ঢাবির গণিত বিভাগের ফল প্রকাশে বিলম্বে বিপাকে অনুত্তীর্ণরা

দুই মাসের মধ্যে পরীক্ষার ফল প্রকাশের নিয়ম থাকলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের ফল প্রকাশে লেগেছে সাত মাস।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 July 2019, 05:10 PM
Updated : 12 July 2019, 05:14 PM

এখন অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের আবার এই পরীক্ষায় বসতে হলে পুনরায় ভর্তি হয়ে নতুনদের সঙ্গে ক্লাস ও ইনকোর্স পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। তবে সেজন্য তাদের হাতে সময় আছে মাত্র দেড় মাস।

এই অল্প সময়ে সব কার্যক্রম শেষ করে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারবেন কি না তা নিয়ে হতাশায় রয়েছেন অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা।

বুধবার মোবাইলে যোগাযোগ করে শিক্ষার্থীদের সমস্যার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়েছিল গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. অমল কৃষ্ণ হালদারের সঙ্গে। কিন্তু কোনো কথা বলতে রাজি হননি এই অধ্যাপক।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি সাংবাদিকদের সাথে কোনো কথা বলি না।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের গণিত বিভাগের প্রথম বর্ষের লিখিত পরীক্ষা গত বছরের ৩১ অক্টোবর শুরু হয়ে ১৭ ডিসেম্বর শেষ হয়। এরপর ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয় গত ১৫ জানুয়ারি ও ২০ জানুয়ারি।

ওই পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয় গত ৮ জুলাই। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী মোট ১৮৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে কৃতকার্য হয় ১১৫ জন। অকৃতকার্য হয় ৭০ জন।

এরমধ্যে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের অনেকেই দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস-ইনকোর্স পরীক্ষা দিয়ে আসছেন গত জানুয়ারি থেকে। এখন অকৃতকার্য হওয়ার ফলে বিভাগের নিয়ম অনুযায়ী পুনঃভর্তি হয়ে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের সাথে ক্লাস-পরীক্ষা দিতে হবে।

শিক্ষার্থীদের ভাষ্যে, পুনঃভর্তি সংক্রান্ত জটিলতা পার করতেই প্রায় দুই মাস পার হয়ে যায়। এরপর ক্লাসে উপস্থিতির খাতায় নাম লেখানো এবং ইনকোর্স পরীক্ষা দিতে হয়।

এদিকে ফল প্রকাশের দেড় মাস পর অর্থ্যাৎ আগামী ২২ অগাস্ট ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করেছে গণিত বিভাগ। সে হিসাবে সব মিলিয়ে তাদের হাতে সময় আছে মাত্র দেড় মাস।

শিক্ষকদের রোষানলে পড়তে পারেন এমন আশঙ্কায় নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরেন কয়েকজন শিক্ষার্থী।

একজন শিক্ষার্থী বলেন, “পুনঃভর্তির জন্য একটা একাডেমিক কমিটির মিটিং লাগবে। এরপর ডিন স্যারের কাছে কাগজ যাবে, ভর্তির জন্য হল প্রাধ্যক্ষের কাছে কাগজ নিয়ে যেতে হবে, আবার ওইখান থেকে এসে ব্যাংকে ভর্তির ফি জমা দিতে হবে, তারপর রোল নম্বর পেতে হবে।

“আবার রোল নম্বর পাওয়ার জন্য দেখা যায় প্রায় এক মাস অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু আমাদের হাতে সেই সময় নেই। এর মধ্যে আবার ঈদের ছুটি আছে।”

সময়ের ঘাটতিতে ফের প্রথম বর্ষের পরীক্ষায় বসতে পারলেও আবার অকৃতকার্য হওয়ার আশঙ্কা করছেন আরেক শিক্ষার্থী।

তিনি বলেন, “এই সময়ের মধ্যেও কোনোভাবে হয়ত পুনঃভর্তি হলেও ক্লাস শুরু করা, মোট ১০টা কোর্সের ২০টা ইনকোর্স পরীক্ষা দেওয়া এবং সর্বোপরি ফাইনাল পরীক্ষার প্রস্তুতি এই সময়ের মধ্যে সম্ভব হবে না।

