দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বললেন, “আপনাদের যাদের মেয়ে আছে, যাদের সন্তান আছে, এইরকম কুরুচিপূর্ণ, এইরকম পশুত্বসুলভ আচরণ থেকে কীভাবে দূরে রাখা যায়, এইটা আপনারা একটু ভেবে দেখবেন।
“তাদেরকে রক্ষা করার চেষ্টা করবেন। আমি হয়ত পারি নাই আমার মেয়েকে রক্ষা করতে…।”
হতভাগ্য এই বাবা ঢাকার নবাবপুরে ব্যবসা করেন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে ওয়ারীর বনগ্রামে এক বহুতল ভবনের ষষ্ঠ তলায় নতুন বাসায় উঠেছিলেন তিনি।
ওই ভবনেরই নবম তলার একটি ফাঁকা ফ্ল্যাট থেকে গত শুক্রবার রাতে তার মেয়ের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ময়নাতদন্তের পর জানা যায়, শ্বাসরোধে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছিল শিশুটিকে।
সাত বছর মেয়েটি স্থানীয় একটি স্কুলে নার্সারিতে পড়ত। চার ভাই বোনের মধ্যে সে ছিল সবার ছোট।
রোববার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞসাবাদে ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করেছেন হারুন।
গ্রেপ্তার হারুনের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। ওয়ারীর বনগ্রামের ওই ভবনের অষ্টম তলায় খালাতো ভাই পারভেজের বাসায় থাকতেন তিনি। ঠাঁটারীবাজারে পারভেজের রঙের দোকানেই তিনি কাজ করতেন।
পারভেজের মেয়ের সঙ্গে খেলার জন্য প্রায়ই ওই বাসায় যেত ছয় তলার স্কুলপড়ুয়া মেয়েটি। শুক্রবার সন্ধ্যায় মাকে খেলতে যাওয়ার কথা বলেই সে বাসা থেকে বেরিয়েছিল।
কিন্তু সে না ফেরায় পরিবার খোঁজাখুঁজি শুরু করে। রাতে নবম তলায় খালি ফ্ল্যাটের ভেতরে তাকে পাওয়া যায় গলায় রশি প্যাঁচানো, মুখ বাঁধা ও রক্তাক্ত অবস্থায়।
ডিএমপির সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত মেয়েটির বাবা সেই বর্ণনা দেন বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে।
“আামর মেয়ে আমার ওয়াইফের কাছে বলে গেছে, ‘১০ মিনিটের জন্য আম্মা আমি আট তলায় ওই বাচ্চাটার সাথে একটু খেলাধুলা কইরা আইসা তোমারে পড়াগুলি দিব।’
“কিন্তু ১০ মিনিট পেরোয়ে গেল, আমি নামাজ পইড়া আসলাম, পাইলাম না। সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে আমার সুন্দর ফুটফুটে মেয়েটাকে…
“যেভাবে তাকে হত্যা করা হইল, আমি নিজের চোখে দেইখা, আমার পরিবার দেইখা, তাদের মৃত্যু হওয়ার উপক্রম হয়েছিল।… আমি কীভাবে ধৈর্য্য ধারণ করব!”
তার বর্ণনা শুনে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিক ও পুলিশ কর্মকর্তাদের চোখও ভিজে আসে।
ওই ঘটনার পর পুরো পরিবার ‘বিধ্বস্ত’ হয়ে পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আজকে পর্যন্ত আমার ওয়াইফ একটু পানিও মুখে দেয় নাই।… ঘরে গেলে তার কাপড় চোপড় তার ছবি এগুলি দেইখা… কোনো জায়গায় দাঁড়াইতে পারে না, বসতে পারে না, শুইতে পারে না।”
মেয়ের হত্যাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়ে এই বাবা বলেন, “আমার মেয়েকে দুই রকম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে, তার ফাঁসিটা হইলে হবে একটা ফাঁসি।
“তার সর্বোচ্চ শাস্তি, তার ফাঁসি, অতি দ্রুত সময়ে, ছয় মাসের মধ্যে যাতে কার্যকর হয়, আমি জোর দাবি জানাচ্ছি আপনাদের মাধ্যমে।”
সাংবাদিকদের উদ্দেশে এই বাবার আর্তি, “আজকেই যেন শেষ হয়ে না যায়… আপনারা পরেও এইভাবে লেখালেখি করবেন, যাতে ঘটনাটা ধামাচাপা পড়ে না যায়। বাংলাদেশে অনেক ঘটনা আছে, প্রথমে আলোড়ন সৃষ্টি হয়, তারপরে ধামাচাপা পড়ে যায়।”