সুন্দরবনকে ‘বিপদাপন্ন বিশ্ব ঐতিহ্য’ হিসেবে তালিকাভুক্তির সুপারিশ

রামপালে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও চলমান ব্যাপক শিল্প কর্মকাণ্ডের কারণে মারাত্মক হুমকির মুখে থাকায় সুন্দরবনকে ‘বিপদাপন্ন বিশ্ব ঐতিহ্য’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করেছে প্রকৃতি রক্ষার বৈশ্বিক সংগঠন আইইউসিএন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 June 2019, 07:58 PM
Updated : 4 July 2019, 05:02 PM

ওয়ার্ল্ড হেরিট্যাজ কমিটির কাছে পেশ করা সুপারিশটি সম্প্রতি ইউনেসকো প্রকাশ করেছে বলে অ্যাডভাইজরি সংস্থা আইইউসিএনের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ২০১৬ সালে আইইউসিএন-ইউনেসকোর যৌথ মিশনের পর পর বিশ্বের সবচেয়ে বড় লোনা পানির বন ও রয়েল বেঙ্গল টাইগারের অভয়ারণ্য এই সুন্দরবনের ৬৫ কিলোমিটার দূরে বিশাল রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বন্ধ করে তা সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল ওয়ার্ল্ড হেরিট্যাজ কমিটি।

“তার পরেও বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পর্যালোচনা না করেই এই নির্মাণকাজ অব্যাহত রাখা হয়েছে।”

শুধু তাই নয় বঙ্গোপসাগরে প্রবাহমান পায়রা নদীর তীরে আরও দুটি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কথা তুলে ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে বিবৃতিতে।

এতে বলা হয়, সুন্দরবনের উজানে ১৫০টির বেশি শিল্প প্রকল্প চালু আছে, যেগুলোর সঙ্গে নৌ ও খনন কার্যক্রম পানি ও প্রতিবেশগত বৈচিত্র্যের বাড়তি হুমকি সৃষ্টি করছে।

আগামী ৩০ জুন থেকে ১০ জুলাই আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠেয় ওয়ার্ল্ড হেরিট্যাজ কমিটির ৪৩তম বৈঠকে এই সুপারিশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। 

রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ভারত হেভি ইলেক্ট্রিক্যালকে ২০১৭ সালের এপ্রিলে কাজ শুরুর অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী বিদ্যুৎ কোম্পানি।

দুই ইউনিটের কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের নির্মাণকাজ ৪১ মাস এবং দ্বিতীয় ইউনিটের নির্মাণকাজ ৪৭ মাসের মধ্যে শেষ করার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

কয়লাভিত্তিক ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে সুন্দরবনের পরিবেশ ও প্রতিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দাবি করে পরিবেশবাদীদের একটি অংশ শুরু থেকেই রামপাল প্রকল্পের বিরোধিতা করে আসছে। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সুন্দরবনের যাতে ক্ষতি না হয়, তার সব ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে।

পাল্টাপাল্টি এই অবস্থানের মধ্যে ২০১৬ সালের মার্চে আইইউসিএন-ইউনেসকোর প্রতিনিধি দল প্রকল্প এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেন। তাদের প্রতিবেদনে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনের জন্য ‘মারাত্মক হুমকি’ হিসেবে বর্ণনা করে প্রকল্পটি অন্য স্থানে সরিয়ে নিতে বলা হয়। তা না হলে সুন্দরবনের বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা বাতিল করে একে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়।

পরের বছর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ৪১তম সভায় আলোচনার পর বিশ্ব ঐতিহ্য (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ) সুন্দরবনকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ তালিকায় যুক্ত করার প্রস্তাব বাদ দেওয়া হয়। ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় কোন কোন প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক নিদর্শন থাকবে, কোনটি বাদ যাবে এবং কোন নিদর্শন ঝুঁকিতে রয়েছে- সেসব বিষয়ে ২১ সদস্যের এই কমিটিই সিদ্ধান্ত নেয়।

রামপাল প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা সরকারের থাকলেও ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেন্টার ও আইইউসিএন রিঅ্যাকটিভ মনিটরিং মিশনের ওই প্রতিবেদন আসার পর সরকার দ্বিতীয় পর্যায় বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। সেই সঙ্গে ওই এলাকায় অরিয়ন গ্রুপের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব অনুমোদন না করার কথাও ইউনেসকোকে জানানো হয়।

ইউনেসকোর সভার সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ সরকাররের এসব পদক্ষেপ এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল অয়েল স্পিল অ্যান্ড কেমিকেল কনটিনজেন্সি প্ল্যানের খসড়া প্রণয়ন ও কৌশলগত পরিবেশ মূল্যায়নের (এসইএ) সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হয়।

সেই সঙ্গে ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেন্টার ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচারের (আইইউসিএন) রিঅ্যাকটিভ মনিটরিং মিশনের ২০১৬ সালের সব সুপারিশ পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। ওই প্রতিবেদনেই রামপাল প্রকল্প বাতিল করতে বলেছিল ইউনেসকো।