নদ-নদীর পানি বৃদ্ধিতে বন্যার অবনতির শঙ্কা

ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণে দেশের অধিকাংশ নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 July 2019, 07:08 PM
Updated : 13 July 2019, 08:38 PM

নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, জামালপুর ও গাইবান্ধার কয়েক লাখ পরিবার এরইমধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকায় আগামী চব্বিশ ঘণ্টায় এসব জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ১৫টি নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছিল। আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি আরও বাড়তে পারে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, শনিবার সুরমা ও কুশিয়ারার তিনটি, মনু, সাঙ্গু, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি দুটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যায়।

এছাড়া ধলাই, খোয়াই, সোমেশ্বরী, কংস, হালদা, মাতামুহুরী, ধরলা, তিস্তা, ঘাগট নদীর পানিও একটি করে পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপরে অবস্থান করছে।

কয়েকদিনের বর্ষণে হাওর জেলা নেত্রকোণার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় বিপাকে পড়েছে মানুষ।

এসব নদীর মধ্যে আগামী ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে যমুনা নদী সারিয়াকান্দি ও কাজিপুরে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।

একই সময়ে সুরমা, কুশিয়ারা, কংস, সোমেশ্বরী, ফেনী, হালদা, মাতামুহুরী, সাঙ্গু ধরলাসহ প্রধান নদীগুলোর সমতলে পানি বাড়তে পারে।

বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং সংলগ্ন ভারতের সিকিম, পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল, আসাম ও মেঘালয় প্রদেশের অনেক এলাকায় আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতের বিহার ও নেপালের জন্যও একই পূর্বাভাস রয়েছে।

ভারী বৃষ্টিতে আসামের ৩৩টি জেলার মধ্যে ইতোমধ্যে ২৫টি বন্যা কবলিত হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৫ লাখেরও বেশি মানুষ।

এদিকে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বাংলাদেশের সাঙ্গু, হালদা ও কর্ণফুলী নদীতে পানি বেড়ে চট্টগ্রাম জেলার ১৪টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জেলার ১৬টি উপজেলার মধ্যে শুধু মিরসরাই ও সন্দ্বীপ উপজেলা কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কয়েকদিনের বর্ষণে হাওর জেলা নেত্রকোণার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় বিপাকে পড়েছে মানুষ।

অন্য ১৪ উপজেলার মধ্যে সাতকানিয়া, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি ও সীতাকুণ্ড উপজেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এসব উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি ৪২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৫১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন জানিয়েছেন।

পানি বৃদ্ধির কারণে সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি, চৌহালি, কাজিপুর ও শাহজাদপুর উপজেলার যমুনার চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পৌর এলাকার পুঠিয়াবাড়ি ও চরমালশাপাড়া এলাকায় বাঁধের নিচে বসবাসরত ঘর বাড়িতেও পানি ঢুকে পেড়েছে। নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে সিরাজগঞ্জ, কাজিপুর, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলায় ভাঙছে নদী।

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের রামপাশা এলাকায় ধলাই নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পেড়েছে কয়েকটি গ্রামে।

কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদ হাসান সিদ্দিকী জানান, যমুনায় পানি বাড়লেও এখনও চরাঞ্চলের ঘরবাড়িতে প্রবেশ করেনি। তবে বাঐখোলা এলাকায় ভাঙন রয়েছে। ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে।

বগুড়ায় পাউবোর নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান মাহমুদ জানিয়েছেন, যমুনার পানি সারিয়াকান্দি ও ধুনট পয়েন্টে বিপৎসীমার তিন সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সারিয়াকান্দি উপজেলার কাজলা, ধারাবর্ষা, বোহাইল, আওলাকান্দি ও ধুনট উপজেলার বৈশাখী চরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে।

শনিবার দুপুরে সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি ষোলঘর পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছিল। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বক্কর ছিদ্দীকি ভূইয়া জানান, শুক্রবার সকালে সুরমার পানি ৯৮ সেন্টিমিটার ওপর প্রবাহিত হলেও শনিবার তা কমে দাঁড়ায় ৮৬ সেন্টিমিটারে। সুরমার পানি কমে যাওয়ায় অনেক স্থানে ধীর গতিতে পানি নামছে।

কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বেড়ে প্লাবিত হয়েছে কয়েকটি গ্রাম।

জামালপুরেও যমুনা নদীর পানি বেড়েই চলেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের আব্দুল মান্নান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে ৫৩ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলার ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় যমুনা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। এছাড়া দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার খোলাবাড়ি ও বড়খাল এলাকায় দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন।

বৃষ্টিতে নেত্রকোণায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সোমেশ্বরী, উব্ধাখালি ও কংস নদীর পানি।

টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সাঙ্গু নদীতে পানি বেড়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক প্লাবিত। ছবিটি চন্দনাইশ বৈলতলী এলাকার।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আক্তারুজ্জামান জানান, শনিবার উব্ধাখালি নদীর পানি বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। সোমেশ্বরী ও কংসের পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, জেলার ছোট-বড় ১৬টি নদ-নদীর মধ্যে শনিবার দুপুরে ধরলার পানি বিপৎসীমার ৫২ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের পানি ৩৯ সেন্টিমিটার, তিস্তার পানি ৯ সেন্টিমিটার ও দুধকুমার নদীর পানি বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।