সম্পদ ফিরে পেতে হাই কোর্টে ‘ইয়াবা কারবারি’ ভুট্টো

কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের নির্দেশে জব্দ করা দুটি বাড়ি ও প্রায় ছয় কোটি টাকার সম্পদ ছাড়িয়ে নিতে হাই কোর্টে আবেদন করেছেন কক্সবাজারের আলোচিত ‘ইয়াবা কারবারি’ নুরুল হক ভুট্টো।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 June 2019, 03:28 PM
Updated : 19 June 2019, 03:28 PM

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের করা ‘শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীর’ তালিকায় নাম থাকা টেকনাফের এই ব্যক্তি আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত।

নুরুল হক ভুট্টোর পক্ষে তার আইনজীবী গত রোববার হাই কোর্টে এই আবেদন করেন। সম্পদ জব্দের বিষয়ে কক্সবাজার আদালতের আদেশ স্থগিত চাওয়ার পাশাপাশি সেই আদেশ কেন বাতিল করা হবে না- সেই মর্মে রুল চাওয়া হয় ভুট্টোর আবেদনে।  

বুধবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাই কোর্ট বেঞ্চে এ আবেদনের ওপর আংশিক শুনানি হয়। আগামী ২৫ জুন আবারও বিষয়টি শুনানির জন্য আসবে।

নুরুল হক ভুট্টোর পক্ষে এদিন শুনানি করেন আইনজীবী প্রবীর রঞ্জন হালদার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

আইনজীবী মানিক পরে সাংবাদিকদের বলেন, অর্থপাচার মামলা তদন্তে সিআইডির এখতিয়ার নিয়ে শুনানিতে প্রশ্ন ওঠায় সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মত জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট। সেজন্য শুনানির আগামী তারিখে বিশেষজ্ঞদের আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে করা এক মামলার তদন্তে নুরুল হক ভুট্টো ও তার পরিবারের অবৈধ সম্পদের তথ্য পায় আইন শৃংখলাবাহিনী।

এরপর সিআইডি পুলিশের অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের (ইকোনমিক ক্রাইম স্কোয়াড) সহকারী পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন ২০১৭ সালের ২৯ অগাস্ট টেকনাফ থানায় ভুট্টো, তার বাবা, স্ত্রী, ভাইসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।  

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ খোন্দকার হাসান মো. ফিরোজ গত ৫ মার্চ পুলিশের এক আবেদনে ভুট্টোর পরিবারের সম্পদ জব্দ করার নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশে পুলিশ মামলায় উল্লেখ থাকা সম্পদ জব্দ করে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, টেকনাফ থানায় যেদিন মামলা হয়েছিল, পুলিশ সেদিনই নুরুল হক ভুট্টোকে গ্রেপ্তার করে। গত বছর ২৮ মার্চ তিনি হাই কোর্ট থেকে জামিন পান। দীর্ঘদিন ধরে তিনি নিম্ন আদালতে হাজির না হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা দাখিল করছেন।

এ মামলার অন্যতম আসামি ভুট্টোর ভাই নূর মোহাম্মদ গত ২১ মার্চ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

গত নভেম্বর নারায়ণগঞ্জে মানি লন্ডারিংয়ের এক মামলার তদন্তে গিয়ে মাদক পাচার ও বিক্রিতে জড়িত ছয়টি সিন্ডিকেটের সন্ধান পাওয়ার কতা জানায় পুলিশের অপরধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।  

এসব সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে বলে সে সময় এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম।

তিনি বলেছিলেন, ভুট্টে ও তার বাবাসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করার পর পুলিশ ছয়টি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাদকের কারবার পরিচালনার তথ্য জানতে পারে।

ভুট্টে মাদকের একজন ‘গডফাদার’ হয়ে উঠেছিলেন জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা মোল্যা নজরুল সেদিন বলেছিলেন, “তাদের পুরো পরিবারের মাদকের ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার প্রমাণসহ তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়।”

২০১১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সময়ে ভুট্টেসহ তার পরিবারের সদস্যদের ব্যংক অ্যাকাউন্টে মাদকের কারবারের প্রায় ১০ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে বলে সেই সংবাদ সম্মেলনে তথ্য দেওয়া হয়।

মোল্যা নজরুল সে সময় বলেছিলেন, ভুট্টো ২০০৯ সালে কক্সবাজারে রিকশা চালাতেন। পরে তিনি ‘ইয়াবা পাচারের টাকায়’ বিরাট বাড়ি করেন সেখানে।