২০১৬ সালে আয়োজিত গণশুনানিতে এই অভিযোগগুলোই এসেছিল; সেবার বিটিআরসির আশ্বাস নিয়ে ফিরতে হয়েছিল গ্রাহকদের।
বুধবার রমনার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দ্বিতীয়বারের গণশুনানিতেও গ্রাহকদের আশ্বাসই দিয়েছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তারা।
নানা প্রশ্ন ও অভিযোগ শুনে গণশুনানি কমিটির সভাপতি বিটিআরসি প্রধান জহুরুল হক বলেন, “আমরা অনেক ধরনের অভিযোগের কথা শুনলাম। কিছু অভিযোগের তাৎক্ষণিক সমাধান দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলোর অতিসত্বর জবাব দেওয়া হবে।
“অভিযোগগগুলো নিশ্চয়ই কমিশন সমাধান করবে। কল সেন্টার সপ্তাহে ৫ দিন ছিল। এখন সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা হবে। ফেইসবুকসহ ওয়েবসাইটে অভিযোগ নেওয়া হবে।”
বিটিআরসির রাজস্ব আয় বৃদ্ধির তথ্য দিয়ে জহুরুল বলেন, “২০০১ সালে বিটিআরসির রাজস্ব আয় ছিল তিন কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এখন রাজস্ব আয় ১০ হাজার কোটি টাকা।
“ভালো কাজ করতে গিয়ে কিছু সমস্যা হয়, সমস্যা এক দিনে দূর হয়ে যাবে না, কেয়ামত পর্যন্ত সমস্যা থাকবে। আমরা কতটুকু এগোতে পারলাম সেটি বড় কথা।”
গণশুনানিতে উপস্থিত অপারেটরদের প্রতিনিধিদের উদ্দেশে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, “অপারেটরের যারা আছেন, কী কী অভিযোগ এসেছে, তা শুনেছেন, কী কী সমস্যা?
“আমরা এটুকু শুনেছি যে আমরা আপনাদের বেশি বেশি সমর্থন করি, সত্যিকার অর্থে বিটিআরসি কখনও কাউকে সমর্থন করে না। আইন যেভাবে আছে আমরা সেভাবে আচরণ করি।”
সেবার বিষয়ে বিটিআরসি প্রধান বলেন, “সার্ভিসের ব্যাপারে আমি নিজেও সন্তুষ্ট না। কেউ সন্তুষ্ট না। প্রযুক্তির ব্যাপারে কেউ কখনও সন্তুষ্ট হয় না। আজ এক প্রযুক্তিতে আছেন, কাল অন্য প্রযুক্তি। প্রযুক্তি চলতেই থাকবে, সমস্যা থাকবে সমস্যার সমাধানও হবে।”
আতাউর রহমান নামে একজন বলেন, “যত্রতত্র টাওয়ার, এ থেকে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে কি না, তা বিটিআরসিকে দেখা উচিৎ।”
মোবাইল টাওয়ার থেকে ক্ষতিকারক বিকিরণের বিষয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, “রেডিয়েশনের ব্যাপারে হাই কোর্ট যে নির্দেশনা দিয়েছে, আমরা খুবই তৎপর। আমরা টেস্ট করেছি, রেডিয়েশন নিয়ে ভয়ের কোনো কারণ নেই।”
বিটিআরসি মহাপরিচালক মাহফুজুল করিম মজুমদার বলেন, “রেডিয়েশনের যে ফলাফল পেয়েছি তা আন্তর্জাতিক মানের চেয়ে অনেক নিচে। আমাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। টাওয়ারের চেয়ে মোবাইলে ফোনের রেডিয়েশনের ঝুঁকিটা বেশি, এটাও মাথায় রাখতে হবে।”
বিটিআরসির আরেক মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুজ্জামান বলেন, “টাওয়ারের জন্য ক্ষতি হচ্ছে- এটা অমূলক ধারণা। যদি ক্ষতি হত তাহলে উন্নত দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহার করত না।”
সারা দেশে বিশেষ করে স্কুল-কলেজ ও জনবহুল এলাকায় বিকিরণের মাত্রা পরীক্ষা করে হাই কোর্টকে জানাবেন বলে জানান তিনি।
গণশুনানিতে রাজকুমার সাহার প্রশ্ন ছিল ইন্টারনেটের মূল্য কমানো ও ন্যূনতম মেয়াদ ৮ দিন করা যায় কি না।
উত্তরে বিটিআরসি মহাপরিচালক এ বি এম হুমায়ুন কবির বলেন, “আশা করি অপারেটররা বিষয়টি বিবেচনায় নেবেন।ইন্টারনেট মূল্য নিয়ে পর্যবেক্ষণ চলছে, পর্যবেক্ষণ শেষে মূল্য ও সীমা নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।”
থ্রি জি ও ফোর জি ইন্টারনেটে ধীর গতির সমস্যা নিয়েও প্রশ্ন করেন গ্রাহকরা।
ইমরান হোসেন নামে একজন বলেন, বায়োমেট্রিক সিম ডিঅ্যাকটিভ করে দেওয়ার পর সেই নম্বরে দিয়ে ইমো, ভাইবার ব্যবহার করা যাচ্ছে। এটা দেখা উচিৎ।
টেলিটকের সেবা মান ও এমএনপির সেবা জটিলতার কথা তুলে ধরেন তিনি।
প্রশ্নকারী আব্দুস সালাম বলেন, “প্রতি সেকেন্ড পালসে যখন কথা বলি, কথা বলা শেষে দেখি যে হিসাব মেলে না, এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
এ বিষয়ে সুস্পষ্ট অভিযোগ নিয়ে বিটিআরসিতে জানাতে বলা হয় গণগুনানিতে।
শুনানি শেষে বিটিআরসি মহাপরিচালক হুমায়ুন কবির বলেন, ১৫-২০ দিনের মধ্যে উত্তর তাদের ওয়েসাইটে দেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বিটিআরসির সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক হুমায়ুন কবির। এছাড়া কমিশনার আমিনুল হাসান, মো. রেজাউল কাদের, মো. মহিউদ্দিন আহমেদসহ বিভিন্ন বিভাগের মহাপরিচালকরা প্রশ্নের উত্তর ও মতামত দেন।
অনলাইনে নিবন্ধনের পর বাছাই শেষে ১৬৫ জনকে এই গণশুনানিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল বিটিআরসি। তিন ঘণ্টার এ শুনানিতে ২০টির মতো প্রশ্ন আসে।