বৃহস্পতিবার বিলের ওপর জনমত যাচাইয়ের আলোচনায় জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বলেছেন, “তথ্যমন্ত্রী যতটা স্মার্ট, বিটিভি ততটাই আনস্মার্ট।”
এই সংসদ সদস্যের দাবি, বিটিভির মান ‘মোটেই ভাল নয়’। যেখানে অন্য চ্যানেল দেখা যায় না, সেখানকার মানুষই শুধু বিটিভি দেখে।
বিএনপির এমপি হারুনুর রশীদ বলেন, “দেশের চলচ্চিত্রের এখন চরম দুরবস্থা চলছে। একে একে সব সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে।”
আকাশ সংস্কৃতি এতটা উন্মূক্ত করে দেওয়া যৌক্তিক হয়েছে কি না- সেই প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “প্রতিবেশী দেশ ভারতের চ্যানেল এখানে দেখা গেলেও আমাদের টিভি চ্যানেলগুলো ভারত থেকে দেখা যায় না। প্রাইভেট টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে দলীয় আনুগত্য দেখে। ফলে এগুলোতে নিরপেক্ষ সংবাদ বা অনুষ্ঠান প্রচার হয় না। মানুষ তা দেখে না।”
বিএনপির আরেক সদস্য মোশাররফ হোসেন বলেন, বিটিভিতে বড় পরিবর্তন এনে একে যুগোপযোগী করে তোলা দরকার। রাষ্ট্রীয় এই গণমাধ্যম সবসময় সরকারি দলের সংবাদ প্রচার করে। বিরোধী দল ও তাদের বিষয়ে কোনো সংবাদ দেখতে পাওয়া যায় না।
গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, সরকারের কর্তা ব্যক্তিরাও বিটিভি দেখেন না। আগ্রাসন ও অপসংস্কৃতির ধাক্কায় দেশীয় চলচ্চিত্র ধ্বংসের মুখে।
বিলের সংশোধনী প্রস্তাবের আলোচনায় জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান জানান, বিটিভিসহ অন্য চ্যানেলগুলোতে সারাদিন সিনেমা চালানো হয়। এতে করে ছাত্র-ছাত্রী ও কিশোর-কিশোরীরা পড়াশোনা করতে চায় না। এমনকি তারা স্কুলেও যেতে চায় না।
বিটিভির অনুষ্ঠানের সমালোচনা করতে গিয়ে জাতীয় পার্টির আরেক সদস্য মজিবুল হক চুন্নু বলেন, “এই বিল পাস হলে দেশে ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণ হবে- এমন নিশ্চয়তা কি মন্ত্রী দিতে পারেন?”
তার অভিযোগ, বিটিভির অনুষ্ঠান ও সংবাদ পাঠ এমন সব লোককে দিয়ে করানো হয়, যা অন্য চ্যানেলের তুলনায় ‘মানসম্পন্ন নন’।
“বিটিভিতে চাকরি করেন এমন কর্মকর্তাদের আত্মীয়-স্বজনদের দিয়ে এসব অনুষ্ঠান করানো হয়। সংবাদ পড়ানোর জন্য বুড়া-ধুরা মহিলাদের দিয়ে কাজ চালানো হয়।“
সংসদ সদস্যদের সমালোচনার জবাবে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, “বয়স বেশি না কম; এটা কোনো কাজের মানদণ্ড হতে পারে না। কম বয়সী হলেই পারফরম্যান্স ভাল হবে এমন কোন কথা নেই।”
মজিবুল হক চুন্নুর ওই বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার জন্য অধিবেশনের সভাপতি ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার কাছে দাবি জানান মন্ত্রী।
বাংলাদেশে বিটিভির দর্শক এখনও সবচেয়ে বেশি- এমন দাবি করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “ভারতের সঙ্গে ইতোমধ্যে চুক্তি হয়েছে। শিগগিরই সারা ভারতবর্ষে বিটিভি দেখার সুযোগ তৈরি হচ্ছে।”
বিটিভির মানন্নোয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা সংসদের সামনে তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, “গত দশ বছরে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের যতটা বিকাশ হয়েছে, উন্নত বিশ্বেও এতটা হয়নি।”
তিনি তথ্য দেন, আগে দৈনিক পত্রিকা ছিল সাড়ে ৭০০। এখন এক হাজার ৩০০। প্রাইভেট টিভি চ্যানেল ছিল ১০টি, এখন ৩৪টি, লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে ৪৫টির। অনলাইন আগে ছিল হাতে গোণা কয়েকটি, এখন লাইসেন্সের জন্য ৮ হাজার আবেদন জমা পড়েছে।
বিলের ওপর বিরোধী দলীয় সদস্যদের জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নিষ্পত্তি করার পর ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন (সংশোধন) বিল, ২০১৯’ সংসদে কণ্ঠভোটে পাস হয়।
চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ব্যক্তির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেওয়ার বিধান যুক্ত করা হয়েছে সংশোধিত আইনে।