২৮ বছর পর ঢাবি সিনেটে ছাত্রদের কথা

প্রায় তিন দশক পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট অধিবেশনে যোগ দিলেন পাঁচজন ছাত্র প্রতিনিধি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 June 2019, 07:23 PM
Updated : 26 June 2019, 07:23 PM

২৮ বছর পর ডাকসু অচল হওয়ায় ডাকসু মনোনীত ৫ জন সিনেট অধিবেশনে অংশ নেয়।

বুধবার সিনেটের বার্ষিক বাজেট অধিবেশনে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে সিনেটে উপস্থিত ছিলেন ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর, জিএস গোলাম রাব্বানী, সদস্য তিলোত্তমা সিকদার এবং ডাকসু মনোনীত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস।

এই অধিবেশনে যোগ দিয়ে ছাত্রদের হয়ে কথা বলেন ছাত্রলীগের সভাপতি শোভন এবং ডাকসুর জিএস ও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাব্বানী।

ছাত্রলীগের সভাপতি অধিবেশনে ছাত্রদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কথা বলেন। 

শিক্ষার্থীদের আবাসন ও খাদ্য সমস্যার কথা তুলে ধরে শোভন বলেন, ‘‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর পড়াশোনা করতে গেলে যে বিষয়টির বেশি প্রয়োজন সেটা হচ্ছে আবাসন এবং খাদ্য। আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়টা যাতে পূর্ণাঙ্গ একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় করা হয় এই বিষয়ে আপনাদের কাছে দাবি রাখছি।

“আমাদের হলগুলোতে যে থাকার ব্যবস্থা, সেই ব্যবস্থাটা কিন্তু ভালো না। অনেক আবাসন আছে, যেখানে আমরা রাতে ঘুমাতে পারি না। যেমন আমাদের ছারপোকার সমস্যা। একটি শিক্ষার্থী যখন রাতে ঘুমাতে পারে না, সে কিন্তু সকালে ক্লাসে যেতে পারে না।”

হলের ক্যান্টিনগুলোর খাবারের মান উন্নত করতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তুকি দেওয়ার দাবিও জানান তিনি। বাস বাড়ানোর দাবিও তিনি জানান। গবেষণা বরাদ্দ কমে যাওয়ায় হতাশাও প্রকাশ করেন তিনি।

এবারের ডাকসু নির্বাচনে ধর্মভিত্তিক ছাত্র সংগঠন অংশ নিয়েছিল উল্লেখ করে শোভন বলেন, “আগামী ডাকসু নির্বাচনে ধর্মভিত্তিক ছাত্র সংগঠনগুলো যাতে অংশগ্রহণ করতে না পারে, তার জন্য কড়া আইন পাস করার আবেদন জানাচ্ছি।”

এছাড়াও তিনি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাসব্যাপী আয়োজন ও বঙ্গবন্ধুর একটি ভাষ্কর্য নির্মাণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বোর্ড সম্প্রসারণ এবং তাদের জন্য ড্রেসকোড নির্ধারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের সেবার মান বাড়ানোর দাবি তোলেন। 

ডাকসুর জিএস রাব্বানী ডাকসু নির্বাচন নিয়মিত করার উপর জোর দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতের বরাদ্দের অপ্রতুলতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা মনে করি গবেষণা ক্ষেত্রে গবেষকদের খরচের স্বাধীনতা উচিত এবং এক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করা হোক।”

তিনি পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত ক্যাম্পাস, বহিরাগত ও যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে কথা বলেন।

এদিকে সিনেট অধিবেশন চলাকালীন বিভিন্ন দাবি নিয়ে সিনেট ভবনের সামনে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থী। সেখানে ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব দাসসহ অন্য নেতাকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।

তাদের বহন করা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াও’, ‘আবাসন সংকট নিরসনে বরাদ্দ দাও’, ‘লাইব্রেরী ২৪ ঘণ্টা চালু রাখতে হবে’, ‘গেস্টরুম সংকটের সমাধান চাই’, ‘সকল উন্নয়ন ফি বাতিল কর’, ‘সকল রুটে রাত ৮টায় বাস চাই’, ‘ক্যাম্পাসে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ কর’ ইত্যাদি।

এসব বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সিন্ডিকেটে যখন এই বাজেট পাস হয় তখন আমরা বাজেটের বিভিন্ন বিষয়গুলো জানতে পেরেছি। আমরা দেখেছিলাম এই বাজেট শিক্ষার্থীবান্ধব না হয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য করা হয়েছে। তাই এসব বিভিন্ন সমস্যাগুলো তুলে ধরে আমরা সিনেটের সামনে দাড়িয়েছিলাম যাতে এগুলো নিয়ে সিনেটের ভেতরে আলোচনা হয়।”

৮১০ কোটি ৪২ লক্ষ টাকার বাজেট প্রস্তাব

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৮১০ কোটি ৪২ লক্ষ টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে পণ্য ও সেবা খাতে এবং অন্যান্য অনুদান খাতের আওতায় গবেষণার জন্য ৪০ কোটি ৮০ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যা মোট বাজেটের ৫ দশমিক ০৪ শতাংশ।

প্রস্তাবিত বাজেটের ৮১০ কোটি ৪২ লক্ষ টাকার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে ৬৯৪ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব খাত থেকে ৬৬ কোটি টাকা আসবে। বাজেটে সম্ভাব্য ঘাটতি ধরা হয়েছে ৪৫ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা।

এবছর ২৫৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে যা মোট বাজেটের ৩১ দশমিক ৬৫ শতাংশ, ভাতাদি বাবদ সহায়তা খাতে ১৯৫ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা যা মোট ব্যয়ের ২৪ দশমিক ১৭ শতাংশ। পণ্য ও সেবা বাবদ ১৭১ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা যা মোট ব্যয়ের ২১ দশমিক ১৯ শতাংশ। বিশেষ অনুদান খাতে ১০ কোটি ৫৯ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা যা মোট ব্যয়ের ১ দশমিক ৩১ শতাংশ এবং অন্যান্য অনুদান খাতে ১৭৫ কোটি ৬৯ লক্ষ ৩৮ হাজার টাকা যা মোট ব্যয়ের ২১ দশমিক ৬৮শতাংশ।

গত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বাজেট বরাদ্দ ৭৪১ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা দেয়া হলেও সংশোধিত তা ৭৬১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা হয়েছে।

বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত বার্ষিক অধিবেশনে এ বাজেট উপস্থাপন করা হয়। সিনেট চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে এতে বাজেট উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন।

অধিবেশনে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. এনামউজ্জামান, সিন্ডিকেট সদস্যবৃন্দ, নির্বাচিত রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। বাজেট উপস্থানের পর সিনেট সদস্যগণ বক্তব্য রাখেন। পরে বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা পর্যন্ত সিনেট অধিবেশন মুলতবি করা হয়।