শোভন-সনজিত ঢাবি সিনেটে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটে ২৮ বছর পর যে পাঁচ ছাত্র প্রতিনিধি স্থান নিতে যাচ্ছেন, তার মধ্যে থাকছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 June 2019, 07:50 PM
Updated : 16 Sept 2019, 11:07 AM

ভিপি নুরুল হক নুর, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী ও সদস্য তিলোত্তমা শিকদারের সঙ্গে অনির্বাচিত এই দুজনকে মনোনীত করেছে ডাকসু।

আগামী ২৬ জুন তারা সিনেট অধিবেশনে যোগ দেবেন। এতদিন ডাকসু না থাকায় সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধিও থাকতেন না।

ডাকসু নেতাদের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ও ডাকসুর সভাপতি অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান ওই পাঁচজন ছাত্র প্রতিনিধি মনোনীত করেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকে তারা ৫ জনের নামে মনোনয়ন দিয়ে সুপারিশ করেছে এবং এটা গ্রহণ করা হয়েছে।”

অনির্বাচিতদের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, “এমন নজির আছে, আর আইনেও বাধা নেই।”

তবে এতে দ্বিমত প্রকাশ করে ভিপি নুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে ওই ধরনের আলোচনাই হয়নি। ওভার ফোনে আমার সাথে জিএস-এজিএসের একটা আলোচনা হয়েছে এবং তারা আমার কাছে তাদের আবদার উপস্থাপন করেছিল। কিন্তু আমি তখনই বলেছিলাম, এটি সম্ভব নয়। আমরা ডাকসুর যে নির্বাচিত ২৫ জন আছি, তাদের মধ্যে থেকে সিলেক্ট করতে বলেছি।”

নিজের অমতের কথা উপাচার্যকেও জানিয়েছিলেন বলে নুর দাবি করেন।

তবে অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, এই বিষয়ে নুর লিখিত কিছু দেয়নি।

“পাঁচজনের নাম জিএস সাইন করে পাঠিয়ে দিয়েছে আমার কাছে। কারও কোনো আপত্তি ছিল না।”

প্রশাসনের সমালোচনা করে নুর বলেন, “ডাকসুর মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণ দেওয়ার যে একটা অপচেষ্টা, সেটি প্রশাসন স্পষ্ট করেছে ছাত্রলীগের এই ধরনের অপকর্মে সহায়তা করে।”

বিষয়টি নিয়ে জিএস রাব্বানী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে পাঁচজনকে মনোনীত করা হয়েছে।

তবে ডাকসুর সদস্য তানভির হাসান সৈকত, যিনি ছাত্রলীগের সমর্থনে নির্বাচিত হয়েছিলেন, তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ডাকসু থেকে যাদেরকেই ছাত্র প্রতিনিধি করা হয়েছে, সেই বিষয়ে আমার অভিব্যাক্তি অন্যভাবে নেই। আমার যেটা আপত্তি সেটা হচ্ছে, যে পদ্ধতি অনুসরণ করে ডাকসুর কর্তৃক ৫ জন প্রতিনিধি হওয়ার কথা, সেটা আসলে হয়নি। সেইক্ষেত্রে আমি মনে করি ভিপি-জিএস দুজনেই প্রশ্নবিদ্ধ আমাদের কাছে।”

তবে এই পাঁচজনকে মনোনীত করার বিষয়টি ওয়াকিবহাল ছিলেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন ডাকসুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আরিফ ইবনে আলী।

তিনি বলেন, “কালকে বিকালে যখন কাগজটা সাইন করা হয়েছে, তখন আমি ছিলাম ডাকসুতে। তবে ফাইনাল করার সময় অন্য সবাইকে জানানো হয়েছে কি না, তা তারাই ভালো বলতে পারবে।”

এছাড়াও আরও দুইজন ডাকসু নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

সাদ্দামের ‘বদান্যতায়’ সিনেটে নূর

ডাকসুর এজিএস এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের ‘বদান্যতায়’ ভিপি নুর সিনেটে সদস্যপদ পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন জিএস গোলাম রাব্বানী।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রাথমিক ভোটাভুটিতে নূর ভোটে হেরে যায়। ভোটে হেরে যাওয়ার পর সে কিন্তু আর নৈতিকভাবে আসতে পারে না। ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ সম্পাদক এবং ডাকসুর এজিএস তিনি জিতেছিলেন। কিন্তু তিনি বদান্যতা দেখিয়ে তার পদটি ছেড়ে দিয়ে ভিপি নূরকে দিয়েছেন।

“এটা একটি নজিরবিহীন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ছাত্রলীগের বদান্যতার কারণেই ভোটে হেরে গিয়েও নূর সিনেটে গেছেন।”

তবে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক রাব্বানীর এবক্তব্যকে ‘বাতুলতা’ আখ্যায়িত করে নুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছাত্রলীগের বদান্যতা সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ প্রত্যাশা করে না। যেখানে ডাকসুর সদস্যদের মধ্যে আলোচনাই হয়নি। সেখানে কীসের ভোট?”

তবে রাব্বানী বলেছেন, এই বিষয়ে একটি ‘অনানুষ্ঠানিক সভা’ করা হয়েছে। যেখানে ভিপিকে আসতে বলা হলেও তিনি আসেননি।

এই বিষয়ে নূর বলেন, “ডাকসুর সিনেট সদস্য নির্বাচনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত কেন ইনফরমাল মিটিংয়ে হবে? তার মানে তারা অনৈতিক কোনো বিষয়কে ঢাকার জন্য এইসব সামান্য অজুহাত সামনে আনে। এরকম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে ইনফরমাল সিদ্ধান্তের কোনো ভ্যালু থাকতে পারে না।”

এদিকে ভিপি পদে নির্বাচন করে হেরে যাওয়া ছাত্রলীগের সভাপতি শোভন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাকে সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি করে পাঠানোয় ডাকসুর প্রত্যেক সদস্যকে, বিশেষ করে জিএসকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

“যেহেতু ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে আমাকে সিনেটে মনোনীত করা হয়েছে, আমি ছাত্রদের অধিকার আদায়ের জন্য, ছাত্রদের সুযোগ-সুবিধার জন্য আমি কাজ করবো এবং তাদের কথা আমি সিনেটে বলব।”