রাষ্ট্রপতির ক্ষমার পরও গ্রেপ্তার, মুক্তি মিলছে ১০ বছর পর

রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় মুক্তির পরও গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় ১০ বছর কারাভোগের পর মুক্তি পেতে যাচ্ছেন একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত জামালপুরের আজমত আলী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 July 2019, 01:51 PM
Updated : 15 July 2019, 02:37 PM

যাবজ্জীবন সাজার রায় পুনর্বিবেচনার চেয়ে তার পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির করা আবেদনের নিষ্পত্তি করে গত ২৭ জুন আপিল বিভাগ রায় দেয়।

ওই আদেশের ভিত্তিতে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে মুক্তি দিতে সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. আবু তাহের নির্দেশনা পাঠিয়েছেন।

বিশেষ ডাকযোগে নির্দেশনাটি জামালপুরের দায়রা জজ আদালত ও জেল কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন  সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির সমন্বয়ক রিপন পৌল স্কু।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সোমবার দুপুরে বিশেষ ডাকযোগে আদেশটি পাঠানো হয়েছে। কাল মুক্তি পেতে পারেন।”

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার তারাকান্দি এলাকার পাখিমারা গ্রামের ইজ্জত উল্ল্যা সর্দারের ছেলে আজমত আলী টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার ঘোড়ামারা এলাকার ভেঙ্গুলা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন।

১৯৮৭ সালের ১ এপ্রিল জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে তার এলাকার কলিম উদ্দিনের ছেলে রেজাউল করিম নিহত হন। ওই ঘটনায় আজমতকে আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়। এ মামলায় ১৯৮৯ সালের ৮ মার্চ জামালপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালত তাকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়।

বিচারিক আদালতের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করেন আজমত। সেই আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমায় ১৯৯৬ সালের ২১ আগস্ট জামালপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।

পরে ২০০৫ সালের ২ মার্চ হাই কোর্টের রায়েও হত্যার অভিযোগ থেকে খালাস পান আজমত আলী। হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ, যার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ২০০৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি আসামিকে (আজমত আলী) নিম্ন আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেয়।

হাজির না হলে ২০০৯ সালের ২৯ অক্টোবর গ্রামের বাড়ি থেকে আজমতকে গ্রেপ্তার করে নিম্ন আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। সেই থেকে তিনি কারাবন্দি।

২০১০ সালের ১১ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের আপিলে হাই কোর্টের রায় (খালাস) বাতিল করে বিচারিক আদালতের রায় (যাবজ্জীবন) বহাল রাখা হয়।

রিপন বলেন, গত বছর ১৪ অক্টোবর আজমত আলীর মেয়ে বিউটি খাতুন তার বাবার বিষয়ে আইনি সহায়তা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে লিগ্যাল এইডে আবেদন করেন। পরে সে আবেদন পর্যালোচনা করে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যানের নির্দেশে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

“সে আবেদনের শুনানিতে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিষয়টি উঠে আসলে আদালত এ রায় দেন।”

সোমবার সে রায়ের সত্যায়িত অনুলপি ও সুপ্রিম কোর্টের সহকারী রেজিষ্ট্রার মো. আবু তাহেরের এ সংক্রান্ত নির্দেশনা বিশেষ ডাকযোগে জামালপুরের দায়রা জজ আদালত ও জেল কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।

পুনর্বিবেচনার রায়ে বলা হয়ছে, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতির ক্ষমার পর ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ (১) ধারা অনুযায়ী তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। পরে আবার জেলে পাঠানো অন্যায্য ও দুর্ভাগ্যজনক। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজমত আলীকে তাৎক্ষণিকভাবে মুক্তি দেওয়া হোক এবং তার পুনর্বিবেচনার অবেনটি নিষ্পত্তি করা হলো।’

রাষ্ট্রপতির ক্ষমার পরও আজমতের গ্রেপ্তার হয়ে আবার কারাভোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে রিপন বলেন, “রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমায় যে আজমত আলী মুক্তি পেয়েছেন, এ বিষয়টা তিনি বা তার পরিবার বা তার আইনজীবী রাষ্ট্রপক্ষকে জানায়নি। জানলে হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষও নিশ্চই আপিল করতেন না, আদালতও হয়তো এই আদেশ দিতেন না।”

আপিল বিভাগে আজমত আলীর পুনর্বিচেনার আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন।