ভেজাল খাদ্য থেকে মানুষকে বাঁচাতে হবে: বিচারক

খাবারে ভেজালে দেশের মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে উদ্বেগ জানিয়ে তা ঠেকাতে সরকারি সংস্থাগুলোকে আরও সক্রিয় হতে বলেছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 June 2019, 04:55 PM
Updated : 18 June 2019, 04:55 PM

মঙ্গলবার এক মামলার শুনানিতে উচ্চ আদালতের দ্বৈত বেঞ্চের এক বিচারক বলেছেন, “ভেজালের বিরুদ্ধে কঠোর না হলে হবে না। মানুষকে আগে বাঁচাতে হবে। মানুষ না বাঁচলে কোনো কিছু দিয়েই কিছু হবে না।”

আমসহ অন্যান্য ফলে ক্ষতিকর রসায়নিকের প্রয়োগ ঠেকানো সংক্রান্ত বিএসটিআই’র এক প্রতিবেদনের উপর শুনানিতে একথা বলেন কে এম কামরুল কাদের।

তিনি বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসানের সঙ্গে হাই কোর্টের ওই বেঞ্চে রয়েছেন।

আদালত বিএসটিআইসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে খাদ্যে ভেজাল ও ফলমূলে ক্ষতিকর রাসয়নিক প্রয়োগকারীদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর হতে নির্দেশ দেয়।

একটি রিট আবেদনে সারাদেশের ফলের বাজার-আড়তে আমসহ অন্যান্য ফল পাকানো বা সংরক্ষণে ক্ষতিকর রাসায়নিক প্রয়োগ ঠেকাতে সাত দিনের মধ্যে নজরদারি কমিটি গঠন করতে গত ২০ মে নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্টের এই বেঞ্চ।

পুলিশ প্রধান, বিএসটিআইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, র‌্যাবের মহাপরিচালক, বিএসটিআইর কেমিকেল টেস্টিং উইংয়ের পরিচালকের প্রতি এ নির্দেশনা থাকলেও মঙ্গলবার বিএসটিআই ও র‌্যবের পক্ষ থেকে প্রতিবেদন দেওয়া হয়।

আদালতে বিএসটিআই’র প্রতিবেদন তুলে ধরেন সংস্থাটির আইনজীবী সরকার এম আর হাসান। র‌্যাবের প্রতিবেদন তুলে ধরেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল বাশার। আর রিট আবেদনকারী পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

এ মামলায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ পক্ষভুক্ত হওয়ার আবেদন করলে আদালত তা গ্রহণ করে। আবেদনটি করেন আইনজীবী ফরিদুল ইসলাম।

বিএসটিআইএ’র প্রতিবেদনের উপর শুনানিতে মনজিল মোরসেদকে উদ্দেশ করে বিচারপতি কামরুল কাদের বলেন, “হাই কোর্টের আদেশ থাকা সত্ত্বেও পত্রিকায় একটি রিপোর্ট দেখলাম যে আমে স্প্রে করা হচ্ছে। আপনি পত্রিকার ওই রিপোর্টটির বিষয়টি দেখুন। তথ্যটি নিশ্চিত করুন।”

এরপর বিএসটিআইর আইনজীবী হাসান তাদের প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, আমসহ ২৬৫টি মৌসুমী ফল পরীক্ষা করে কোনোটিতেই ‘ফরমালিনের উপস্থিতি পায়নি’ সংস্থাটি।

তবে প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীর যাত্রাবাড়ীসহ কয়েকটি আড়তে কার্বাইড দিয়ে অপরিপক্ক আম পাকানোর প্রমাণ পাওয়ায় প্রায় ছয়শ মণ আম ধ্বংস করার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের ৩০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

আদালত তখন রিট আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদের কাছে জানতে চান, ফলে ফরমালিনের মাত্রা পরীক্ষার নতুন যন্ত্র কেনা হয়েছে কি না?

