রোববার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তরে আন্তর্জাতিক আর্কাইভস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান মহাপরিচালক দিলীপ কুমার সাহা।
তিনি বলেন, জাতীয় আর্কাইভসের রেকর্ডগুলো ডিজিটাইজেশনের কাজ শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৩ লাখ ডেটার ডিজিটাইজেশন সম্পন্ন হয়েছে।
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং আর্কাইভাল গুণসম্পন্ন সরকারি ও বেসরকারি নথিপত্রের গবেষণা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের পরে ১৯৭২ সালে যাত্রা শুরু করে জাতীয় আর্কাইভস।
প্রায় ৪৭ বছরের পুরনো এই সংস্থাটির ডিজিটালে রূপান্তর করা প্রসঙ্গে দিলীপ কুমার সাহা বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে জাতীয় আর্কাইভ ডিজিটাইজেশন শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করেছি। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
“এটি অনুমোদিত হলে জাতীয় আর্কাইভস পূর্ণাঙ্গভাবে কাগজ থেকে ডিজিটালে রূপান্তর হবে। অনলাইনে সেবা প্রদানের মাধ্যমে আমরা টিসিভি (টাইম, কস্ট, ভিজিট) বাস্তবায়ন করতে চাই।”
এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে ‘দ্রুত ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি জনবল নিয়োগের ব্যাপারেও উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়’ বলে জানান দিলীপ।
ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকা ‘আর্কাইভাল ভ্যালু’র ঐতিহাসিক নথিগুলো সংগ্রহে রাখতে দেশব্যাপী ‘বিশেষ প্রচারণা’ শুরু করা হবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে অধিদপ্তর।
আন্তর্জাতিক আর্কাইভস দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচির অংশ হিসেবে আর্কাইভস একইসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের উক্তি ও কথন নিয়ে একটি ‘ওরাল মিউজিয়াম’ স্থাপনের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সংস্থাটি।
সংবাদ সম্মেলনে দিলীপ কুমার সাহা বলেন, “দেশের অনেক জেলা, উপজেলা, গ্রামে ব্যক্তিগত সংগ্রহে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমৃদ্ধ দলিল আছে। সবই যে আর্কাইভস সংগ্রহ করতে পারবে এমন নয়। জমি বেচাকেনার দলিল, স্কুলের সার্টিফিকেট, বিয়ের কাবিননামা এসব কিছুর অনেক সময় আর্কাইভাল ভ্যালু থাকে।
“এগুলো ব্যক্তিগত পর্যায়ে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা যেতে পারে। এতে নতুন প্রজন্ম এ বাংলার ইতিহাস সম্পর্কে জানবে।“
মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ব ও মুক্তিযুদ্ধ-উত্তর বাংলাদেশের নানা তথ্যউপাত্ত এখনও ছড়িয়ে আছে দেশের আনাচেকানাচে। এসব নথি সংগ্রহের পাশাপাশি এবার ইতিহাসভিত্তিক অডিও ও ভিজ্যুয়াল রেকর্ড সংগ্রহ করবে জাতীয় আর্কাইভস।
“আপাতত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকজন অধ্যাপক এর খসড়া তৈরি করছেন।”
১৯৮৩ সালে জাতীয় আর্কাইভস অধ্যাদেশ অনুযায়ী এই অধিদপ্তর সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ২৫ বছরের উর্ধ্বের পুরাতন আর্কাইভাল ভ্যালুসম্পন্ন দলিল, দস্তাবেজ, প্রকাশনা, ছবি, পোস্টার সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও পরিচর্যা করছে।
১৭৬০ সাল থেকে প্রায় ৫ কোটি পৃষ্ঠা রেকর্ড জাতীয় আর্কাইভসে সংরক্ষিত রয়েছে। ১৩ হাজার বাংলা লোক গানের সংগ্রহও রয়েছে আর্কাইভসে।
ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অন আর্কাইভসের উদ্যোগে ৩ থেকে ৯ জুন বিশ্বের নানা দেশে ১২তম আন্তর্জাতিক আর্কাইভস দিবস পালন করা হয়েছে। তবে ঈদুল ফিতরের ছুটি থাকায় বাংলাদেশে এ দিবসটি এক সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ কর্মর্সূচির অংশ হিসেবে আর্কাইভস অধিদপ্তর গবেষণা ও পাঠক সেবাসহ সব সেবা কার্যক্রম সহজ করার লক্ষ্যে ৯ থেকে ১৭ জুন আয়োজন করেছে সেবা সপ্তাহ।
# ১০ থেকে ১২ জুন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে রেকর্ড সংগ্রহের বিষয়ে প্রচার প্রচারণামূলক উপস্থাপনা ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে।
# ১৩ জুন চট্টগ্রাম, বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার ও পরে দিনাজপুর, নোয়াখালীর জেলা প্রশাসকের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করবে অধিদপ্তর।
# ১৬ জুন ঢাকায় ‘ডিজাইনিং দ্য আর্কাইভস ইন দ্য টোয়েন্টিওয়ান’স সেঞ্চুরি’ শিরোনামে সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।
# ১৭ জুন সিলেটের বিভাগীয় উন্নয়ন সমন্বয় সভায় আর্কাইভসের কার্যক্রম নিয়ে উপস্থাপনা ও মতবিনিময় সভার মধ্য দিয়ে শেষ হবে সপ্তাহব্যাপী আয়োজন।
এবার মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যসূচিতে আর্কাইভস বিষয়কে অন্তর্ভুক্তির জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে বলে আর্কাইভসের মহাপরিচালক জানান।
সম্প্রতি সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের জন্য ১০ দিনের একটি প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করেছে আর্কাইভস অধিদপ্তর।
অর্থ সংকুলান হলে বেসরকারি কর্মকর্তাদের জন্যও ৬ সপ্তাহব্যাপী কোর্স চালু করা হবে, যেখানে প্রতি শুক্র ও শনিবার ক্লাস হবে।
দিলীপ কুমার সাহা বলেন, “আর্কাইভস নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিই আমাদের প্রধান কাজ হবে। সারা দেশের মানুষ সচেতন হলে আমরা আরো অনেক নতুন নথি, উপাত্ত পাব।”
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ আর্কাইভস অ্যান্ড রেকর্ডস ম্যানেজমেন্ট সোসাইটির সভাপতি ও অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক শরীফ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।