা আটটি ও ১৬ তলা একটি ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। ২০ তলা ভবনের প্রতিটি ফ্ল্যাটের জন্য প্রতিটি বালিশ কিনতে খরচ দেখানো হয়েছে পাঁচ হাজার ৯৫৭ টাকা। আর ভবনে বালিশ ওঠাতে খরচ দেখানো হয়েছে ৭৬০ টাকা।

প্রতিটি রেফ্রিজারেটর কেনার খরচ দেখানো হয়েছে ৯৪ হাজার ২৫০ টাকা। রেফ্রিজারেটর ভবনে ওঠাতে খরচ দেখানো হয়েছে ১২ হাজার ৫২১ টাকা। একেকটি খাট কেনা দেখানো হয়েছে ৪৩ হাজার ৩৫৭ টাকা। আর খাট ওপরে ওঠাতে খরচ দেখানো হয়েছে ১০ হাজার ৭৭৩ টাকা।

প্রতিটি টেলিভিশন কেনায় খরচ দেখানো হয়েছে ৮৬ হাজার ৯৭০ টাকা। আর টেলিভিশন ওপরে ওঠাতে দেখানো হয়েছে ৭ হাজার ৬৩৮ টাকার খরচ। বিছানার খরচ ৫ হাজার ৯৮৬ টাকা দেখানো হয়েছে; তা ভবনে তুলতে খরচ দেখানো হয়েছে ৯৩১ টাকা। প্রতিটি ওয়ারড্রোব কিনতে খরচ দেখানো হয়েছে ৫৯ হাজার ৮৫৮ টাকা।

আর তা ওঠাতে দেখানো হয়েছে ১৭ হাজার ৪৯৯ টাকার খরচ। এরকম বৈদ্যুতিক চুলা, বৈদ্যুতিক কেটলি, রুম পরিষ্কারের মেশিন, ইলেকট্রিক আয়রন, মাইক্রোওয়েভ ইত্যাদি কেনাকাটা ও ভবনে তুলতে অস্বাভাবিক খরচ দেখানো হয়েছে।

মালামাল কেনা ও ভবনের ওঠানোর অস্বাভাবিক খরচের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলমকে প্রত্যাহার করে সরকার বলেছে, তিনি এক সময় ছাত্রদল করতেন। এঘটনায় উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদনও বিচারাধীন রয়েছে।

অনুষ্ঠানে গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, “আমাদের এই ডিপার্টমেন্টে অধিকাংশ কর্মকর্তা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। কেউ কেউ অতিলোভী হয়ে গোটা ডিপার্টমেন্টের ভাবমূর্তি নষ্ট করার প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন।”

তবে মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে গণপূর্তের কর্মীরা হয়রানির শিকার হলে তাদের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক রেজাউল।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. সাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার।