বাজেট বরাদ্দে ‘হতাশ ও অপমানিত’ সংস্কৃতিকর্মীরা

নতুন অর্থবছরে (২০১৯-২০) সংস্কৃতি খাতে মূল বাজেটের মাত্র ০.১১ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়ায় সংস্কৃতিকর্মীরা ‘হতাশ ও অপমানিত’ হয়েছেন বলে মনে করছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 June 2019, 03:22 PM
Updated : 15 June 2019, 03:22 PM

শনিবার সকালে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যানারে এক সংবাদ সম্মেলনে জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, “ঘোষিত বাজেটে সংস্কৃতি খাতকে ভীষণভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে। গত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট থেকে প্রস্তাবিত বাজেটে ৫০ কোটি টাকা কম বরাদ্দ করা হয়েছে। আমরা এতে হতাশ ও অপমানিতবোধ করছি।”

‘সমৃদ্ধ আগামীর’ প্রত্যাশা সামনে রেখে আওয়ামী লীগের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বছরে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বাজেটে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ৫৭৫ কোটি টাকা, যা মূল বাজেটের ০.১১ শতাংশ।

গত বছর মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট বরাদ্দ ছিল ৫১০ কোটি টাকা, যা সংশোধিত বাজেটে গিয়ে দাঁড়ায় ৬২৫ কোটি টাকায়।

সংস্কৃতিকর্মীরা মূল বাজেটের এক শতাংশ বরাদ্দ দাবি করেছিলেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান গোলাম কুদ্দুছ।

সংবাদ সম্মেলনে নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, “সংস্কৃতির সঙ্গে যোগ না থাকলে কোনো দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন স্থায়ী হয় না। সরকার জঙ্গিবাদ নির্মূলে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার কথা বলছে। নেতাকর্মীরাও বলছেন, কিন্তু বাস্তবে তা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। আমাদের বরাদ্দ কমেছে। আশ্চর্যজনকভাবে আশাহত হয়েছি আমরা।”

সংস্কৃতিকর্মীরা আওয়ামী লীগ সরকারকে ‘সংস্কৃতিবান্ধব’ বললেও বাজেট প্রস্তাবে তা প্রতিফলিত হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের জন্য যে পরিমাণ বরাদ্দ হয়, তার বেশিরভাগ ‘অনানুষ্ঠিক জায়গায় চলে যায়’ মন্তব্য করেন আইটিআই সভাপতি নাসিরউদ্দিন ইউসুফ।

সংস্কৃতি চর্চার বিকাশে এবারের বাজেট বরাদ্দকে তিনিও ‘অপ্রতুল’ বলেন।

বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কামাল বায়েজিদ বলেন, “বাজেট প্রস্তাবনার পরে বাঙালির সাংস্কৃতিক উন্নয়নের জন্য তেমন কোনো কাজ দৃশ্যমান দেখছি না।”

বাস্তবায়নের শ্লথগতিতে কি বাজেট কমে গেল কিনা এমন প্রশ্নে গোলাম কুদ্দুছ বলেন, “সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর দায় রয়েছে। আমরা চাই, গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে যোগ্য ব্যক্তিকেই আসীন করা হোক, যিনি বাজেট বাস্তবায়নের বিষয়েও কঠোর হবেন, একইসঙ্গে তিনি সংস্কৃতিচর্চাও বুঝবেন।”

বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবির পাশাপাশি সংস্কৃতি চর্চা বিকাশে বেশকটি পদক্ষেপ নিতেও সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।

এসবের মধ্যে রয়েছে, সব ধারার শিল্পীদের জন্য স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংস্কৃতিচর্চাকে বার্ষিক পাঠ্যসূচির আওতায় নিয়ে আসা, ঢাকা মহানগরের প্রতি পাঁচ লাখ লোকের জন্য একটি আধুনিক মিলনায়তন নির্মাণ।

এছাড়াও সংস্কৃতিকর্মীদের জন্য মাসিক সম্মানি দেওয়া ও জাতীয়ভিত্তিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে নিজস্ব অফিস, মহড়া ও প্রশিক্ষণের জন্য প্রতীকীমূল্যে সরকারি জমি বরাদ্দের দাবিও উত্থাপিত হয় সংবাদ সম্মেলনে।

বাংলাদেশ পথ নাটক পরিষদের সভাপতি মান্নান হীরা, গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ফকির আলমগীর, আবৃত্তি সমন্ব্য় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহ, পথনাটক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ গিয়াস প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।