আর একজন উদ্বাস্তুও চাই না: জাতিসংঘ প্রতিনিধি

ছয় দশক ধরেও শরণার্থী সঙ্কটের সমাধান বের করতে না পারা জাতিসংঘ এবার সমাধান খুঁজছে শান্তি প্রতিষ্ঠায়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 June 2019, 04:15 PM
Updated : 20 June 2019, 04:36 PM

বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ‘দুর্গত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশে বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক হাই কমিশনের বাংলাদেশ অফিসের উপ প্রতিনিধি পাপা কিসমা সিল্লার কথায় বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে।

‘পানি, খাবার আর শিক্ষার ব্যবস্থা’ করে শরণার্থী সমস্যার সমাধান দেখছেন না জানিয়ে পাপা কিসমা বলেন, “সবার আগে নজর রাখতে হবে এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায়। আমরা সত্যি আর একটিও উদ্বাস্তু দেখতে চাই না।

“আমরা চাই গোটা বিশ্বে শান্তি নামুক। শান্তি প্রতিষ্ঠা করা গেলে বিশ্বের তাবৎ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করা যাবে।”

আলোচনা সভায় কক্সবাজারের সীমান্তে রোহিঙ্গা শিবিরের চিত্র তুলে ধরে বাংলাদেশের শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের অতিরিক্ত কমিশনার মো. মিজানুর রহমান বলেন, প্রতি বছর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৬ হাজার শিশু জন্ম নিচ্ছে।

রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিজ বাসভূমে ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তারা এখনই যেতে রাজি নন।

মিয়ানমারের  নাগরিকত্ব, নাগরিক হিসেবে সব মৌলিক অধিকার এবং জাতিসংঘের মাধ্যমে নিরাপত্তার নিশ্চয়তাসহ পাঁচ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ফিরতে চান না তারা।

রোহিঙ্গাদের মতো জাতিসংঘ প্রতিনিধি পাপা কিসমাও মনে করেন  মিয়ানমারে জীবনযাপনের কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ ফিরে না আসা পর্যযন্ত রোহিঙ্গা নাগরিকদের ফিরিয়ে দেওয়া ‘ঠিক হবে না’।

তিনি বলেন,  “ক্যাম্পের নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য এখন  জাতিসংঘ তাদের মধ্যে থেকেই স্বেচ্ছাসেবক বেছে নিচ্ছে।”

শরণার্থী ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গাদের মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে জাতিসংঘ চায় বলে জানান পাপা কিসমা।  

২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে কয়েক ডজন নিরাপত্তা চৌকিতে কথিত রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার জবাবে সেনাবাহিনী দমন অভিযানে নামলে বাপ-দাদার ভিটেমাটি পেছনে ফেলে প্রাণ হাতে দুর্গম এক যাত্রায় বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে রোহিঙ্গারা।

সেই পথে নাফ নদীতে সলিল সমাধি হয় অনেকের।

মিয়ানমারের গণহত্যাকে পাপা কিসমা সিল্লা উল্লেখ করেন ‘বড় যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে।

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ বলে আসছে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলো।

হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মিয়ানমারের জেনারেলদের বিচারের দাবিও ধীরে ধীরে জোরালো হয়ে উঠছে।

অন্যদিকে বরাবরই মানবাধিকার লঙ্ঘনের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমার।

এ সভায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, “আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা চলছে। আইনি প্রক্রিয়া দীর্ঘতর হয় জানি। কিন্তু আমাদের সবার চোখ এখন সুবিচারে। সুবিচারই এখন একমাত্র সমাধান।”

মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তচ্যুত হয়ে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে।

গৃহযুদ্ধ, রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানা কারণে প্রতি বছর ঘর ছাড়া হয়ে নিজ দেশ ছেড়ে ভিন দেশে পাড়ি জমানো মানুষের অধিকার রক্ষায় ২০০০ সাল থেকে ২০ জুন পালিত হয়ে আসছে বিশ্ব শরণার্থী দিবস।