মূল আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে আদালত বলেছে, এমন ঘটনায় পুলিশের আরও তৎপর হওয়া উচিৎ ছিল।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা শহরের কলেজ রোড এলাকায় বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামের দুলাল শরীফের ছেলে রিফাতকে (২৩) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে একদল যুবক। এসময় তার স্ত্রী বাধা দিয়েও তাদের ঠেকাতে পারেননি।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ওই ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের বেঞ্চের নজরে আনেন।
আদালত তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশারকে বরগুনার ডিসি ও এসপির সঙ্গে যোগাযোগ করে এ পর্যন্ত কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা দুপুর ২টার মধ্যে জানাতে নির্দেশ দেয়।
বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, “দেশের পরিস্থিতি কোথায় গেছে! অনেকে দাঁড়িয়ে দেখলেন। কেউ প্রতিবাদ করলেন না। সমাজ কোথায় যাচ্ছে? আমারা সবাই মর্মাহত।”
রিফাতের বাবা আব্দুল আলিম দুলাল শরীফ মোট ১২ জনকে আসামি করে বৃহস্পতিবার সকালে বরগুনা সদর থানায় ওই মামলা দায়ের করেন। এজাহারের চার নম্বর আসামি চন্দনকে বুধবার রাতেই গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ তথ্য জানানোর পর বিচারক বলেন, “যেহেতু গতকাল ঘটনাটি প্রকাশ্য দিবালোকে ঘটেছে তাই এর অ্যাকশন দ্রুত হওয়া উচিৎ ছিল। পুলিশের ভূমিকা জোরালো মনে হচ্ছে না।”
বিচারক এরপর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেন, বরগুনা যেহেতু সুন্দরবন ও সীমান্তের কাছে, সেহেতু আইজিপিকে জানাতে হবে যাতে আসামিরা কোনোভাবে সীমান্ত পার না হতে পারে।
আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল এ বিষয়ে আদেশ চাইলে বিচারক বলে, “আমরা আদেশ দিচ্ছি না। কিন্তু কোনো অনিয়ম বা অবহেলা আছে কিনা আমরা নজরে রাখব এবং এ বিষয়টি আগামী বৃহস্পতিবার আবার আসবে, আমরা অগ্রগতি জানব।”
সেখানে দেখা যায়, কয়েকজন যুবক চড়াও হয়েছেন রিফাতের উপর, তার মধ্যে দুজন রামদা হাতে রিফাতকে একের পর এক আঘাত করে চলেছেন। রিফাতকে বাঁচানোর জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছিলেন তার স্ত্রী; কিন্তু পারেননি।
হামলাকারী যুবকরা রিফাতকে রক্তাক্ত করে সবার সামনে দিয়েই চলে যায়। পরে রিফাতকে উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেখানে তার শরীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকের পরামর্শে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয় ।
এ হামলার জন্য বরগুনা পৌরসভার ক্রোক এলাকার নয়ন বন্ড নামে এক যুবককে দায়ী করেন রিফাতের স্ত্রী। এছাড়া রিফাত ফারাজী, রাব্বি ও আকন নামের কয়েকজনের কথাও তিনি বলেছেন।
বরগুনার ওসি আবির মোহাম্মদ হোসেন বলেন, রিফাতের স্ত্রী স্থানীয় একটি কলেজের ছাত্রী। দুই মাস আগে তাদের বিয়ে হয়।
“নয়ন ওই ছাত্রীকে নিজের স্ত্রী বলে দাবি করে আসছিল। অন্যদিকে রিফাতের পরিবার বলেছে, মেয়েটিকে নয়ন প্রায়ই উত্ত্যক্ত করত। এই বিরোধকে কেন্দ্র করেই রিফাতের উপর হামলা চালানো হয়।”