পাসপোর্ট ছাড়া পাইলটের কাতারে যাওয়া তদন্তে কমিটি

বিদেশ সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একজন পাইলটের পাসপোর্ট ছাড়াই কাতারে যাওয়ার ঘটনা তদন্তে দুটি কমিটি গঠন করেছে সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 June 2019, 12:55 PM
Updated : 7 June 2019, 02:27 PM

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোসাম্মাৎ নাসিমা বেগমকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। তাদের তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে শুক্রবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সংবদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগও চার সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছে।

সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নিরাপত্তা ও বহিরাগমন) মোহাম্মদ আজহারুল হককে সভাপতি এবং যুগ্ম সচিব হেলাল মাহমুদ শরীফকে এই কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে। অপর দুই সদস্য হলেন- বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সেলিনা বানু এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম। তদন্তের প্রয়োজনে এক বা একাধিক ব্যক্তিকে যুক্ত করতে পারবে কমিটি।

পাইলট ফজল মাহমুদ পাসপোর্ট ছাড়া কীভাবে বিমানবন্দর ত্যাগ করলেন তা উদঘাটন, এই ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের দায় দায়িত্ব নির্ধারণ এবং এর পুনরাবৃত্তি রোধে করণীয় বিষয়ে সুপারিশ করবে সুরক্ষা সেবা বিভাগের গঠিত তদন্ত কমিটি।

আর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফজল মাহমুদ চৌধুরী নামে ওই পাইলট পাসপোর্টবিহীন ভ্রমণের কারণে কাতারে ‘আটক’ হয়েছিলেন। তার পাসপোর্টবিহীন ভ্রমণের কারণ অনুসন্ধান করবে তদন্ত কমিটি।

“এই ঘটনার জন্য ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টিও তদন্ত করে দায় দায়িত্ব নিরূপন করা হবে। বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কার্যপদ্ধতির ত্রুটি নিরূপন করা হবে।”

তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. হেলাল মাহমুদ শরীফ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব জাহাঙ্গীর আলম।

মন্ত্রিপরিষদের বিজ্ঞপ্তির অনুযায়ী, ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টার পাসপোর্ট ছাড়াই ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পার হয়েছিলেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ালাইন্সের বিজি-১২৫ ফ্লাইটে ঢাকা থেকে দোহার হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাসপোর্টবিহীন অবস্থায় পৌঁছার পর বিপাকে পড়েন তিনি।

পরে অপর একটি ফ্লাইটে তার পাসপোর্ট পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রীকে আনতেও বিকল্প পাইলট পাঠানো হয়েছে। 

‘আটক বা গ্রেপ্তার হননি’ পাইলট

পাসপোর্ট না থাকায় দোহা বিমানবন্দরে পাইলট ফজল মাহমুদকে ‘আটক করা হয়েছে’ বলে কিছু সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশের প্রতিবাদ জানিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ।

শুক্রবার বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “কিছু সংবাদমাধ্যমে দোহা ইমিগ্রেশন পুলিশ কর্তৃক বিমান পাইলট আটক বা গ্রেফতার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যা মোটেও সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে সেখানে কোনো বিমান পাইলট আটক, গ্রেফতার বা আটকে দেবার কোনো ঘটনা ঘটেনি।”

বিষয়টি জনমনে ‘বিভ্রান্তি’ দূর করতে পুরো ঘটনার একটি বিবরণ দিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ।

তাদের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “৫ জুন ২০১৯ তারিখে বিমান এর ঢাকা-চট্টগ্রাম-দোহা রুটে বিজি১২৫ ফ্লাইটের অপারেটিং ক্যাপ্টেন হিসেবে ফ্লাইট পরিচালনা করেন ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ। দোহায় অবতরণ করার পর তিনি লক্ষ করেন যে, তার পাসপোর্টটি তার সাথে নেই। এমতাবস্থায় তিনি ইমিগ্রেশনে না যেয়ে দোহা এয়ারপোর্টে বিমান স্টেশন ম্যানেজার ও ঢাকা অফিসের সাথে যোগাযোগ করেন এবং দোহা এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন চেক পয়েন্টের আগে ট্রানজিট হোটেল অরিক্স-এ চলে যান।

“পরবর্তীতে পরদিন অর্থাৎ ৬ জুন ২০১৯ সন্ধ্যায় তার পাসপোর্ট দোহায় প্রেরণ করা হয় এবং তিনি স্বাভাবিক নিয়মেই কোনো জটিলতা ছাড়াই ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে দোহা নগরীতে বিমান ক্রুগণের নির্ধারিত হোটেল ক্রাউন প্লাজায় চলে যান। বর্তমানে তিনি উক্ত হোটেলে অবস্থান করছেন।”

পাইলট ফজল মাহমুদ বিমান কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে আগামী ১০ জুন ভোর রাতে দোহা থেকে বিজি ১২৬ ফ্লাইট অপারেট করে ঢাকা আসবেন বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।