বিতর্কিত ডিআইজি মিজান রোববার একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগের অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেন।
টেলিভিশনে প্রচারিত ওই ‘বিশেষ সংবাদে’ ঘুষ লেনদেনের সপক্ষে ডিআইজি মিজান ও এনামুল বাছিরের মোবাইল কথোপকথনের কয়েকটি অডিও ক্লিপও শোনানো হয়।
এই অভিযোগ ওঠার পর রোববারই দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখতকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য।
কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রশাসন) সাঈদ মাহবুব খান এবং মহাপরিচালক (লিগ্যাল) মফিজুল ইসলাম ভূইয়া।
প্রনব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে (সোমবারের মধ্যে) এই বিষয়ে কমিশনকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে তদন্ত কমিটিকে।”
দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির দাবি করেছেন, তিনি কোনো ঘুষ নেননি।
গত বছরের ৩ মে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ডিআইজি মিজানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। প্রথমে অনুসন্ধান কর্মকর্তা ছিলেন দুদকের উপ-পরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী; পরে এই দায়িত্ব পান এনামুল।
এনামুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি যখন ওই অনুসন্ধানের দায়িত্ব পাই, এর পরপরই গত বছরের অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে ডিআইজি মিজান নিজে থেকে আমার দপ্তরে আসেন। এরপর তার সাথে আমার কিছুক্ষণ সামাজিক কথাবার্তা হয়।
“আমার ছেলেকে স্কুলে আনা-নেওয়ার কথাও প্রসঙ্গক্রমে বলা হয়। কিন্তু কোনো ধরনের ঘুষ লেনদেন হয়নি। এই বিষয়ে কোনো কথাবার্তাও তার সাথে হয়নি।”
ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে দুদক কর্মকর্তা বলেন, “আমার দপ্তরে তিনি অসৎ উদ্দেশ্যে এসেছিলেন। যে কারণে আমার সাথে তার যেসব সামাজিক কথাবার্তা হয়েছে, সেগুলো তিনি রেকর্ড করেছেন। এসব কথার সাথে আধুনিক প্রযুক্ত ব্যবহার করে, কিছু কথা টেম্পারিং করে এই অডিওটি তৈরি করেছেন।”
ডিআইজি মিজানের স্ত্রীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার বিষয়ে এনামুল বলেন, “তার স্ত্রীর বিরুদ্ধেও অবৈধ সম্পদ অর্জনের আরেকটি অভিযোগ অনুসন্ধান চলছে। এই অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তার প্রতিষ্ঠানে যাওয়া হয়েছিল। একজন অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে যেখানে আমি যেতে পারি, সেজন্যই সেখানে গিয়েছি।”
এনামুলের পাল্টা অভিযোগ নিয়ে ডিআইজি মিজানের বক্তব্য জানতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে এটিএন নিউজের ওই সংবাদে ডিআইজি মিজান দাবি করেন, তিনি ঘুষ দিতে ‘বাধ্য হয়েছেন’।
“আমি তো বাধ্য হয়েছি। আমি যদি কোনো অন্যায় করে থাকি, তাহলে আমার বিচার হোক। একজন দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তার যদি বিচার না হয়, দুর্নীতি দমন কমিশন যদি দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে থাকে, তাহলে এই দেশে কখনই দুর্নীতি দমন হবে না।”
ডিআইজি মিজান আরও বলেন, “এনামুল বাছির আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। তার অডিও আমি আপনাকে দিয়েছি এবং কত টাকার নোট এনেছি, কীভাবে দিয়েছি, ওইটা স্পষ্ট তার স্টেটমেন্ট রেকর্ডে আছে।”
গত ১৫ জানুয়ারি ও ১ ফেব্রুয়ারি রমনা পার্কে এই ঘুষ লেনদেন হয় বলে ওই সংবাদে উল্লেখ করা হয়।
গত ৩০ মে পুলিশ প্লাজায় ডিআইজি মিজানের স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্নার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যান দুদক পরিচালক এনামুল বাছির।