সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব বলেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ: প্রধানমন্ত্রী

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কারো সঙ্গে বৈরিতায় না গিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষার কারণেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং বিনিয়োগ বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রিয়াজুল বাশার, বেইজিং থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 July 2019, 04:27 PM
Updated : 3 July 2019, 04:29 PM

চীন সফরে থাকা শেখ হাসিনা বুধবার বেইজিংয়ের একটি হোটেলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনায় এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, “আমরা শুধু দেশের ভেতরই উন্নয়নটা করে যাচ্ছি তা নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’ এই নীতিটা অনুসরণ করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।”

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির এ দিকটি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গেলে অনেকেই জিজ্ঞেস করে। এবারেও এই প্রশ্নটা আমাকে শুনতে হয়েছে যে চীন এবং ভারত- দুই দেশের সঙ্গেই বন্ধুত্ব রাখেন কীভাবে?

“আমি বললাম, আমার অসুবিধাটা কোথায়? আমাদের প্রতিবেশী দেশ। আমার তো সকলের সাথেই সম্পর্ক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যে নীতি দিয়ে গেছেন, অক্ষরে অক্ষরে সেই নীতি পালন করে এখন কারও সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো বৈরী সম্পর্ক নেই।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সকলের সঙ্গেই আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। সেজন্যই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। সে কারণে বাংলাদেশে এখন বিনিয়োগ আসছে।”

একটা স্থিতিশীল সরকার, গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকলে বিনিয়োগ আসে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিংয়ের আমন্ত্রণে পাঁচ দিনের সরকারি সফরে সোমবার ডালিয়ান আসেন শেখ হাসিনা। সেখানে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের গ্রীষ্মকালীন সভায় অংশ নেওয়ার পর বুধবার বেইজিং পৌঁছান তিনি।

ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধের সমাধান এবং ভারতের সঙ্গে স্থল সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “সারা বিশ্বে ছিটমহল বিনিময় নিয়ে যুদ্ধ হয়। ভারতবাসীরা বাংলাদেশের ব্যাপারে সবাই এক। তাদের পার্লামেন্টে প্রত্যেকটা দলমত নির্বিশেষে সবাই ভোট দিয়ে আমাদের স্থল সীমান্ত আইনটা পাশ করে দিয়ে গেছে। আমরা যে ছিটমহল বিনিময় করলাম, সারা বিশ্বের কাছে এটা একটা দৃষ্টান্ত। একটা উৎসবমুখর পরিবেশে এই ছিটমহল বিনিময় করেছি।

“এভাবে পুরো সমস্যার সমাধান করে আমরা দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।”

বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়া এবং ৫ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছরে দুই লাখ দুই হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট দেওয়া হয়েছে। এটা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ উন্নয়ন প্রকল্প।

এক সময় বাজেট বাস্তবায়নে বেশিরভাগই বিদেশি অর্থায়ন থেকে এলেও বর্তমানে নিজস্ব অর্থায়ন বেড়ে যাওয়ায় বিদেশি অর্থায়ন ‘ন্যূনতম’ পর্যায়ে চলে এসেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তবে দেশের উন্নয়ন হলেও ‘এক শ্রেণির’ মানুষ ভালো দেখতে পায় না বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করেছে কারা? যারা আমাদের স্বাধীনতা চায়নি, যারা একাত্তরে হানাদার বাহিনীর দোসর ছিল, যারা চক্রান্ত করেছিল। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলব, এরসঙ্গে আমাদের নিজেদেরও কিছু লোক সম্পৃক্ত হয়েছিল। যারা দেশের স্বাধীনতা চায়নি তারাই দেশটাকে পঙ্গু করে রাখতে চেয়েছে।

“এখনও আমরা দেখি সেই ধরনের মানসিকতা যথেষ্ট রয়েছে। যতই ভালো কাজ করি আমাদের দেশে কিছু মানুষ আছে, কোনও কিছুতেই তাদের কিছু ভালো লাগে না। আমরা যা-ই করি উনারা কোনও ভালো দেখতে পায় না।

“তো তারা কারা? তারা কি অন্ধ? তারা কি বিবেক, বৃদ্ধি জ্ঞানহারা? না, তাদের উদ্দেশ্যটা কী?”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আসল উদ্দেশ্যটা হচ্ছে গণতান্ত্রিক পরিবেশটা তাদের পছন্দ হয় না। কারণ একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকলে তাদের নাকি মূল্যায়ন হয় না।

“মূল্যায়ন হয় তখনই যখন মার্শাল ল হয়। যদি জরুরি অবস্থা হয়। যদি কোনও সংবিধান লংঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতাদখলকারী হয়। কারণ তাদের ওই অবৈধ ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য কয়েকটা খুটার দরকার হয়।”

শেখ হাসিনা বলেন, “এরা সব সময় নিজেদের বিক্রি করার জন্য তৈরি থাকে। ‘মুই কার খালুরে, মু্ই কার খালুরে’ বলে চিৎকার করতে থাকে আর রেডি হয়ে থাকে যে কখন এ ধরনের অবস্থা আসবে আর তাদের ডেকে নেবে। তখন তারা একটা পতাকা টতাকা পেয়ে একটা কিছু দেখাবে- এই হল চিন্তা।”

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ২৯ বছর এই শ্রেণিটাই ক্ষমতায় ছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, “কিন্তু দেশের উন্নতি করতে পারে নাই কেন? ওই ২৯ বছরের মধ্যে যে উন্নতি তারা করতে পারেনি আমরা ১০ বছরের মধ্যে তার থেকে বেশি করতে পেরেছি।”

নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন, ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, বহুমুখী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, চিকিৎসা ক্ষেত্রে দেশের এগিয়ে যাওয়া, শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই দেওয়া, বৃত্তি-উপবৃত্তি দেওয়া, মাতৃ মৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর হার কমা, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ... এখন সকলেই প্রশংসা করছে। কিন্তু এটা ধরে রাখতে হবে। প্রশংসা শুনে বসে থাকলে চলবে না। এগিয়ে যেতে হবে। আরও কাজ করতে হবে। আরও পরিশ্রম করতে হবে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “চীন ৭০ বছরে আজকে সারা বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পেরেছে, এখান থেকে অনেক কিছু শেখার অছে।

“কাজেই চীনে যারা পড়ালেখা করছে তাদেরকে আমি বলব, এখান থেকেও শিক্ষা নেওয়ার দরকার আছে আমাদের। যে কীভাবে তারা দিনরাত পরিশ্রম করে কাজ করে।”

চীনের সহায়তায় কর্ণফুলি টানেল তৈরির কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ-চায়না বন্ধুত্বের কথাও তুলে ধরেন তিনি।

যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গঠনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “যারা জাতির পিতাকে হত্যা করেছিল তাদেরকে আমি দেখিয়ে দিতে পেরেছি যে, বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারে।”

বেইজিংয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ফজলুল করিমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বক্তব্য দেন। প্রবাসীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন ৪০ বছর চীনে থাকা বাংলাদেশি প্রকৌশলী শামসুল হক।