মশা মারতে না পারলে সরে যান, বিক্ষোভে মেয়রদেরকে আহ্বান

রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার মধ্যে মশা নিধনে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রকে পদত্যাগ করার আহ্বান এসেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 July 2019, 02:10 PM
Updated : 12 July 2019, 03:26 PM

শুক্রবার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে গৌরব-৭১ নামের একটি সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে একদল নাগরিক এ আহ্বান জানান।

গাজী টিভি ও সারাবাংলা ডটনেটের প্রধান সম্পাদক ইশতিয়াক রেজা বলেন, “মেয়রদের যত কাজই থাকুক, এখন তাদের শুধু একটা কাজ তা হল ‘মশা মারা’। যদি এটি ঠিকমতো করতে না পারেন, তাহলে তাদের উচিত ব্যর্থতার দায় নিয়ে দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়া।”

ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার বিষয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন প্রকাশের পর সামাজিক সংগঠন সোচ্চার হলেও সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ তাতে গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন।

এই সাংবাদিক বলেন, “বিশেষ করে দক্ষিণের মেয়র, তিনি কথায় কথায় বলেন যে, ডেঙ্গু এমন কোনো বড় আকার নেয়নি যে সিটি করপোরেশনকে বিচলিত হতে হবে।”

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে ইশতিয়াক রেজা বলেন, “আমাদের অনুরোধ, আপনি এই দুই মেয়রকে জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড় করান। কারণ এই দুইজন আপনার সুনাম নষ্ট করছে। এ সরকার মানুষের মনে উন্নয়নের যে স্পৃহা তৈরি করেছে, সে উন্নয়নের স্পৃহাকে নষ্ট করে দিচ্ছে। আমরা এই দুই মেয়রের অপসারণ চাই যদি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে না আনে।”

পাঁচ দিন আগে এক সংবাদ সম্মেলনে ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি দাবি করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মেয়র সাঈদ খোকন জানান, এ বছর এখন পর্যন্ত দুই হাজার ১০০ মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। এবার ডেঙ্গুতে মাত্র দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ জুন পর্যন্ত ৪৮৬ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছিল, যাদের মধ্যে দুজন মারা যান। এরপরে আরও অন্তত তিনজনের মৃত্যুর বিষয়ে জানা গেছে, যাদের মধ্যে একজন চিকিৎসকও রয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ১০ হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়, যাদের মধ্যে ২৬ জনের মৃত্যু হয়।

মেয়রের ভাষ্যমতে, আক্রান্তদের ৯৮-৯৯ শতাংশের ‘ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু’ হচ্ছে, যা সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে চলে যায় এবং এতে তেমন ক্ষতির কারণ থাকে না।  

ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় মশা নিধনে নেমেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। শনিবার কাপ্তান বাজার এলাকায় মশার ওষুধ ছিটাতে দেখা গেল করপোরেশনের এক কর্মীকে। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, এবার ডেঙ্গু আগের চেয়ে অনেক বেশি মারাত্মক হয়ে এসেছে। দ্রুত হাসপাতালে না আনলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।

সমাবেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত এক শিশুর মা গুলশান আরা উর্মি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, জ্বর আসার হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই হাসপাতালে নিয়েছিলাম, কিন্তু বাঁচাতে পারিনি।

“মশার ভয়ে আমি সারা বছর কখনও ঘরের জানালা খুলি না। আর কীভাবে সচেতন হব? মেয়রদের প্রতি অনুরোধ, আর কোনো মায়ের কোল যেন খালি না হয়, আপনারা সেটি নিশ্চিত করুন।”

সমাবেশের উদ্যোক্তা এফ এম শাহিন মেয়রদের উদ্দেশ্যে বলেন, “ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এখনই যথাযথ ব্যবস্থা নিন, অন্যথায় আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনে বাধ্য হব। আমরা আজকে কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করছি না। তবে সমাধান না হলে আমরা আপনাদের কার্যালয় ঘেরাও করবো। আপনাদের কোটি টাকার গাড়িতে চলা বন্ধ করব।"

বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, গৌরব ৭১-এর সভাপতি এসএম মনিরুল ইসলাম, সাবেক ছাত্র নেতা কামরুজ্জামান খান, বাপ্পাদিত্য বসু, শাকিল আহমেদ ও ভুক্তভোগী নাগরিক আফিয়া চৌধুরীসহ অনেকে বক্তব্য দেন।