“এতে করে দেখা যাবে, যারা পুনঃভর্তি হবে তাদের অনেকের ফলাফল আবার অকৃতকার্যের তালিকায় আসবে।”

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, গণিত বিভাগের এই সমস্যাটি নতুন নয়।

“এভাবে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের পুনঃভর্তির এই দুষ্টচক্র চলতে থাকে এবং এর ফলে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে।”

এই পরিস্থিতিতে সম্পূরক বা বিশেষ পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে বিভাগীয় প্রধান এবং অনুষদের ডিনের কাছে স্বাক্ষরসহ আবেদন করে গণিত বিভাগের প্রায় সাড়ে চারশ শিক্ষার্থী।

আবেদনে বলা হয়, “আমরা যে বিষয়গুলোতে ফেল করেছি সেগুলোতে সম্পূরক পরীক্ষা জরিমানার মাধ্যমে হলেও দিতে চাই। যেমনটি এই সুযোগ পেয়ে থাকে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, জীববিজ্ঞান অনুষদ, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীরা।”

ফল প্রকাশে এই বিলম্বের জন্য কোনো জবাবদিহি না থাকায়ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কিছু শিক্ষার্থী।

তাদের একজন বলেন, “কিছু শিক্ষকের গাফিলাতির কারণেই দুই মাসের ফল সাত মাস পর প্রকাশ হয়েছে। অথচ এটার জন্য কোনো জবাবদিহি নেই।”

শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমদ চৌধুরী বলছেন, অকৃতকার্য হওয়া শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনোযোগ দেয়নি।

“শিক্ষার্থীরা এই বিষয়ে এসেছিল আমার কাছে। আমি বিষয়টি দেখছি। যারা ফেল করেছে তারা অনেকেই পুরনো। এরা হয়ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে টিউশনি করে বা অন্য কিছু করে সময় কাটিয়েছে। পড়াশোনায় মনোযোগ দেয়নি।

“আমি চেষ্টা করছি কোনো রিলিফ ওদের দেওয়া যায় কি না। আমাদের ফ্যাকাল্টির মিটিং আছে আগামী ১৭ জুলাই। এই মিটিংয়ে আমি বিষয়টি এজেন্ডাও করে রেখেছি।”

দেরিতে ফল প্রকাশের কারণ নিয়ে তিনি বলেন, “রেজাল্টের বিষয়ে শুধু গণিত বিভাগ নয়, অন্য বিভাগের শিক্ষকরাও জড়িত থাকে। কিন্তু দেরি হলেও এত দেরি হলো কেন আমরা এটা অনুসন্ধান করতেছি।”

শিক্ষার্থীদের সম্পূরক পরীক্ষার দাবির বিষয়ে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন বলেন, “শুধু সম্পূরক পরীক্ষা নয় আরও কিছু অপশন আছে, সেগুলোও আমি বিবেচনা করতে বিভাগীয় চেয়ারম্যানদের কাছে অনুরোধ করেছি।

“আমার সামনে শিক্ষার্থীরা নিজেরাও অনুষদের চেয়ারম্যানদের সাথে কথা বলেছেন। বিভাগীয় একাডেমিক কমিটিতে আলোচনা করে এই বিষয়ে তাদের মতামত জানিয়ে দেওয়ার জন্য আমি বলেছি। তারা মতামত দিলে আমি বিষয়টি ফ্যাকাল্টিতে জানাব এবং ফ্যাকাল্টির এজেন্ডার মধ্যে এটা আমি রাখছি।”

সম্পূরক পরীক্ষা দেওয়ার বিষয়ে অনুষদের কোনো নিয়ম নেই জানিয়ে ঢাবির এই শিক্ষক বলেন, “এখন সেই নিয়ম পরিবর্তন করতে গেলে আমি একা পারব না। সবার সম্পৃক্ততা থাকা লাগবে।”