বুড়িগঙ্গা দূষণ রোধের অসম্পূর্ণ প্রতিবেদন নেয়নি আদালত

আগের রায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী বুড়িগঙ্গার পানি দূষণ রোধে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং তাতে কী কী উন্নয়ন ঘটেছে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের দেওয়া প্রতিবেদন গ্রহণ করেনি হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 July 2019, 03:38 PM
Updated : 15 July 2019, 03:39 PM

চারটি প্রতিবেদনের কোনোটিতে আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়নের বিষয়ে কিছু ছিল না বলে বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার সেগুলো গ্রহণ করেনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবী।

ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিআইডব্লিটিএর চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (পোর্ট অ্যান্ড ট্রাফিক) ও ঢাকার জেলা প্রশাসককে এক সপ্তাহের মধ্যে রায় বাস্তবায়নের পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে আবার প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে এ বিষয়ে শুনানি করেন মনজিল মোরসেদ। ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পক্ষে শুনানি করেন এম এ মাসুম, বিআইডব্লিউটিএর পরিচালকের (পোর্ট অ্যান্ড ট্রাফিক) পক্ষে শুনানিতে ছিলেন মাহফুজুর রহমান এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন নাজমুল হক।

মনজিল মোরসেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বুড়িগঙ্গার পানি দূষণ নিয়ে রিট আবেদনে ২০১১ সালে হাই কোর্ট রায় দিয়ে বলেছিল, বুড়িগঙ্গায় বর্জ্য ফেলা যাবে না এবং সুয়ারেজ লাইনগুলো সিল করে দিতে হবে।

“ওয়াসাসহ সবাইকে নির্দেশ দিয়েছিল। রায়টি বাস্তবায়ন না হওয়ায় আমরা একটি আবেদন করেছিলাম, তখন গত ২ মে হাই কোর্টের রায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী বুড়িগঙ্গার পানি দূষণ রোধে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, আদৌ নেওয়া হয়েছে কি না এবং নিয়ে থাকলে কী কী উন্নয়ন ঘটেছে, সে বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলেছিল।”

ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিআইডব্লিটিএর চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (পোর্ট অ্যান্ড ট্রাফিক), ঢাকার জেলা প্রশাসক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ, লালবাগ, ডেমরা ও কোতোয়ালি থানার ওসিকে আদেশ পাওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছিল আদালত।

সে অনুযায়ী ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিআইডব্লিটিএর চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ঢাকার জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে চারটি প্রতিবেদন জমা পড়ে আদালতে।

 মনজিল মোরসেদ বলেন, “আদালত কোনোটিই গ্রহণ করেনি। কারণ আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়নের বিষয়ে প্রতিবেদনে কিছু ছিল না। আদালত এক সপ্তাহ সময় দিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে রায় বাস্তবায়নের বিষয়ে পদক্ষেপগুলো লিখিতভাবে জানাতে বলেছে।”

আগামী মঙ্গলবার পরবর্তী আদেশের জন্য আবেদনটি রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।

বুড়িগঙ্গায় বর্জ্য ফেলা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে তিন দফা নির্দেশনা দিয়ে ২০১১ সালের ১ জুন রায় দেয় হাই কোর্ট।

বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানকে প্রতি মাসে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়।

আদালত রায়ে বলেছিল, এ ব্যাপারে গাফিলতি হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

২০১০ সালে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের রিট আবেদনে ওই রায় হয়েছিল।

রায়ে নির্দেশনা ছিল

>> বুড়িগঙ্গায় সংযুক্ত সব পয়ঃপ্রণালির লাইন (সুয়ারেজ) ও শিল্পকারখানার বর্জ্য নিঃসরণের লাইন এক বছরের মধ্যে বন্ধ করতে ওয়াসার চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

>> প্রতি মাসে নদীতে বর্জ্য ফেলা রোধে নদীর দুই পারে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান করতে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

>> বিশেষ দলের মাধ্যমে নদীতীরের বর্জ্য অপসারণের নির্দেশ দিয়ে বলা হয়, নদীতীরে সিটি করপোরেশনের কোনো ভ্যান বা গাড়ি ময়লা ফেলতে পারবে না। একই সঙ্গে নদী-তীরবর্তী এলাকায় সাইনবোর্ড ও প্ল্যাকার্ড স্থাপন করতে হবে, যাতে আদালতের রায় সম্পর্কে জনগণ জানতে পারে।