এসডিজির জন্য উন্নয়নকাজে চাই ব্রাত্যজনকেও: রেহমান সোবহান

সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পাশাপশি সব ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ব্রাত্যজন বা সুবিধাবঞ্চিতদের অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 June 2019, 10:19 AM
Updated : 20 June 2019, 10:19 AM

বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের এলজিইডি মিলনায়তনে ‘প্রান্তিক ও বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীর বৈষম্য, বিচ্ছিন্নতা এবং অধিকার’ শিরোনামে আয়োজিত জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।

বেসারকারি গবেষণা সংস্থা-সিপিডির চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান বলেন, “এসডিজি গোল অর্জনের পথে আমরা বলছি, নোবডি লেফট বিহাইন্ড। সেফটিনেটের নানা প্রোগ্রামও সরকার পরিচালনা করছে। প্রান্তিকের সুবিধাবঞ্চিত নাগরিক বা ব্রাত্যজন যাদের বলা হচ্ছে, তাদের এই প্রোগ্রামের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি সব ধরণের উন্নয়নকাজে তাদেরও অংশীদার করতে হবে।”

সংস্কৃতি মন্ত্রণলালের সর্বশেষ গেজেট অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৫০টি ক্ষুদ্র ও নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বসবাস। কিন্তু বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেপলমেন্ট (সেড)- এর গবেষণা বলছে, বাংলাদেশে আরো ৫০টি জনগোষ্ঠী রয়েছে, যাদের অনেকগুলোর অস্তিত্ব বিলুপ্তির পথে।

এসব জনগোষ্ঠীর সদস্যরা অভিযোগ করেন, শান্তি চুক্তির পর পার্বত্য ভূমি কমিশন গঠিত হলেও তার সুফল তারা পাচ্ছেন না।

এর প্রেক্ষিতে রেহমান সোবহান বলেন, ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর ভূমির সমস্যা নিয়ে সরকার যেসব কাজ করছে তাতে ‘ফান্ডামেন্টাল পরিবর্তন’ আসছে না। সরকার যা করছে, তা একেবারে অস্থায়ী সমাধান। এই সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির একত্রে কাজ করা দরকার।

ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে যারা ক্ষুদ্র পেশাজীবী ও যাদের এলাকা স্থানান্তরের সুযোগ নেই তাদের স্থায়ী উপার্জনের সুযোগ করে দিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি।

 ‘প্রান্তিক ও বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীর বৈষম্য, বিচ্ছিন্নতা এবং অধিকার: বস্তুনিষ্ঠ বাস্তবতা’ শিরোনামে সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের করেন সেন্টার ফর এনভায়রমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (সেড) এর পরিচালক ফিলিপ গাইন।

তিনি জানান, ১৫৬টি চা বাগানে এখন ৮০টি নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী বসবাস করছে। উত্তরবঙ্গের ৩৭টি নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর নাম পরিসংখ্যান ব্যুরোর তালিকাতে আসেনি, যাদের ১৬৭টি পরিবারের সন্ধান পেয়েছেন তারা।

সমাজে ‘ব্রাত্যজন’ বলে পরিচিত বিহারীদের ৩ লাখ সদস্য ও বেদেদের ৫ হাজার কমিউনিটি এখন বাংলাদেশের নানা প্রান্তে রয়েছে।

সম্প্রতি মধুপুরে এক নৃতাত্ত্বিক গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে ফিলিপ গাইন জানান, সেখানে ৪৪টি গ্রামে গারো উপজাতি বাস করছে ৩৩ শতাংশ ও কোচ রয়েছে ৩ শতাংশ। গারোদের মধ্যে মাত্র ১১ শতাংশ লোকের কাছে জমির মূল দলিল রয়েছে। কোচদের মধ্যে যার হার ৪ শতাংশ।

জমির দলিল দেখাতে না পারায় এই দুই গোষ্ঠীর সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বন মামলা রয়েছে বলেও জানান গাইন।

শ্রম আইন অনুযায়ী, প্রতি আঠার দিন টানা শ্রমের পর একজন শ্রমিক এক দিন বিনোদন ছুটি পাবেন। কিন্তু চা বাগানের শ্রমিকের ক্ষেত্রে তা ২২ দিনে এক দিন বলে অভিযোগ করেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভাইস চেয়ারম্যান রামভজন কৈরী।

সম্মেলনের সভাপতি হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, “সুবিধাবঞ্চিত ও ব্রাত্যজনের চাহিদার কথা সরকারকে জানতে হবে। তাদের চাহিদার বাস্তবতা জানতে হবে। পরে সেই চাহিদা বুদ্ধিমত্তার সাথে সাজাতে হবে, বাস্তবায়ন কতে হবে।”

সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন খ্রিস্টিয়ান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ- সিসিডিবির নির্বাহী পরিচালক জয়ন্ত অধিকারী।

আগামী শুক্রবার পর্যন্ত ক্ষুদ্র ও নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষা, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার  বিষয়ক নানা সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।

পাশাপাশি থাকছে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।