ধান সংগ্রহ কার্যক্রম জোরদারে ডিসিদের নির্দেশ

কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 July 2019, 07:51 AM
Updated : 16 July 2019, 07:55 AM

মঙ্গলবার সচিবালয়ে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের তৃতীয় দিনের প্রথম অধিবেশন শেষে খাদ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের সভাপতিত্বে খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের এ কার্যঅধিবেশন হয়।

এবারের বোরো মৌসুমে ধানের ভাল ফলন হলেও কৃষকরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। ধান কাটার শ্রমিকের অভাব এবং ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার কারণে বিভিন্ন এলাকায় ধান ক্ষেতে কৃষকের আগুন লাগানোর ঘটনা সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা হচ্ছে বলে এর আগেও জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী।

এবার বোরো মওসুমে চার লাখ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের।

মঙ্গলবার ডিসিদের সঙ্গে আলোচনার পর খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র বলেন, “এবার চার লাখ টন ধান কিনব, গতকাল পর্যন্ত এক লাখ ১৫ হাজার টন ধান কেনা হয়েছে। ওনারা (ডিসিরা) সাহায্য করছেন, সেটা আরও জোরদার করার জন্য এবং আমাদের লোকেরা যাতে আরও বেশি অ্যাকটিভ হয়, ডিসি সাহেবরা যাতে নির্বাহী অফিসারদের মাঠে নামিয়ে দিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনতে পারে, সেজন্য আমরা নির্দেশনা দিয়েছি।”

প্রত্যেক জেলায় নিরাপদ খাদ্যের অফিস হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “মানুষ যাতে ভেজালমুক্ত খাবার গ্রহণ করতে পারে, সেজন্য তাদের আরও কঠোর হওয়ার জন্য আমরা নির্দেশ দিয়েছি।”

বন্যায় খাদ্য সংকটের আশঙ্কা আছে কিনা জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাদের খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। খাদ্য গুদামে শুধু খাদ্যই নয়, ত্রাণও পর্যাপ্ত মজুদ আছে। যেকোনো অবস্থা মোকাবেলা করতে আমরা প্রস্তুত আছি।

“এখন ফসল নষ্ট হওয়ার কোনো অবকাশ নেই, মাঠে কোনো ফসল নেই। এখন ধান লাগানোর সময়।”

র্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান

প্রধানমন্ত্রীর কন্যার নকশায় নৌকা

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, গৃহহীনদের জন্য দুর্যোগ সহনীয় ঘর তৈরির কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

“প্রথম ধাপে ১১ হাজার ৬০৪টি ঘর নির্মাণ শুরু করেছি। এই অর্থবছরে ২৩ হাজার ঘর করার জন্য বরাদ্দ দিয়েছি।”

এবারের বর্ষায় এরইমধ্যে দেশের ১৫ জেলায় ১১ লাখ বানভাসি মানুষের তথ্য সোমবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

বন্যাদুর্গত মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানোর জন্য ডিসিরা নৌকার প্রস্তাব দিয়েছেন জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “নৌকার জন্য এক লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলাম, উনারা তিন লাখ টাকা চেয়েছেন। আমরা সেই প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছি।”

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা হোসেন আমাদের একটি প্রস্তাব দিয়েছেন, একটি ডিজাইন দিয়েছেন, এসটিমেট দিয়েছেন ১০ লাখ টাকার একটি নৌকা, যে নৌকায় বন্যাকবলিত জনগণ তাদের মালামাল এমনকি ঘর পর্যন্ত অন্য জায়গায় সরিয়ে নিতে পারবে, সেই প্রকল্প আমরা গ্রহণ করেছি।”  

বজ্রপাতে মৃত্যু ঠেকাতে বজ্রপাত নিরোধক টাওয়ার বসানোর প্রস্তাব ডিসিদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

“প্রতি বজ্রনিরোধক টাওয়ারের মূল্য পেয়েছি সর্বনিম্ন প্রায় সাড়ে সাত লাখ টাকা। আমরা চেষ্টা করছি আরও কম মূল্যে পাওয়ার।”

গতকাল পর্যন্ত ২০টি জেলা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “বন্যা কবলিত প্রত্যেক জেলায় এ পর্যন্ত ৭০০ মেট্রিক টন চাল, ১১ আইটেমের চার হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। প্রথমে দুই কোটি ৯৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলাম গতকাল আরও ৩৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছি।”

পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক

বন্যায় বাঁধ ঠেকাতে জরুরি কাজ চলছে

সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন শেষে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বন্যায় বাঁধ ভাঙনের বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “পাশ্বর্বর্তী দেশে যে বৃষ্টি হচ্ছে, বৃষ্টির পানি নেমে আসছে বাংলাদেশে, ধাবিত হচ্ছে পানিগুলো। পানির পরিমাণ এতো বেশি আমাদের নরমাল যে বাঁধ আছে এই বাঁধে কিন্তু ঠেকানো যাবে না।”

বাঁধ রক্ষায় প্রকৌশলীরা দিনরাত কাজ করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “যেখানে ভাঙনের প্রবণতা হচ্ছে সেখানে ইমার্জেন্সি কাজ করে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছি।”

বাঁধ ভাঙন রোধে স্থায়ী কোনো সমাধান আসছে কিনা জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমাদের নদীগুলো অনেক বড়। বড় বড় নদীগুলোকে আমরা ড্রেজিং করব। যেটা ৮-১০ কিলোমিটার চওড়া নদী সেটাকে আমরা ৪-৫ কিলোমিটারে নিয়ে আসব। এটাকে রেগুলার মেইনটেন্যান্স করব।”

“ড্রেজিং করা মাটি ৪-৫ কিলোমিটার বাইরে ফেললে কাল্টিভেশন ল্যান্ড হবে। ওখানে ফসলের জমি হবে। নদীটা ছোট হয়ে আসল, নাব্যতা থাকবে তখন। তখন কিন্তু এটার প্রকোপটা কমে আসবে,” বলেন জাহিদ ফারুক।