দুদক কর্মকর্তাকে ঘুষ দেওয়া এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া সংবাদ মাধ্যমে এ বিষয়ে কথা বলার ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছে, একজন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) সোহেল রানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তার (ডিআইজি মিজান) ব্যক্তিগত কোনো কাজের দায় পুলিশ বাহিনী নেবে না। পুলিশ হিসাবে বাড়তি কোনো সুযোগও তিনি পাবেন না।”
দোষি প্রমাণিত হলে সরকারি চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উচ্চ পদস্থ এক পুলিশ কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মিজানুর রহমান যেহেতু একজন ডিআইজি, সে জন্য তার চেয়ে সিনিয়র অর্থাৎ অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা বিষয়টি তদন্ত করবেন। তিনি তদন্ত করে সুপারিশ সহকারে প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেবেন।”
নানা ঘটনায় আলোচিত ও বিতর্কিত উপমহা পুলিশ পরিদর্শক মিজানের ‘অবৈধ সম্পদ’র অনুসন্ধান চালাচ্ছিলেন দুদকের পরিচালক এনামুল বাছির।
তার বিরুদ্ধে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তুলে তার সপক্ষে কয়েকটি অডিও ক্লিপ সম্প্রতি গণমাধ্যমে হাজির করেন ডিআইজি মিজান।
তার পরিপ্রেক্ষিতে দুদক ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে, ইতোমধ্যে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এনামুল বাছিরকে; যদিও তিনি ঘুষ নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন।
ডিআইজি মিজান বলছেন, নিজেকে রক্ষায় এবং দুদক কর্মকর্তার দুর্নীতি তুলে ধরতে তিনি ঘুষ দেওয়ার এই কাজটি করেছেন।
পুলিশের সাবেক আইজি এ কে এম শহিদুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ডিআইজি মিজান ঘুষ দিয়ে থাকলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে।
“মিজানুর রহমান একজন শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা। আইন তার জানার কথা। যদি তিনি করে থাকেন, কাজটি ঠিক করেননি।”
শাস্তির দাবি টিআইবির
দুদক ও পুলিশ কর্মকর্তার ঘুষ লেনদেনের এই ঘটনার তদন্ত দ্রুত শেষ করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, দুদকের তদন্ত কর্মকর্তার দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই।
দুদক ও পুলিশ কর্তৃপক্ষ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের উপর জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ব্যক্তির দায় প্রতিষ্ঠান নেবে না- দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের এমন বক্তব্য টিআইবিকে হতাশ করেছে।
“আমরা বাংলাদেশে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ নিয়ে রীতিমতো শঙ্কিত বোধ করছি।”
অন্যদিকে ‘জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ’ থেকে অব্যাহতি পেতে ডিআইজি মিজান ঘুষ দেওয়ার কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করার পরও তার স্বপদে বহাল থাকায় বিস্ময় প্রকাশ করেছে টিআইবি।