সোহেল তাজের ভাগ্নে ময়মনসিংহ থেকে উদ্ধার

চট্টগ্রাম থেকে 'নিখোঁজ' হওয়ার ১১ দিন পর সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমদ সোহেল তাজের ভাগ্নে ইফতেখার আলম সৌরভকে ময়মনসিংহের তারাকান্দা থেকে উদ্ধার করার কথা জানিয়েছে পুলিশ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক চট্টগ্রাম ব্যুরো ও ময়মনসিংহ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 June 2019, 02:57 AM
Updated : 20 June 2019, 10:27 AM

চট্টগ্রামে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার মো. শহীদুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ভোর সোয়া ৫টার দিকে ময়মনসিংহের তারাকান্দা ইউনিয়নের জামিল রাইস মিলের সামনে একটি গাড়ি থেকে সৌরভকে নামিয়ে দেওয়া হয়।

“বিষয়টি জানতে পেরে আমরা ময়মনসিংহের এসপিকে টেলিফোনে জানাই। তিনি নিজে গিয়ে তাকে উদ্ধার করেছেন। সৌরভকে ঢাকার বনানীতে তার পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।"

তবে সৌরভকে কারা নিয়ে গিয়েছিল এবং কারা তাকে তারাকান্দায় ফেলে গেছে, ১১ দিন তাকে কোথায় কীভাবে রাখা হয়েছিল, সেসব বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন।

সকালে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, সৌরভ ভালো আছেন, বাহ্যিকভাবে কোনো সম্যসা তারা দেখেননি। খাবার খাইয়ে তাকে ঢাকার বনানীতে তার পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সৌরভের বাবা সৈয়দ ইদ্রিস আলম বলেন, “সৌরভকে ময়মনসিংহে পাওয়া গেছে বলে পুলিশ আমাদের জানিয়েছে। তাকে পুলিশ প্রোটেকশনে ঢাকায় আনা হচ্ছে। শারীরিকভাবে ও অনেক দুর্বল হয়ে গেছে।”

 

সোহেল তাজের মামাতো বোনের ছেলে সৌরভ চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলাকায় বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকেন; ঢাকায় ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভাসির্টিতে পড়াশোনার পর চট্টগ্রামের একটি স্কুলে শিক্ষকতা করছিলেন ২৮ বছর বয়সী এই যুবক।

গত ৯ জুন চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলাকার আফমি প্লাজার সামনে থেকে নিখোঁজ হন সৌরভ। তার পরিবার অভিযোগ করে, ঢাকার এক ব্যবসায়ীর মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কের জের ধরে তাকে অপহরণ করা হয়েছে।

এর পেছনে সরকারি কোনো বাহিনীর কর্মকর্তাদের হাত রয়েছে বলেও এক ফেইসবুক পোস্টে সন্দেহ প্রকাশ করেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ।

এরপর সোমবার সৌরভের মা সৈয়দা ইয়াসমিন আরজুমান ও বাবা সৈয়দ মো. ইদ্রিস আলমকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান তিনি।

সৈয়দা ইয়াসমিন আরজুমান ওই সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত ৮ জুন দুপুরে সৌরভের কাছে একটি ফোন আসে। তাকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে সব কাগজপত্র তৈরি রাখতে বলা হয়। পরদিন বেলা ৩টায় আবার ফোন করে সৌরভকে চট্টগ্রাম মিমি সুপার মার্কেটের আগোরার সামনে থাকতে বলা হয়।

“সন্ধ্যা ৭টায় চাকরির প্রয়োজনীয় কাগজ, পাসপোর্ট দিতে গিয়ে আমার ছেলে আমাদের কাছ থেকে গিয়ে ফিরে আসে নাই। তার মোবাইল বন্ধ।”

ওই ব্যবসায়ীর মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে এর আগেও কয়েকবার সৌরভকে তুলে নিয়ে গিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ করা হয় সেই সংবাদ সম্মেলনে।

পরদিন মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ কাজ শুরু করেছে, সৌরভকে শিগগিরই পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা করছেন।

এরপর বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় ফেইসবুক লাইভে এসে সৌরভের উদ্ধার হওয়ার খবর জানান মামা সোহেল তাজ।

 

তিনি বলেন, ভোর ৫টা ২৭ মিনিটে সৌরভের মায়ের কাছে একটি ফোন আসে। সেখানে বলা হয়, সৌরভকে একটি গাড়ি থেকে রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে যাওয়া হয়েছে।

সোহেল তাজ এরপর চট্টগ্রামে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ কমিশনারের সঙ্গে যোগোযোগ করেন। উপ কমিশনার যোগাযোগ করেন পুলিশ সুপারের সঙ্গে। পরে পুলিশ সুপার নিজে গিয়ে সৌরভকে পুলিশের নিরাপত্তা হেফাজতে নেন।

বিপদের সময় সঙ্গে থাকার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সোহেল তাজ ফেইসবুক লাইভে বলেন, এরকম ঘটনা আর কারও ক্ষেত্রে ঘটবে না বলেই তিনি আশা করছেন।

ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন সকালে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসে বলেন, তারাকান্দার বটতলা এলাকার জামিল রাইস মিলের সামনে সৌরভকে ফেলে যাওয়া হলে ওই মিলের এক কর্মচারী বিষয়টি সৌরভের পরিবারকে জানায়।

সৌরভ কেমন আছে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, “সে বর্তমানে সুস্থ আছে, এই মুহূর্তে এর বেশি বলতে পারছি না, কারণ তার সাথে কথা বলার মত অবস্থা হয়নি। সে বলেছে যে সে পরে কথা বলবে।”

এই ১১ দিন কোথায় কীভাবে ছিলেন- সে বিষয়ে সৌরভ কিছু বলেছেন কি না, তা জানতে চেয়েছিলেন একজন সাংবাদিক।

উত্তরে শাহ আবিদ হোসেন বলেন, “সে এটা বলতে পারে না। তবে তাকে আটকে রাখা হয়েছিল, এটাই বলেছে শুধু।

“সে আসলে কোনো কিছুই এ মুহূর্তে বলতে পারছে না। তার বাহ্যিকভাবে কোনো সম্যসা আমরা দেখছি না। আমরা খাবার খাইয়ে তাকে পাঠিয়ে দিয়েছি। “

সৌরভকে কারা সেখানে ফেলে রেখে গেছে- এই প্রশ্নে পুলিশ সুপার বলেন, “এটা তদন্তের বিষয়।”