জাপা নেতা আলমগীর লোটনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা

জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্য আলমগীর সিকদার লোটনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে ঢাকার আদালতে মামলা করেছেন এক তরুণী।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 July 2019, 02:11 PM
Updated : 16 July 2019, 02:42 PM

৩২ বছর বয়সী ওই নারী ১১ জুলাই ঢাকার এক নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলাটি দায়ের করলেও মঙ্গলবার তার দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের দাফনের দিন খবরটি গণমাধ্যমের কাছে আসে।

বিচারক আবু নাসের মো. জাহাঙ্গীর আলম তার অভিযোগ শুনে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমকে বিচার বিভাগীয় তদন্ত শেষে ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেন বলে বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট কাজী হুমায়ুন কবির জানিয়েছেন।

তবে মঙ্গলবারও ট্রাইব্যুনাল থেকে মামলার নথিপত্র ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে পাঠানো হয়নি।

আইনজীবী হুমায়ুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অভিযোগের সঙ্গে অনেকগুলো স্থিরচিত্র ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হয়েছে, যা সঙ্গতিপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে। কতগুলো ভিডিওচিত্র রয়েছে, যা ট্রাইবুনালে সময়মতো জমা দেওয়া হবে।

“প্রথমে এরকম একজন বয়োঃজ্যেষ্ঠ ব্যক্তির বিরুদ্ধে আমি মামলা করতে চাইনি। কিন্তু ঘটনা সত্য মনে হওয়াতে আমি বাদীর পক্ষে মামলা করেছি। বিচার বিভাগীয় তদন্তে কী বেরিয়ে আসে দেখা যাক।”

ঢাকার বাংলাবাজারে পুস্তক ব্যবসায়ী লোটন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির গত কমিটিতে সভাপতি ছিলেন। তিনি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যাশনাল বুক সেন্টারের (জাতীয় গ্রন্থ সংস্থা) পরিচালনা পষর্দেরও সদস্য।

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির অপর একটি গ্রুপ রাজনৈতিকভাবে ঈর্ষান্বিত হয়ে ওই নারীকে দিয়ে তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করিয়েছেন।

জাতীয় পার্টির যুগ্ম-মহাসচিব লোটনকে গত ৯ মেতে আরও সাতজনের সঙ্গে পদোন্নতি দিয়ে সভাপতিমণ্ডলীতে অন্তর্ভুক্ত করেন এরশাদ। এর আগে এরশাদের ভাই জিএম কাদের ও তার স্ত্রী রওশন এরশাদের মধ্যে জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব নিয়ে বিদ্যমান দ্বন্দ্বের মধ্যে লোটনকে দলীয় বিভিন্ন সভায় জি এম কাদেরের পক্ষে কথা বলতে দেখা যায়।

এর আগে জানুয়ারিতে এরশাদ চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে গেলে জি এম কাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বভার গ্রহণের পর ‘রওশনপন্থি’ বলে পরিচিত নেতারা নাখোশ মনোভাব দেখান বিভিন্ন সভায়।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামি লোটন ‘সিকদার অ্যান্ড পাবলিকেশন’ ও ‘আকাশ পাবলিকেশনের’ মালিক। অন্যদিকে বাদী একজন লেখিকা হওয়ায় আসামির সঙ্গে পরিচয় হয়। আসামি লোটনের ‘সংগঠক ও সংগঠন’ রাজনৈতিক বইটি লিখতে সঙ্গে বাদী তার সহকারী লেখিকা হিসেবে কাজ করেন। পরে আসামির প্রতিষ্ঠান ‘আকাশ পাবলিকেশন’ থেকে প্রকাশিত ‘সময়ের আয়নায় পল্লীবন্ধু’ ছবি অ্যালবামের নির্দেশনা ও অঙ্গসজ্জা হিসেবেও বাদী কাজ করেন।

“ওই কাজের জন্য বাদী আসামির সঙ্গে নিয়মিত দেখা করতেন। তখন আসামি বাদীকে প্রায়ই ইভটিজিংমূলক কথাবার্তা বলতেন। আসামি বাবার বয়সী ভেবে বাদী বিষয়টি এড়িয়ে যেতেন। এছাড়া আসামি বিভিন্ন সময় ফোনে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ম্যাসেঞ্জারে বাদীর কাছে নোংরা ছবি পাঠাতেন এবং ভিডিও কলে নোংরা প্রস্তাব দিতেন। কাজের প্রয়োজনে আসামির কাছে যেতে হতো বলে বাদী কঠোর প্রতিবাদ করতে পারতেন না।”

মামলায় বলা হয়, চলতি বছর ১ জানুয়ারি আসামির জন্মদিনে তার অনুরোধে বাদী রাজধানীর কোতয়ালী থানার বিউটি বোর্ডিংয়ে যান। সেখানে কেক কাটার পর আসামি বাদীকে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে গাড়িতে তুলেন। পথে ড্রাইভার ও তার সহযোগীদের গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে রাত ৯টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার একটি নিরিবিলি জায়গায় থেমে গাড়িতেই বাদীকে ধর্ষণ করেন। মোবাইল ফোনে ধর্ষণের ছবি ও ভিডিওধারণ করেন। বিষয়টি কাউকে জানালে ছবি ও ভিডিও ফেইসবুকে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে পরে তাকে বাসায় পৌঁছে দেন।

“আসামির কাছে নোংরা ছবি ও ভিডিও থাকায় সে বাদীকে ব্ল্যাকমেইল করে। এরপর বিভিন্ন সময় আসামির পাবলিকেশন হাউজ ও বিউটি বোডিংয়ে একাধিকবার বাদীকে ধর্ষণ করেন। সর্বশেষ আসামি বাদীকে বিয়ে করবেন বলে ডেকে এনে গত ৩০ জুন ১২টা থেকে ২টার মধ্যে বিউটি বোডিংয়ের দোতলার একটি কক্ষে ধর্ষণ করেন।”