‘অসাধু উপায়ে অর্জিত সম্পদ’ পাচার ঠেকাতে কোনো ব্যবস্থা না নিলে তা বেহাত হওয়ার আশংকা প্রকাশ করে দুদকের করা এক আবেদনে ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েশ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।
দুদকের পরিচালক মঞ্জুর মোরশেদের করা ওই আবেদনের ওপর আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ডিআইজি মিজানের তিনটি ফ্ল্যাট, তিনটি প্লট ও দুইটি দোকান ‘ক্রোক’ করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।এসব সম্পত্তির দাম ৩ কোটি ৪৩ লাখ ৭৪ হাজার ৪৬০ টাকা।
এছাড়া সিটি ব্যাংকের ধানমণ্ডি শাখায় মিজানের হিসাবও ‘ফ্রিজ’ করতে বলেছে আদালত। তার ওই অ্যাকাউন্টে ১০ লাখ টাকা রয়েছে বলে জানান জাহাঙ্গীর।
ডিআইজি মিজানের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানের দায়িত্বে ছিলেন দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির। কিন্তু মিজান ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ এনে একটি অডিও টেপ ফাঁস করলে বাছিরকে সাময়িক বরখাস্ত করে দুদক।
এরপর গত ১২ জুন মিজানের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানের দায়িত্ব পান মঞ্জুর মোরশেদ। বুধবার তিনি আদালতে ডিআইজি মিজানের সম্পত্তি ও ব্যাংক হিসাব জব্দের আবেদন করেন।
সেখানে বলা হয়, ডিআইজি মিজান নামে-বেনামে ‘জ্ঞাত আয় বহির্ভূত’ সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সেই অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য দুদকের পরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল কাজ করছে।
“তিনি (মিজান) বৈধ আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ বিক্রি ও স্থানান্তর করার চেষ্টা করছেন মর্মে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে। অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ/সম্পত্তির বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নিলে তা বেহাত হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
“সেক্ষেত্রে তা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ১৪ ধারার বিধান মতে রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হবে না বিধায় রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে।… এ কারণে তার বৈধ আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ অর্জিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ/সম্পত্তি ক্রোক/ফ্রিজ করার আর্জি জানাচ্ছে দুদক।”
বৃহস্পতিবার বিচারকের আদেশে বলা হয়, ক্রোক করা সম্পত্তি হস্তান্তর, বিক্রি বা মালিকানাস্বত্ত্ব যেন বদল করা না হয়, ঢাকা জেলার রেজিস্ট্রার, নিবন্ধন পরিদপ্তরের মহাপরিদর্শক, তেজগাঁও শিল্প এলাকার ঢাকা রেজিস্ট্রার কমপ্লেক্স, নারায়ণগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার এবং ভূমির সহকারী কমিশনারকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
আর সিটি ব্যাংক লিমিটেডের ধানমণ্ডি শাখার ব্যবস্থাপককে বলা হয়েছে, এই আদেশ কার্যকর থাকা অবস্থায় মিজানের অ্যাকাউন্টে অর্থ জমা করা যাবে, কিন্তু কোনো অবস্থাতেই তোলা যাবে না।
এক নারীকে জোর করে বিয়ের পর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ ওঠায় গত বছরের জানুয়ারিতে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় মিজানকে।
এর চার মাস পর তার সম্পদের অনুসন্ধানে নামে দুদক; এক হাত ঘুরে সেই অনুসন্ধানের দায়িত্ব পান কমিশনের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির।
সেই অনুসন্ধান চলার মধ্যেই ডিআইজি মিজান গত ৮ জুন দাবি করেন, তার কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন দুদক কর্মকর্তা বাছির।
এর সপক্ষে তাদের কথপোকথনের কয়েকটি অডিও ক্লিপ একটি টেলিভিশনকে দেন তিনি। ওই অডিও প্রচার হওয়ার পর দেশজুড়ে শুরু হয় আলোচনা।
ডিআইজি মিজান গত ১০ জুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সব জেনেশুনেই তিনি কাজটি করেছেন ‘বাধ্য হয়ে’।
“তিনি (বাছির) যে একজন দুর্নীতিগ্রস্ত, তা প্রমাণ করতে, তাকে ফাঁসানোর জন্য করেছি এবং নিজের সেইফটির জন্য করেছি।”
অভিযোগ ওঠার পর তদন্ত কমিটি গঠনের পাশাপাশি বাছিরকে সাময়িক বরখাস্ত করে দুদক। তবে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সে সময় ডিআইজি মিজানের দিকে ইংগিত করে বলেন, ঘুষ দেওয়াও ফৌজদারি অপরাধের মধ্যে পড়ে।
পুলিশ সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে সে সময় বলা হয়, ডিআইজি মিজানের ব্যক্তিগত কোনো কাজের দায় পুলিশ বাহিনী নেবে না। পুলিশ হিসাবে বাড়তি কোনো সুযোগও তিনি পাবেন না। দোষী প্রমাণিত হলে সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিন্তু ঘুষ দেওয়ার কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করার পরও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে টিআইবি।
তাকে গ্রেপ্তার না করায় উষ্মা প্রকাশ করে খোদ সর্বোচ্চ আদালত থেকে প্রশ্ন করা হয়- তাহলে কি ডিআইজি মিজান দুদকের চেয়ে বড়?
ডিআইজি মিজানকে কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না- সেই প্রশ্নটি মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনে রাখেন সাংবাদিকরা।
জবাবে তিনি বলেন, “কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আইনি প্রক্রিয়া চলছে এবং আইন অনুযায়ী শাস্তি বিধান হচ্ছে।”
আরও খবর -