প্রতি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে কিস্তি পরিশোধ করে ১৫ তারিখে এর বাস্তবায়ন প্রতিবেদন (কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট) দিতে বলেছে আদালত।
গ্রিন লাইন পরিবহনের একটি আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেয়।
আদালতে শুনানিতে গ্রিনলাইন পরিবহনের পক্ষে আইনজীবী অজি উল্লা, বাংলাদেশে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএর পক্ষে রাফিউল ইসলাম রাফি, রিট আবেদনের পক্ষে খোন্দকার শামসুল হক রেজা ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার শুনানি করেন।
“অর্থাৎ, আদালত ক্ষতিপূরণের টাকা কমানোর আবেদনটি গ্রহণ করেনি। তবে কিস্তির আবেদনটা গ্রহণ করেছেন। প্রতি মাসে মাসে ৫ লক্ষ টাকা করে দিয়ে যেতে হবে। প্রত্যেক মাসের ৭ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করে ১৫ তারিখে কিস্তি পরিশোধের আদেশের বাস্তবায়ন প্রতিবেদন হলফনামা আকারে দিতে হবে।”
কতটাকা কমাতে আবেদন করেছিলেন এবং রাসেলকে পরিশোধের কতটাকা বাকি আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আবেদনে আমরা কোনো অ্যামাউন্ট উল্লেখ করি নাই। কোর্টের উপরে ছেড়ে দিয়েছিলাম, কোর্ট যা করে। আর রাসেল ৫ লক্ষ টাকা পরিশোধ করা হয়েছিল আরও ৪৫ লক্ষ টাকা রয়ে গেছে, যা আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী পরিশোধ করতেই হবে।”
আদালত আগামী ১৬ জুলাই এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশর জন্য রেখেছে বলেও জানান এই আইনজীবী।
সরকার তাকে কীভাবে পেট্রোনাইজ করে আমরা দেখব
শুনানির শুরুতেই গ্রিনলাইন পরিবহণের মালিকের পক্ষে আদালতে একটি আবেদন করলে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক আইনজীবী অজি উল্লাহর কাছে জানতে চায়, আপনারা কতো টাকা দিয়েছেন?
জবাবে আইনজীবী বলেন, ৫ লক্ষ টাকা আর চিকিৎসা বাবদ সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিয়েছি।
বিচারক তখন বলেন, ‘আপনারা অসহায় এ ছেলেটার একটা ব্যবস্থা করতে পারতেন। কোনো না কোনোভাবে সহযোগিতা করতে পারতেন।’
এই বিচারক বলেন, ‘মানুষ হিসেবেও ছেলেটির জন্য আপনি (গ্রিনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষ) কিছুই করেননি। আপনাদের আচরণও শোভনীয় হয়নি। এখন ক্ষতিপূরণের অর্থের পরিমাণ কমানোর কোনো সুযোগ নেই। আর ঘটনা যে অবহেলাজনিত ছিল তা নয়, বিষয়টা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল। ”
মঙ্গলবার রাসেলকে কোনো টাকা দেওয়া হয়েছে কিনা বিচারক জানতে চাইলে গ্রিনলাইনের আইনজীবী নীরব থাকেন। রিট আবেদনের আইনজীবী খন্দকার সামসুল হক রেজা তখন বলেন, ‘তারা আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করেনি। এমনকি কীভাবে ক্ষতিপূরণ দেবে তাও জানায়নি। প্রতিদিন তাদের আয় এক কোটি টাকা আয় হয়।’
এ পর্যায়ে জ্যেষ্ঠ বিচারক গ্রিনলাইনের আইনজীবীকে বলেন, “আপনারা তো দেওলিয়া হয়ে যাননি। কিছু টাকা দিলে কী হত। ছেলেটার সামনে এখনো অনেক সময় পড়ে আছে।”
এ পর্যায়ে বিআরটিএর আইনজীবী রফিউল ইসলাম রাফি রুলের জবাব হলফনামা আকারে দাখিল করে বলেন, “বিআরটিএ ২০০৩ সালের ১৬ নভেম্বর থেকে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটির কার্যক্রম এখনো চলছে।”
জ্যেষ্ঠ বিচারক এফ আর এম নাজমুল আহাসন তখন বলেন, “আমরা কমিটির কথা শুনতে চাচ্ছি না। কমিটির কথা বাদ দেন। আমরা অ্যাকশন দেখতে চাচ্ছি। সড়কে এখনো বিশৃঙ্খলা রয়েছে। কোথাও ট্রাফিক সিগনাল দেখছি না, গতিবেগ নিয়ন্ত্রণের কিছু দেখছি না।”
কনিষ্ঠ বিচারক বলেন, “এবারের ঈদে অন্তত ৪৭ জনের প্রাণহানি হয়েছ্। আহত হয়েছে সাতশ জনের মত। আপনারা কিসের নিরাপত্তা দিচ্ছেন? এখন পর্যন্ত ড্রাইভারদের যোগ্যতাই নির্ধারণ করতে পারেন নাই। ড্রাইভাররা বেপরোয়া গাড়ি চালাচ্ছে।”
বিআরটিএর আইনজীবী আবারও বলেন, “আমরা কমিটি করেছি।”
এসময় বিচারক কামরুল কাদের গ্রিনলাইনের আইনজীবীকে বলেন, “যদি আপনারা আদেশ লঙ্ঘন করেন, তাহলে আমরাও অন্য ব্যবস্থা নেব। কোনোভাবে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ কমানোর সুযোগ নেই। আদালতের আদেশ লঙ্ঘনের জন্য যে ফন্দি-ফিকির করে, সরকার তাকে কীভাবে পেট্রোনাইজ করে আমরা দেখব।
“আপনারা হরতাল ধর্মঘটে যেতে পারেন। যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। আমাদের নির্দেশ পালন না করলে আমরা ব্যবস্থা নেব। আপনারা যথেষ্ট বেয়াদবি করেছেন। আমরা অনেক সহ্য করেছি।”
এরপর আদালত আদেশ দেয়।
গত বছরের ২৮ এপ্রিল যাত্রাবাড়ীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে গ্রিনলাইন পরিবহনের একটি বাস চাপা দেয় প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারকে। তাকে বাঁচাতে একটি পা কেটে ফেলতে বাধ্য হন চিকিৎসকরা।
রাসেল সরকারের জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে সাবেক সাংসদ উম্মে কুলসুমের করা এক রিট আবেদনে চিকিৎসা খরচ বাদেও ৫০ লাখ টাকা দিতে গ্রিনলাইনকে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। পরে আপিল বিভাগেও ওই আদেশ বহাল থাকে।
এরপর গত ১০ এপ্রিল রাসেল সরকারকে ৫ লাখ টাকা পরিশোধ করে গ্রিনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষ বাকি ৪৫ লাখ টাকা পরিশোধের জন্য এক মাস সময় পায়।
ওই সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও আর কোনো অর্থ তারা পরিশোধ না করায় গত ১৫ মে আদালত আরও সাত দিন সময় দিয়ে পুরো অর্থ পরিশোধের বিষয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছিল।
এর পরও গ্রিনলাইন পরিবহন পা হারানো রাসেলকে কোনো টাকা না দেওয়ায় সোমবার এ আদেশ দিল আদালত।