বাংলাদেশে মানবাধিকার এবং বাক ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে পশ্চিমাদের উদ্বেগের মধ্যে সম্প্রতি জার্মানিতে গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামে অংশ নেওয়া ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম ডয়চে ভেলে বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ‘চাপে থাকার’ কথা বলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “লিখছি না এমন অনেক ইস্যু রয়েছে৷ অনেক ইস্যুতে লেখা উচিত, যেমন ধরেন, গত নির্বাচন, এছাড়াও আরও ছোট নির্বাচনগুলো নিয়ে লেখা উচিত, যা লিখছি না, বলা উচিত, ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও লিখতে পারছি না।”
সম্প্রতি তিন দেশ সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে প্রধানমন্ত্রী রোববার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এলে নাম উল্লেখ না করে ওই সম্পাদকের এই বক্তব্য সম্পর্কে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এক সাংবাদিক।
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “দেখুন যিনি সম্পাদক এই কথাটা বলছেন যদি এমন অবস্থা হত উনি কি এই কথাটুকু বলার সাহস পেতেন যে, উনি লিখতে পারেন না? যদি তার উপর সত্যিই চাপ থাকত এই কথাটা বলার সাহস পেতেন কি না। কেউ তো চাপ দেয়নি।
“তবে হ্যাঁ, যখন বলছেন যে কোন একজন সম্পাদক। তারা খুব… ঠিক গণতান্ত্রিক একটা ব্যবস্থা থাকলে তাদের ভালো লাগে না। তাদের ভালো লাগে যদি কোনো অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের সরকার হোক, ইমার্জেন্সি সরকার হোক বা মিলিটারি সরকার হোক। এমন হলে তারা ফরমায়েশি লেখা লিখতে পারেন।”
শেখ হাসিনা বলেন, “তার এই কথা থেকে আমার মনে হয়, যে ভদ্রলোকের কথা আপনি বলছেন আমি বুঝতে পারছি তিনি কে। একবার টেলিভিশনের কোনো এক টকশো তে তিনি বলেছিলেন, মিথ্যা নিউজ দেওয়া হয়েছিল বলে তাকে ধরেছিলেন কেউ, তিনি বলেছিলেন, আমি কী করব, আমাকে ডিজিএফআই যা বলেছে আমি সেটাই ছাপিয়ে দিয়েছি, আমি সেটাই লিখে দিয়েছি। মনে পড়ে, সবার খেয়াল আছে।
“আমরা তো ডিজিএফআই দিয়ে কোনো তথ্য দেওয়াচ্ছি না। কাজেই উনি লিখতে পারছেন না। ফরমায়েশি লেখা না হলে উনি লিখতে পারছেন না, এটাই তো দাঁড়াচ্ছে।”
ওই সম্পাদককে ‘ইচ্ছেমতো’ লিখতে আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “উনি লেখুক না…উনার যা খুশি উনি লিখুক। উনি লিখে যাচ্ছেন। যত খুশি লিখবে।”
আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর মতে, ‘এসব’ পত্রিকার সহযোগিতা তারা কোনোদিনই পাননি।
“বাংলাদেশে আসার পর কয়টা পত্রিকা ছিল আমাদের পক্ষে? তারা সব সময় আমার বিরুদ্ধেই লিখেছে। আমি ওটাতে অভ্যস্ত। এসবে কিছু যায় আসে না।
“আমি সব সময় মনে করি, আমার বিবেক যদি ঠিক থাকে আমি সঠিক আছি, সঠিক বলছি, সঠিক করছি, সেটা হচ্ছে আমার কাছে বড়। কে কী লিখলো সেটাতে…।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আমি আমার দেশকে ভালোবাসি, দেশের মানুষকে ভালোবাসি। আমি যা কাজ করি দেশের জনগণের কল্যাণে কাজ করি। এই বিশ্বাসটা যদি আমার থাকে তাহলে কে কোনটা ভালো করল, কোনটা মন্দ করলে-এটা নিয়ে মাথাব্যথার কিছু নেই। এখানে বসে আমি যেটা দেখতে পাব সেটাতো সবাই দেখতে পাবে না। তাহলে আমার জায়গায় তারা বসত আর তাদের জায়গায় আমি বসতাম।”
আওয়ামী লীগ সরকার আমলে বাংলাদেশ কি এগোচ্ছে না- সে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সবাই বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে প্রশংসা করে। এটা সকলের ভালো লাগে না। ভালো লাগে না তাদের, যারা স্বাধীন বাংলাদেশ চায় না।
“যাদের ওই স্বাধীনতাবিরোধীদের পদলেহন করার অভ্যাস ছিল, তাদের ভালো লাগবে না। বাংলাদেশ এখন সকলের কাছে দৃষ্টান্ত।”