ভবন নির্মাণে অনিয়মে মালিকদের কাউকে ছাড় নয়: পূর্তমন্ত্রী

রাজউকের অনুমোদন না নিয়ে তৈরি করা ভবনের পাশাপাশি অনুমোদন নিয়ে তা না মেনে নির্মিত ভবনের মালিক ’যেই হোক না কেন’, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

ওবায়দুর মাসুম জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 June 2019, 05:45 PM
Updated : 12 June 2019, 05:45 PM

রাজউকের সাম্প্রতিক পরিদর্শন শেষে তৈরি তালিকায় থাকা নিয়মের ব্যতয় ঘটানো ভবনের মালিকদের কাছে আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে নোটিস পাঠানো হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।  

গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,  “এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে রাজউককে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

“কারা কারা নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে আমরা খুঁজে বের করেছি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমরা গত সোমবার অফিসিয়াল অর্ডার দিয়েছি। বলেছি যারা নিয়ম ভেঙেছে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।

“আমরা আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি; সেখানে রাজউকের চেয়ারম্যানও ছিলেন। আমরা আশা করছি, আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যেই সেসব ভবন মালিকদের কাছে নোটিশ পৌঁছে যাবে।”

তিনি বলেন, “আমার কাছে ভবনের মালিক কে সেটা মুখ্য না। আমার কাছে মুখ্য কী অন্যায়টা করা হয়েছে, আইনের কী ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক বিবেচনা বা তার আর্থিক অবস্থা কেমন, সামাজিক প্রভাবশালী কি না- সেটাকে কোনোভাবে বিবেচনা করা হবে না।”

আইনি জটিলতা এড়াতে প্রত্যেক ভবন মালিককে আগে নোটিস দেওয়া হবে বলে জানান ব্যারিস্টার রেজাউল করিম।

তিনি বলেন, “ভবন মালিকদের আগে বলতে হবে আপনার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আছে, আপনার কী ব্যাখ্যা।

“যদি উনাকে সেই ব্যাখ্যা দেওয়ার সুযোগ না দিয়ে অ্যাকশনে যাই তাহলে হাই কোর্টে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্টে হয়ে যাবে। আমরা এমনভাবে ধরতে চাই, যেন হাই কোর্টে গিয়ে স্টে অর্ডার আনতে না পারে।”

ভবন নির্মাণে নিয়ম ভঙ্গ হলে আইন অনুযায়ী শাস্তি হবে উল্লেখ করে এর ধরন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, “এটা অপরাধের ধরনের ওপর নির্ভর করবে।

“এটা বিল্ডিং টু বিল্ডিং ভ্যারি করবে। একটা বিল্ডিং কার্নিশে বেশি করেছে, সেটা ভেঙে ফেলা হবে। কেউ পাঁচ তলা বেশি উঁচু করে ফেলেছে। আমরা তাকে বলবো অবৈধ অংশটুকু রিমুভ করেন। কেউ আছেন জরুরি নির্গমন সিড়ি ব্লক করে রেখেছে, তাকে বলব সেটা ওপেন করেন। আইন অনুযায়ী প্রযোজ্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে রাজউককে আমরা নির্দেশনা দিয়েছি।”

আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সবগুলো ভবন মালিকের কাছে নোটিস দেওয়া সম্ভব হবে কি না সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) আবুল কালাম আজাদ বলেন,  “এ ব্যাপারে কাজ চলছে।

“আমাদের কাছে সবগুলো ভবনের বিষয়ে প্রতিবেদন আছে। এটা দুই সপ্তাহের মধ্যে দেওয়া সম্ভব। আমাদের একটা টেকনিক্যাল কমিটি বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে। যেটার যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, সেটাই আমরা নেব। কোনোটা যদি ভাঙতে হয় আমরা ভাঙব।”

গত ২৯ মার্চ বনানীর এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর রাজধানীর বহুতল ভবনের অনিয়ম খুঁজতে অভিযান শুরু করে রাজউক। রাজউক কর্মকর্তাদের নিয়ে গড়া ২৪টি দল রাজউকের ৮টি অঞ্চলের এক হাজার ৮১৮টি ভবন পরিদর্শন করে।

পরিদর্শন শেষে রাজউক যে প্রতিবেদন দেয় তাতে দেখা যায়, ভবনের মধ্যে এক হাজার ১৩৬টি ভবনের নকশায় রাজউকের অনুমোদন আছে।

পরিদর্শনের সময় ৪৩১টি ভবনের মালিক অনুমোদিত নকশা দেখাতে পারেননি। সরকারি ৪৪টি ভবনের নকশাও রাজউকের কর্মকর্তাদের দেখানো হয়নি।

রাউজক থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, অনুমোদিত ভবনগুলোর মধ্যে ৯৫১টি ভবনের নকশায় বিচ্যুতি ঘটানো হয়েছে।

এরমধ্যে ২৭৭টি ভবন অনুমোদনের বাইরে তলার সংখ্যা বাড়িয়েছে। সেটব্যাক (নকশায় ভবনের চারপাশে যতটুকু জায়গা রাখার কথা)ও অন্যান্য বিষয়ে ব্যত্যয় ঘটিয়েছে ৬৭৪টি ভবন।

রাজউক ছাড়া অন্যান্য সংস্থার অনুমোদিত ভবনের সংখ্যা ২০৭টি। ৯৬টি ভবন নকশা বহির্ভূতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। ঊর্ধ্বমুখী অনুমোদিত উচ্চতার চেয়ে বেশি তলা নির্মাণ করা হয়েছে ৩২টি ভবনের।  সেটব্যাক ও অন্যান্য ব্যত্যয় আছে ৬৪টি ভবনের। নকশা দেখাতে ব্যর্থ ও নকশা ছাড়া নির্মিত ভবনের সংখ্যা ৪৭৮টি।

রাজউকের পরিদর্শনে এসব ভবনের অগ্নিনির্বাপন বা জরুরি নির্গমন ব্যবস্থায়ও ত্রুটি পাওয়া গেছে।

রাজউকের তথ্য বলছে, পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র পাওয়া গেছে ৫৩৯টি ভবনে। আর পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা পাওয়া যায়নি এক হাজার ১৫৫টি ভবনে।

৭৮৬টি ভবনে যথাযথ অগ্নিনির্বাপন সিঁড়ি পেয়েছে রাজউকের পরিদর্শকরা। অগ্নিনির্গমন সিঁড়ি আছে কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয় এমন ভবনের সংখ্যা ৭২১টি। ৫৬৬টি ভবনে অগ্নিনির্বাপন সিঁড়িই নেই।

আবাসিক অনুমোদন নেওয়া ১২৪টি ভবনের বাণিজ্যিক ব্যবহার হচ্ছে বলে পরিদর্শনে গিয়ে দেখতে পায় রাজউক।

আর ৩০৯টি ভবনে রাজউক অনুমোদিত পার্কিংয়ের জায়গা ব্যবহার করা হচ্ছে অন্যান্য কাজে।