বাসস্থান-কর্মস্থলে গাছ লাগানোর অনুরোধ প্রধানমন্ত্রীর

পরিবেশ রক্ষায় সবাইকে কর্মস্থলে ও বাসস্থানে গাছ লাগানোর অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 June 2019, 07:48 AM
Updated : 20 June 2019, 09:43 AM

বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা-২০১৯ এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা-২০১৯ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে পরিবেশ দূষণের নানা কারণ তুলে ধরেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা বাংলাদেশে পরিবেশ রক্ষায় যথেষ্ট সচেতন। আমাদের যত স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত আছে আমি সবাইকে অনুরোধ করব প্রত্যেকে যার যার কর্মস্থলে এবং বাসস্থানে কিছু গাছ লাগাবেন। আমাদের ছেলেমেয়েদেরকেও শেখাতে হবে।”

পরিবেশ রক্ষায় সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও কর্মসূচির কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

“প্রতি বছরের মত এ বছরও আমরা জেলা, উপজেলায় বৃক্ষমেলার আয়োজন করেছি। মানুষের মাঝে একটা ভালো রকমের উদ্যোগ দেখেছি। তারা হাটে গেলে গাছের চারা কিনে নিয়ে বাড়িতে গিয়ে লাগায়। আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় তারা এটা করে।”

জলবায়ূ পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা বলেন সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, “আমরা জানি বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বা জলবায়ু পরিবর্তনের একটা ধাক্কা আমাদের ওপর আসবেই। আমরা কারও মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজেরাই কিছু ব্যবস্থা নিয়েছি। এই জলবায়ু পরিবর্তন এখনও আমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারছে না।

“কিন্তু আমরা যেহেতু দায়ী না, উন্নত দেশগুলো এজন্য দায়ী, ভুক্তভোগী হতে যাচ্ছে আমাদের মতো দেশকে। সেজন্য আমরা আমাদের নিজস্ব পরিকল্পনা, নিজস্ব অর্থায়নে উদ্যোগ নিয়েছি।”

দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব ভবিষ্যতেও যাতে না পড়ে, সেই পরিকল্পনা নিয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী জানান, উপকূলীয় এলাকায় সবুজ বেষ্টনী সৃষ্টি এবং বনভূমির ডিজিটাল ম্যাপ করা হচ্ছে। সুন্দরবনসহ মোট ১৫টি রক্ষিত এলাকার ২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত কার্বন জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় লাগসই প্রকল্প গ্রহণের জন্য ‘কান্ট্রি ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান ২০১৬-২০২১’ প্রণয়ন করা হয়েছে।

“বনের পাশে এবং প্রান্তিক ভূমিতে বসবাসরত দরিদ্র জনগোষ্ঠিকে সম্পৃক্ত করে সামাজিক বন সৃষ্টি করা হচ্ছে। যেখানে সরকারি জমিতে বৃক্ষ রোপণ ও পরিচর্যাকারী ব্যক্তি বা সংগঠনকে বনজ সম্পদ থেকে আহরিত লভ্যাংশের ৭৫ শতাংশ দেওয়া হয়। বাকী ২৫ শতাংশ সরকারের রাজস্ব খাতে জমা হয়।

“সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে সৃজিত বাগানে ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬০১ জন উপকারভোগী রয়েছেন। যাদের মধ্যে মহিলা উপকারভোগীর সংখ্যা এক লাখ ২৮ হাজার ৪৬৭ জন। এ পর্যন্ত এক লাখ ৬৮ হাজার ৫৬৪ জন উপকারভোগীর মধ্যে ৩৫৬ কোটি ৮২ লাখ ৩৪ হাজার ৫২২ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।”

নদীরক্ষায়ও তার সরকারের নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকার চারপাশে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদীকে ‘প্রতিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করে তা ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা হচ্ছে। এসব নদীর তীর হতে অবৈধ স্থাপনা অপসারণের কাজ চলছে।

“অবৈধ দখলকারী যত ক্ষমতাশালীই হোক কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা এসব নদীকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে চাই। পাশাপাশি ঢাকা শহরের চারপাশে নদী তীরের পরিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে মানসম্পন্ন নির্মল বিনোদনের ব্যবস্থা করা হবে। একই সঙ্গে নৌপথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে।”

অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন-২০১৯’, বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার-২০১৮ ও সামাজিক বনায়নের লভ্যাংশের চেক এবং একইসঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণে ভূমিকা রাখার জন্য জাতীয় পরিবেশ পদক-২০১৯ বিতরণ করা হয়।

পাশাপাশি গাজীপুরে শেখ কামাল ওয়াইল্ড লাইফ সেন্টার ও পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি ভবনও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

পরে তিনি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে একটি তেঁতুল গাছের চারা রোপণ করেন।

অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী, উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।