কুকুর ২৪ ঘণ্টা বেঁধে রাখলে ৬ মাসের জেল

মালিকবিহীন কোনো প্রাণি হত্যা করলে ছয় মাসের জেল অথবা ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রেখে নতুন ‘প্রাণিকল্যাণ বিল- ২০১৯’ সংসদে পাস হয়েছে।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 July 2019, 04:00 PM
Updated : 7 July 2019, 04:00 PM

নতুন এই আইনে চলাফেরার সুযোগ না দিয়ে কুকুরকে একটানা ২৪ ঘণ্টা বেঁধে বা আটকে রাখলে তা নিষ্ঠুরতা হিসেবে গণ্য হবে। এই অপরাধের জন্য ছয় মাসের জেলের পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

রোববার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু বিলটি সংসদে পাসের প্রস্তাব করেন। পরে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি করা হয়।

গত ১০ মার্চ বিলটি সংসদে উত্থাপন করা হয়। পরে বিলটি ৪৫ দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

১৯২০ সালের পশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা নিরোধ আইন বাতিল করে নতুন আইন করতে বিলটি পাস করা হয়েছে।

নতুন আইনে যুক্তিযুক্ত প্রয়োজনে ভেটিরিয়ান সার্জনের লিখিত পরামর্শ ও পদ্ধতি অনুসরণ করে কোনো প্রাণীর অজ্ঞান ও ব্যথাহীন মৃত্যু ঘটানো হলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না।

এই আইন লংঘন করে অপরাধ করলে বা কোনো অপরাধে সহায়তা করলে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে।

আগের আইনে বিভিন্ন অপরাধের জন্য তিন মাসের জেল এবং এক হাজার টাকা জরিমানা করা হত।

এই আইন অনুযায়ী, কর্তৃপক্ষের অনুমতি গ্রহণ ছাড়া কোনো প্রাণিকে দৈহিক কলাকৌশল প্রদর্শনের জন্য প্রশিক্ষণ বা দৈহিক কসরৎ প্রদর্শনের জন্য ব্যবহার করা যাবে না। তবে প্রতিরক্ষা বাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, পুলিশ, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী ও কোস্টগার্ডের ক্ষেত্রে এই বিধান প্রযোজ্য হবে না।

নিবন্ধন ছাড়া বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পোষা প্রাণি উৎপাদন এবং ওই উদ্দেশ্যে কোনো খামার স্থাপন ও পরিচালনা করা যাবে না।

খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রাণী জবাইকালে এবং ধর্মীয় উদ্দেশ্যে উৎসর্গকালে যে কোনো ধর্মালম্ববী ব্যক্তি কর্তৃক নিজস্ব ধর্মীয় আচার অনুযায়ী কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করা হলে তাকে নিষ্ঠুরতা হিসেবে গণ্য করা হবে না।

বিলে বলা হয়, এই আইনের অধীন অপরাধের বিচারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা যাবে। তবে তার আগে মোবাইল কোর্ট আইনের তফসিলে তা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, পশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধের জন্য যে সমস্ত অপরাধের বর্ণনা ও দণ্ড বিদ্যমান আইনে আছে তা অনেকাংশে বর্তমানে অপ্রতুল ও প্রয়োগযোগ্য নয়। সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্যরক্ষায় বিবেকসম্পন্ন মানুষ ভাষাহীন প্রাণির কল্যাণে এগিয়ে এসেছে।”

“সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে প্রাণির প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ ও অপরাধের ধরন পরিবর্তন হয়েছে। একই সাথে প্রাণির প্রতি কল্যাণকর ও মানবিক আচরণেরও দাবিও উত্থাপতি হচ্ছে।”

ভেটেরিনারি কাউন্সিল বিল পাস

পরে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু ‘বাংলাদেশ ভেটেনারি কাউন্সিল বিল-২০১৯’ সংসদে পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়

১৯৮২ সালের ‘বাংলাদেশ ভেটেরিনারি প্রাকটিশনারস অর্ডিন্যান্স’ বাতিল করে নতুন আইন করতে বিলটি তোলা হয়।

সামরিক শাসনামলে জারি করা আইনগুলো বাতিল করে নতুন আইন প্রণয়ন করতে বিলটি পাস করা হয়েছে।