মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক কাজী শরিফুল ইসলাম আদালতে দেওয়া তার অধিকতর তদন্তের প্রতিবেদনে একথা লিখেছেন।
আবরারের মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আরিফ আহম্মেদ চৌধুরীর করা মামলায় তদন্ত শেষে গত ২৪ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছিলেন ডিবি কর্মকর্তা শরিফ।
অভিযোগপত্রে সুপ্রভাত পরিবহনের বাসের কনডাক্টর ইয়াছিন আরাফাত, বাসের মালিক গোপাল সরকার, সুপ্রভাত পরিবহন রুটের সভাপতি আলাউদ্দিন ও রুটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফ উদ্দিনকে আসামি করা হয়।
সুপ্রভাতের চালক সিরাজুল ইসলাম ওরফে মিরাজ এবং হেলপার মো. ইব্রাহীম হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের অব্যাহতি দিতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
এই ঘটনায় আর কারও সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে গত ২৯ এপ্রিল অধিকতর তদন্তের আদেশ দিয়েছিল আদালত।
আদালতের নির্দেশে অধিকতর তদন্ত করে গত ২৮ মে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন কাজী শরিফ, যা সোমবার সাংবাদিকরা জানতে পারে।
প্রতিবেদনে তিনি লিখেছেন, অভিযোগপত্র জমার পর যে সব সাক্ষীরা মামলার ঘটনায় অন্যরা জড়িত আছে মর্মে তথ্য দিয়েছিলেন, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এজন্য সম্পূরক কোনো চার্জশিট দাখিল করা সম্ভব হচ্ছে না।
গত ১৯ মার্চ সকালে প্রগতি সরণির বসুন্ধরা গেইটে সুপ্রভাত পরিবহনের বাসের চাপায় প্রাণ হারান ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের শিক্ষার্থী আবরার (২০)। এরপর নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। তাদের বিক্ষোভে দুই দিন রাজধানীর রাজপথ কার্যত অচল থাকে।
আবরারের মৃত্যুর পর তদন্তে বেরিয়ে আসে, ওই বাসটি আবরারকে চাপা দেওয়ার আগে গুলশানের শাহজাদপুর বাঁশতলা এলাকায় সিনথিয়া সুলতানা মুক্তা নামে এক তরুণীকে চাপা দিয়েছিল, মিরপুর আইডিয়াল গার্লস ল্যাবরেটরি কলেজের প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রী এতে আহত হন।
সিনথিয়ার আহতের ঘটনায় আলাদা মামলা হয়েছে। ওই মামলায়ও তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দাখিল হয়েছে, যাতে আসামি করা হয়েছে ছয়জনকে।
আবরারের মৃত্যুর মামলায় অব্যাহতি পেলেও সুপ্রভাতের চালক সিরাজুল ইসলাম ওরফে মিরাজ এবং হেলপার মো. ইব্রাহীম হোসেন এই মামলায় আসামি।
অভিযোগপত্র দেওয়ার আগে তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. আব্দুল বাতেন বলেছিলেন, সুপ্রভাতের ওই বাসের চালক সিরাজুল ইসলাম ১৯ মার্চ ভোর পৌনে ৬টার দিকে সদরঘাট থেকে গাড়ি নিয়ে রওনা হন। সহকারী ইব্রাহীম ও কন্ডাকটর ইয়াছিনও সে সময় বাসে ছিলেন।
শাহজাদপুর বাঁশতলা এলাকায় ওই বাসের চাপায় গুরুতর আহত হন কলেজছাত্রী সিনথিয়া। বাসের যাত্রীরা তখন চালক সিরাজুলকে ধরে পুলিশে দেয়।
পুলিশ কর্মকর্তা বাতেন বলেন, “বাসটি তখন রাস্তার পাশে দাঁড় করানো ছিল। উত্তেজিত জনতা বাসে আগুন ধরিয়ে দিতে পারে, এমন আশঙ্কায় মালিক গোপালকে ফোন করে ইয়াছিন। মালিক তখন ইয়াছিনকে দ্রুত বাসটি নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিতে বলেন।”
বাসটি ওই এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়ার সময় চালকের আসনে ছিলেন কন্ডাকটর ইয়াছিন। নদ্দায় প্রগতি সরণিতে বসুন্ধরা গেইটে বাসটি আবরারকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। আর ইয়াছিন দুর্ঘটনা ঘটিয়ে বাস থেকে পালিয়ে যান।
আবরারের মৃত্যুর মামলার অভিযোগপত্রে দণ্ডবিধির ৩০৪সহ সংশ্লিষ্ট ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে। এই ধারার সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।