ওসি মোয়াজ্জেমকে কি পালানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছে: টিআইবি

ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন এখনও গ্রেপ্তার এড়িয়ে থাকায় নুসরাত জাহান রাফি হত্যামামলা তদন্তে পুলিশের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে টিআইবি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 June 2019, 12:00 PM
Updated : 9 June 2019, 12:01 PM

রোববার এক বিবৃতিতে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি বলেছে, সোনাগাজী থানার সাবেক ওসির ‘পালিয়ে’ যাওয়ার খবর আইনের শাসনের জন্য ‘অশনি সঙ্কেত’।

ওসি মোয়াজ্জেমকে পুলিশ গ্রেপ্তার না করে পালানোর সুযোগ করে দিয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি পুরো ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তও দাবি করেছে টিআইবি।

ফেনীর সোনাগাজীর তরুণী নুসরাত দুই মাস আগে তার মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তোলার পর তাকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল।

যৌন হয়রানির মামলার পর নুসরাতের জবানবন্দি গ্রহণের সময়  তার ভিডিও ধারণ করে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে।

এই ঘটনায় ডিজিটাল আইনে করা এক মামলায় গত ২৭ মে মোয়াজ্জেমকে গেপ্তারে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও এখনও তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

সোনাগাজী থেকে রংপুরে বদলি হওয়া ওসি মোয়াজ্জেম সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার পর পালিয়ে গেছেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।

সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান এই খবরে উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতিতে বলেন, “গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে আমরা জেনেছি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় সাবেক ওসির বিরুদ্ধে গত ২৭ মে পরোয়ানা জারির পর তা ফেনীর পুলিশ সুপার কার্যালয় হয়ে রংপুর রেঞ্জে পৌঁছাতে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় লেগে যায়। এখন আবার রংপুর রেঞ্জ বলছে, কাজটি বিধি মোতাবেক হয়নি।

“এই সুযোগে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন ‘পালিয়ে গেলেন’ বলা হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাধারণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে যেখানে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়া আটক করাই স্বাভাবিক, সেখানে বহুল আলোচিত একটি মামলার ক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসনের দায়িত্ব পালনে এ ধরনের দৃশ্যমান ব্যর্থতার ফলে যৌক্তিকভাবেই নুসরাত হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিতে পুলিশের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।”

নুসরাত হত্যামামলাটি তদন্ত করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনের মামলাটিও তদন্ত করছে তারা।

ওসি মোয়াজ্জেম এখনও গ্রেপ্তার না হওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল রোববারই বলেছেন, “যদি কেউ পলাতক হয়ে যায়, একটু সময় তো লাগবে তাকে খুঁজতে।”

নুসরাত হত্যামামলায় শুরু থেকে তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে টিআইবি বলেছে, “নুসরাত হত্যাকাণ্ডকে ‘আত্মহত্যা বলে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা’ এবং ‘হত্যাকারীদের সুরক্ষা প্রদানে যোগসাজশের’ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার পরও অভিযোগপত্রে ওসি মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি দেওয়ার কোনো যুক্তিগ্রাহ্য কারণ রয়েছে কি না, বা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য হওয়ায় তাকে দায়মুক্তি দেওয়া হচ্ছে কি না, আমরা সেই প্রশ্ন তুলেছিলাম।

“এখন তার পলিয়ে যাওয়ার খবরে আমাদের সেই আশঙ্কা আরো জোরালো হল। ঘটনাপ্রবাহ থেকে তাকে কার্যত পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে কি না, এমন প্রশ্ন উঠা খুবই স্বাভাবিক।”

এই ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, “দেশে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা গভীরতম উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এমন অবস্থায় পুলিশ বাহিনীর কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা না গেলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ভূলুণ্ঠিত হবে।

“তাই ওসি মোয়াজ্জেমকে দ্রুত আটক করে বিচারের মুখোমুখি করার পাশাপাশি নুসরাতের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্তের বিকল্প নেই।”