এই আইনজীবী তখন বলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয় একটি যন্ত্র কেনার কথা জানিয়েছে। একেকটি যন্ত্র কিনতে ৩-৪ কোটি টাকা লাগে। আরও তিনটি যন্ত্র কেনায় বিশ্ব খাদ্য সংস্থার পক্ষ থেকে সহায়তার আশা করছে মন্ত্রণালয়।

বিচারক কামরুল কাদের তখন বলেন, “মেশিন কেনার ৩-৪ কোটি টাকার জন্য ভিক্ষা করতে হবে?

“ভেজালের বিরুদ্ধে কঠোর না হলে হবে না। মানুষকে আগে বাঁচাতে হবে। মানুষ না বাঁচলে কোনো কিছু দিয়েই কিছু হবে না।”

বিএসটিআইর আইনজীবীকে এ বিচারক বলেন, “একদিনের কর্মসূচির দিয়ে আইওয়াশ করবেন আর এটা আমরা দেখব, তা হবে না। ভেজালের বিরুদ্ধে আপনারা কঠোর না হলে হবে না।

“এইসব ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে হাসপাতালে ক্যন্সারসহ বিভিন্ন রোগীর ভিড় বাড়ছে। আমার-আপনার ছেলেমেয়েদের জন্যও অন্তত ভেজালসহ এসবের বিরুদ্ধে সচেতনতা দরকার।”

তখন বিএসটিআইর আইনজীবী বলেন, ফলসহ শাক সবজিতে রাসায়নিক না মেশাতে কারওয়ান বাজারের আড়তে গিয়ে ব্যবসায়ীদের নিয়ে সচেতনামূলক কর্মসূচি পালন করেছে সংস্থাটি।

তখন বিচারক বলেন, “আপনার কি ধারণা ব্যবাসায়ীরা জানে না ফলমূল বা শাক-সবজিতে কেমিকেল মেশানো খারাপ। প্রত্যেকটা ব্যবসায়ী জানে। জেনেও তারা এসব করে।”

এরপর আদালত বিএসটিআইকে বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে বলে রোববার পরবর্তী আদেশের জন্য রাখে মামলাটি।

মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, বিএসটিআই যে প্রতিবেদন দাখিল করেছে, সেটা অসম্পূর্ণ।

“আদালত বিএসটিআইকে বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে বলে রোববার পরবর্তী আদেশের জন্য রেখেছে। এর মধ্যে তারা যদি সন্তোষজনক প্রতিবেদন দিতে না পারে, তা হলে আমরা বিএসটিআই এবং অন্যান্য বিবাদীদের ব্যর্থতা তুলে ধরে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলব।”

এদিকে বিএসটিআইর আইনজীবী হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ফলে রাসায়নিকের উপস্থিতির বিষয়টি এই সংস্থার কাজের মধ্যে পড়ে না।

“আমসহ ফলে ফরমালিন, কার্বাইড বা রাসায়নিক ব্যবহার নিয়ে কাজ করে থাকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও ভোক্তা সংরক্ষণ অধিকার। বিএসটিআইর কাজ হচ্ছে পণ্যের মান নির্ধারণ এবং নিয়ন্ত্রণ করা। আম বা ফল তো প্রকৃতিগত প্রেডাক্ট, এটার মান তো বিএসটিআই নির্ধারণ করতে পারে না।

“মূলত আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়ন করতেই আমরা একাজগুলোও করছি। আমরা যেহেতু ল্যাবরেটরির কাজগুলো করি, সে জন্য আমরা ফরমালিন বা রাসায়নিক পরীক্ষার কাজটাও করছি। জনস্বার্থ বিবেচনায় আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করতে বিএসটিআই কাজগুলো করছে।”

এর আগে গত ৯ এপ্রিল ক্ষতিকর রাসায়নিকের প্রয়োগ ঠেকাতে রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বড় আম বাগানগুলোতে পুলিশ মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।

পাশাপাশি ফলের বাজার ও আড়তগুলোতে আমসহ অন্যান্য ফলে রাসায়নিকের প্রয়োগ ঠেকাতে নজরদারী কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।