ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবি: নিহতদের জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট

ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্নে নৌকায় ভূমধ্য সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে যে ৩৭ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে, তাদের প্রত্যেকের পরিবারের জন্য কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে একটি রিট আবেদন হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 June 2019, 03:35 PM
Updated : 17 June 2019, 03:35 PM

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ এমদাদুল হক সুমন এই আবেদনে মানবপাচারে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে ‘সরকারের নিষ্ক্রিয়তা’ চ্যালেঞ্জ করার পাশাপাশি ‘প্রতারক’ ট্রাভেল এজেন্সি ও মানবপাচার চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চেয়েছেন।

এছাড়া ‘প্রতারক’ ট্র্যাভেল এজেন্সি ও মানবপাচার চক্রকে আইনের আওতায় আনার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে সিলেট ও নোয়াখালীর পুলিশ সুপারকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে হাই কোর্টের কাছে।

পাশাপাশি ৭ দিনের মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে মানবপাচারের ঘটনার তদন্ত করে হাই কোর্টে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা চেয়েছেন এমদাদুল হক সুমন।

অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্য সাগরে নৌকাডুবির শিকার বাংলাদেশিরা যে মানব পাচার চক্রের খপ্পরে পড়েছিলেন, তার হোতাসহ পাঁচজনের বিষয়ে তথ্য পাওয়ার কথা জানানো হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে এ মোমেন গত ১৫ মে তার কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, নৌকাডুবির ঘটনায় বেঁচে যাওয়া বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা বলে তিউনিসিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশি কর্মকর্তারা এ তথ্য পেয়েছেন।

“জানা গেছে, নোয়াখালীর তিন ভাই এই চক্রের হোতা। মাদারীপুরের আছে আরও দুইজন। তদের বিষয়ে আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি।”

পরে মানব পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে সিলেটের রাজা ম্যানশনের নিউ ইয়াহিয়া ওভারসিজের মালিক গোলাপগঞ্জ উপজেলার পনাইরচক গ্রামের এনামুল হকসহ তিনজনকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। ভূমধ্য সাগরে ডুবে নিহত একজনের ভাই এনামুলসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে সিলেটে একটি মামলাও করেন।

রিট আবেদনে মানবপাচারে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠা ১৭টি ট্র্যাভেল এজেন্সি, ১৫টি পাচার চক্র এবং নোয়াখালীর তিন ভাই চক্রের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না- সেই মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে।

রিটকারী আইনজীবী এমদাদুল হক সুমন সাংবাদিকদের বলেন, “চিহ্নিতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে গত ১৮ মে স্বরাষ্ট্র সচিব ও প্রবাসী কল্যাণ সচিবকে উকিল নোটিস পাঠাই। কিন্তু জবাব না পেয়ে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত খবর ও প্রতিবেদন যুক্ত করে হাই কোর্টে রিট অবেদনটি করেছি।”

আবেদনটি বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চে সোমবারের কার্যতালিকায় ছিল। তবে মামলার নথি না আসায় শুনানি হয়নি। মঙ্গলবার শুনানি হতে পারে বলে জানান এমদাদুল হক সুমন।

২০১২ সালের মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মানব পাচারে জড়িত থাকার সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং অন্তত ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড। আর সংঘবদ্ধভাবে কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে বা লভের জন্য মানব পাচার করলে প্রত্যেকের সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং অন্তত ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।