প্রাইভেটে এক মাসে হলে এখানে ফল ৭ মাসে কেন: প্রশ্ন ঢাবি ছাত্রের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদেও ‘সাপ্লিমেন্টারি’ পরীক্ষার সুযোগ দাবিতে এক কর্মসূচিতে শিক্ষকদের কঠোর সমালোচনা করেছেন শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 July 2019, 03:18 PM
Updated : 17 July 2019, 03:18 PM

এই শিক্ষকদের অনেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে এক মাসের মধ্যে তাদের বার্ষিক সমাপনী পরীক্ষার ফল দিতে পারলে এখানে কেন সাত মাস লাগছে, সে প্রশ্ন তুলেছেন গণিত বিভাগের এক শিক্ষার্থী।

আর ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস শিক্ষকদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর পাশাপাশি রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার প্রসঙ্গও তুলেছেন।

সাত মাস পর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ফল প্রকাশে অকৃতকার্য ৭০ শিক্ষার্থীর পুনরায় ভর্তি হয়ে আবার এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ও প্রস্তুতি নেওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে বুধবার টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে ‘সাপ্লিমেন্টারি’ পরীক্ষা চালুর দাবিতে এই মানববন্ধন হয়।

গণিত বিভাগ ছাড়াও বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন ও পরিসংখ্যানের শতাধিক শিক্ষার্থী এই কর্মসূচিতে অংশ নেন।

সমাবেশে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, জীববিজ্ঞান অনুষদ, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদসহ অন্যান্য অনুষদে ‘সাপ্লিমেন্টারি’ পরীক্ষা পদ্ধতি থাকলেও বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীরা এই সুযোগ পান না। এরপর আবার অনেক বিভাগে ফলাফল দিতেও বিলম্ব করে। এর ফলে এই অনুষদের অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের পুনঃভর্তির প্রক্রিয়ায় যেতে হয়, যাতে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েন।

সমাবেশে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল ছাত্র সংসদের ভিপি ও গণিত বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী হুসাইন আহমেদ সোহান বলেন, “দীর্ঘ দিন ধরে বিজ্ঞান অনুষদের এই বিভাগগুলোতে শিক্ষার্থীদের রিএ্যাডমিশনের চক্র চলছে। কিন্তু প্রশাসন এই সমস্যা কমিয়ে আনার জন্য কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। আমাদের গণিত বিভাগের শিক্ষকরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে এক মাসের মধ্যে তাদের ফাইনাল পরীক্ষার রেজাল্ট দিতে পারে, কিন্তু আমাদের এইখানে কেন সাত মাস সময় লাগবে?”

এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের এই অবস্থানে এসে তাদের দাবির প্রতি সংহতি জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মো. ফয়েজ উল্লাহ।

সনজিত দাস বলেন, “আমরা মনে করি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নিয়ম-কানুন হবে শিক্ষার্থীবান্ধব এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা যেন তাদের জীবনের সামনের ধাপগুলো পরিপূর্ণভাবে এগিয়ে যেতে পারে-এটিই এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা প্রত্যাশা করে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর যখন শিক্ষকদের অবহেলা বা প্রশাসনিক জটিলতার জালে আটকা পড়ে যখন অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীর জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে তখন সেই শিক্ষার্থী যে মানসিক হতাশার মধ্যে পড়ে এটিই খুবই লজ্জাজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।”

তিনি বলেন, “আমরা এই রকম বিজ্ঞান অনুষদ চাইনি যেখানে পরীক্ষা নেওয়ার নামে ছাত্রদের নির্যাতন করার মাধ্যমে, তাদের ফেইল করার মাধ্যমে শিক্ষকরা তাদের কৃতিত্ব দেখায়। আমরা এটার ধিক্কার জানাই। আপনারা জাতির কারিগর। আপনারা এমন কিছু করে দেখান যেটির মাধ্যমে সারা বিশ্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বাহবা দেবে।

“আপনারা শিক্ষকরা রাজনীতি করবেন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে কঠিন কঠিন পরীক্ষা নেওয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ফেইল করিয়ে আপনারা নিজেদের কৃতিত্ব দেখাবেন- এটি খুবই হতাশাজনক বিষয়।”

গণিত বিভাগের ফল প্রকাশে সাত মাস লাগার কারণ জানতে চেয়ে সাদ্দাম হোসেন বলেন, “বিজ্ঞান অনুষদ আরও বেশি আধুনিক, আরও বেশি ডিজিটাল হওয়ার কথা ছিল, আরও বেশি নিয়মতান্ত্রিক হওয়ার কথা ছিল, কেন তাদের ফলাফল প্রকাশে সাত মাস বিলম্ব হবে সেটি সেই অনুষদের সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান, সংশ্লিষ্ট ডিনকে অবশ্যই জবাব দিতে হবে।”

ফয়েজ উল্লাহ বলেন, “বিজ্ঞান অনুষদে সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা দেওয়ার নিয়মটি আগে ছিল। কিন্তু বিগত পাঁচ বছর ধরে এখানে নিয়ম করা হয়েছে যে, কোনো পরীক্ষার্থী ফেইল করলে তাকে পুনরায় ৬ সপ্তাহের মধ্যে ১২ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে ভর্তি হতে হবে। এই ধরনের অগণতান্ত্রিক ও শিক্ষার্থী অবান্ধব সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কীভাবে নেয় সেটা আমাদের বোধগম্য নয়।”

দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান করে শিক্ষার্থীরা মৌন মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের কাছে স্মারকলিপি দেন।